যাকাতের মাসায়েলঃ যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত সমুহ

যাকাতের মাসায়েল

যাকাত ইসলামের পাঁচটি রুকনের একটি। যাকাত কাদের উপর ফরজ হয়? যাকাতের মাসায়েল কি? কাদের যাকাতের টাকা দেয়া যাবে? নিসাব কি? কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হবে? কত দিন টাকা মজুত থাকলে যাকাত ফরজ হয়? ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আমাদের আজকের এই আলোচনা। চলুন দেখে নেই যাকাতের কিছু মাসায়েল-  

কোন কোন অর্থ/সম্পদ কি পরিমাণ থাকলে যাকাত ফরয হয়ঃ

১. যদি কারও নিকট শুধু সােনা থাকে- রুপা, টাকা-পয়সা ও ব্যবসায়িক পণ্য কিছুই না থাকে, তাহলে সাড়ে সাত তােলা বা তার বেশী (সােনা) থাকলে বৎসরান্তে তার উপর যাকাত ফরয হয়।

 ২. যদি কারও নিকট শুধু রুপা থাকে- সােনা, টাকা-পয়সা ও ব্যবসায়িক পণ্য কিছুই না থাকে, তাহলে সাড়ে বায়ান্ন তােলা (রুপা) থাকলে বৎসরান্তে তার উপর যাকাত ফরয হয়।


৩. যদি কারও নিকট কিছু সােনা থাকে এবং তার সাথে কিছু রুপা বা কিছু টাকা-পয়সা বা কিছু ব্যবসায়িক পণ্য থাকে তাহলে এ ক্ষেত্রে সােনার সাড়ে সাত তােলা বা রুপার সাড়ে বায়ান্ন তােলা দেখা হবে না বরং সােনা, রুপা এবং টাকা-পয়সা ও ব্যবসায়িক পণ্য যা কিছু আছে সবটা মিলে যদি সাড়ে সাত তােলা সােনা বা সাড়ে বায়ান্ন তােলা রুপার যে কোন একটার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায়, তাহলে (বৎসরান্ত) তার উপর যাকাত ফরয হবে।

৪. যদি কারও নিকট শুধু টাকা-পয়সা থাকে-সােনা, রুপা ও ব্যবসায়িক পণ্য কিছু না থাকে, তাহলে সাড়ে সাত তােলা সােনা বা সাড়ে বায়ান্ন তােলা রুপার যে কোন একটার মূল্যের সমপরিমাণ (টাকা-পয়সা} থাকলে বৎসরাত্তে তার উপর যাকাত ফরয হবে।

৫. কারও নিকট সােনা, রুপা ও টাকা-পয়সা কিছুই নেই শুধু ব্যবসায়িক পণ্য রয়েছে, তাহলে উপরােক্ত পরিমাণ সােনা বা রুপার যে কোন একটার মল্যের সমপরিমাণ থাকলে বৎসরান্তে তার উপর যাকাত ফরয হবে। কারও নিকট সােনা, রুপা নেই শুধু টাকা-পয়সা ও ব্যবসায়িক পণ্য রয়েছে, তাহলে টাকা-পয়সা ও ব্যবসায়িক পণ্যের মূল্য মিলিয়ে যদি উক্ত পরিমাণ সােনা বা রুপার যে কোন একটার মূল্যের সমপরিমাণ হয় তাহলে বৎসরান্তে তার উপর যাকাত ফরয হবে।

যাকাত কাদের উপর ফরজ হয়? যাকাতের মাসায়েল কি? কাদের যাকাতের টাকা দেয়া যাবে? নিসাব কি?
যাকাতের মাসায়েল 

যাকাত ফরয হওয়ার শর্তসমূহঃ

১. আকেল (বুদ্ধিমান) বালেগ, ছাহেবে নেছাব মুসলমানের উপর বৎসরে একবার যাকাত আদায় করা ফরয। যে পরিমাণ অর্থের উপর যাকাত ফরয হয় তাকে বলে 'নেছাব' আর এ পরিমাণ অর্থের মালিককে বলা হয় 'ছাহেবে নেছাব'। গরীব, পাগল ও না-বালেগের সম্পত্তিতে যাকাত ফরয হয় না।

২. নেছাব পরিমাণ অর্থের উপর পূর্ণ এক বৎসর অতিবাহিত হলে যাকাত ফরয হয়। এক বৎসর অতিবাহিত হওয়ার পূর্বে যাকাত ফরয হয় না। যাকাতের ক্ষেত্রে ইংরেজী বা বাংলা নয় বরং চান্দ্র বৎসরের হিসাব করতে হবে। 

৩. অর্থ সম্পদের প্রত্যেকটা অংশের উপর পূর্ণ এক বৎসর অতিবাহিত হওয়া শর্ত নয় বরং শুধু নেছাব পরিমাণের উপর বৎসর অতিবাহিত হওয়া শর্ত। কাজেই বৎসরের শুরুতে যে পরিমাণ ছিল (নেছাবের চেয়ে কম না হওয়া চাই) বৎসরের শেষে যদি তার চেয়ে পরিমাণ বেশী দেখা দেয় তাহলে ঐ বেশী পরিমাণের উপরও যাকাত ফরয হবে। এখানে দেখা গেল ঐ বেশী পরিমাণ যেটা বৎসরের মাঝে যােগ হয়েছে, তার উপর পূর্ণ এক বৎসর অতিবাহিত না হওয়া সত্ত্বেও তার উপর যাকাত আসছে।

৪. কেউ যদি বৎসরের শুরুতে মালেকে নেছাব হয় এবং বৎসরের শেষেও মালেকে নেছাব থাকে, মাঝখানে কিছু কম হয়ে যায় (নেছাবের ন্যুনতম পরিমাণের চেয়ে কমে গেলেও) তাহলে বৎসরের শেষে তার নিকট যে পরিমাণ থাকবে তার উপর যাকাত ফরয হবে। তবে মাঝখানে যদি এমন হয়ে যায় যে, মােটেই অর্থ সম্পদ না থাকে, তাহলে পূর্বের হিসাব বাদ যাবে। পুনরায় যখন নেছাবের মালিক হবে তখন থেকে নতুন হিসাব ধরা হবে এবং তখন থেকেই বৎসরের শুরু ধরা হবে।

বিস্তারিত জানতে আহকামে জিন্দেগী বইটি পড়ার অনুরোধ করছি। বইটিতে আপনারা সব রকামের মাসায়েল পেয়ে যাবেন। বইটি লিখেছেন মাওলানা মোহাম্মদ হেমায়েত উদ্দিন।       

أحدث أقدم