আব্বাসি যুগের সমাজব্যবস্থা

আব্বাসি যুগে নাগরিক-জীবন নিয়ে অনুসন্ধান চালাতে গেলে আমাদের সামনে দুই ধরনের চিত্র এসে যায়। এক ধরনের চিত্র উপস্থাপন করে ইতিহাসগ্রন্থগুলাে। অন্য ধরনের চিত্র এনে দেয় কল্পকাহিনি-নির্ভর গ্রন্থ, যেমন কিতাবুল আগানি, আরব্য-রজনী। এই দুই ধরনের উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য এতটাই পরস্পর বিরোধী যে এর কোনো একটিকে সঠিক বলা ছাড়া নেই। 

Abbasi Chilaphate


ওরিয়েন্টালিস্ট ও তাদের দ্বারা প্রভাবিত গবেষকরা সাধারনত শেষোক্ত দুটো গ্রন্থ থেকেই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার চেষ্টা করেন। ফলে তারা আমাদের সামনে এমন এক চিত্র তুলে ধরেন, যাতে দেখা যায়, সে যুগের মুসলিম সমাজ ব্যাবস্থা ছিল অসভ্যতা ও অশ্লীলতায় পূর্ণ। মদ্যপান ও ব্যভিচার ছিল তাদের নিয়মিত কর্ম। এ ধরনের চিত্রায়ণ মেনে নেওয়া অসম্ভব। 

কারণ আমাদের মনে রাখতে হবে আব্বাসি যুগের সূচনার সময়টি ছিল খাইরুল কুরুনের অন্তর্ভুক্ত। সে সময় তাবেয়ি এবং তাবে তাবেয়িরা বেঁচে ছিলেন। মুসলিমবিশ্বের শহরগুলােতে বেঁচে ছিলেন স্বনামধন্য আলেমরা, যারা নিজেদের নিয়ােজিত করেছিলেন আমর বিল মারুফ ও নাহি আনিল মুনকারের কাজে। ফলে তাদের সামনে একটি সমাজব্যবস্থায় এভাবে পচন ধরবে আর তারা নিশ্চুপ থাকবেন কিংবা তাদের লিখিত গ্রন্থাবলিতে এ সম্পর্কে কোনাে আলােচনা থাকবে না, তা মেনে নেওয়া যায় না। 

abbasi chilaphate

এটা ঠিক যে, শেষেরদিকে খলিফা ও জনসাধারণ নানা ধরনের পাপাচারে অভ্যস্ত হয়ে উঠছিল, যা তাদের পতন তরান্বিত করেছিল। বস্তুনিষ্ঠ ঐতিহাসিকরা নির্মোহভাবে তাদের গ্রন্থে সেসব তথ্য উল্লেখ করেছেনও। কিন্তু সামগ্রিকভাবে পুরাে আব্বাসি যুগকে অপরাধ ও অশ্লীলতা দিয়ে চিত্রায়ণের সুযােগ নেই।
কিতাবুল আগানি ও আরব্য-রজনী বই দুটি সম্পর্কেও কিন্তু কথা বলা প্রয়ােজন। কিতাবুল আগানি গ্রন্থের লেখক আবুল ফারাজ ইম্ফাহানি। ৩৫৬ হিজরিতে তিনি ইনতেকাল করেন। তিনি ছিলেন একজন শিয়া। তার লিখিত গ্রন্থে তিনি নানা ধরনের বর্ণনা একত্র করেছেন। তার । এসব বর্ণনার বেশিরভাগই মদপান ও গানের আসর সম্পর্কে। সাথে রয়েছে নারীদের অশ্লীলতা সংক্রান্ত নানা বর্ণনা। তার এসব লেখার বেশিরভাগই  বানােয়াট, যে ব্যাপারে নির্ভরযােগ্য ঐতিহাসিকগণ সতর্ক করেছেন। ইবনুল জাওজি রহিমাহুল্লাহ তার সম্পর্কে লিখেছেন, 

তিনি তার গ্রন্থে পাপাচার উসকে দিয়েছেন। মদপানকে হালকা করে দেখিয়েছেন। যে-কেউ গভীরভাবে আল আগানি পর্যবেক্ষণ করলে সেখানে শুধু ঘৃণ্য আর খারাপ কাজের বর্ণনাই পাবেন।
আবু মুহাম্মদ হাসান বিন হাসান নুবাখতির সূত্রে খতিব বাগদাদি তাকে মিথ্যুক বলেছেন।
ইমাম জাহাবি লিখেছেন, তিনি আজব আজব সব ঘটনা বর্ণনা করেছেন। 

এবার আসা যাক আরব্য রজনী প্রসঙ্গে। এটা মূলত একটি লােককাহিনির সংকলন, যা সংগ্রহ করা হয়েছে। আরব, পারস্য, দক্ষিণ এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকা থেকে। এই গল্পগুলোের লেখকের পরিচয় অজ্ঞাত, এমনকি গল্পগুলাে কোন সময়ের প্রতিনিধিত্ব করে তা নিয়েও গবেষকদের মধ্যে রয়েছে নানা বিতর্ক। কিছু গল্পে হারুনুর রশিদ ও উজির জাফর বারমাকির বিবরণ থাকলেও হ্যারল্ড ল্যাম্ব মনে করতেন এই গল্পগুলাে মামলুক শাসনামলে বাইবার্সের সময়কালকে কেন্দ্র করে লেখা।

তিন লিখেছেন,

আরব্য-রজনী হিসেবে পরিচিত কাহিনির মূল ব্যাপকভাবে অবশ্যহ ভারতীয় এবং পার্সিয়ান। বাগদাদের খলিফা হারুনুর রশিদের জীবনের কিছু ঘটনা এবং নাম গল্পকথকরা যােগ করেছেন। কিন্তু গবেষকগণ। নিশ্চিত করেছেন যে গল্পের সংগ্রহ কায়রাে-কেন্দ্রিক এবং হারুনের বলে কথিত কর্মকাণ্ডের বিপুল অংশ আসলে বাইবার্সের। যেমন একটা বিষয়। কর্কশ রসিকতা ও ভাঁড়ামাে মিশরীয়, আরবীয় নয়। খ্রিষ্টান নাইট এবং জুসেডারদের নামগুলাে বাইবার্সের সময়কার।

আল্লাহ তাআলা  আমাদের পূর্বপুরুষদের সম্পর্কে সঠিক জানার তৌফিক দান করুন। ইসলাম আমাদের সত্য উন্মোচন করে আর মুর্খতা বয়ে আনে অন্ধকার।

Previous Post Next Post