হাইরেদ্দীন বারবারোস (লাল দাড়িওয়ালা)

হাইরেদ্দীন বারবারোস বা বারবারোস হাইরেদ্দীন পাশা ছিলেন তুর্কিবংশীয় উসমানী সাম্রাজ্যের নৌ অ্যাডমিরাল অফ দ্যা ফ্লিট । বারবারোস। ল্যাটিন ইংলিশ শব্দ। অর্থ লাল দাড়িওয়ালা। এই ঘন লাল দাড়িওয়ালা লোকটাই ছিলেন ইউরোপীয়দের আতঙ্ক। এর জন্যই ভূমধ্যসাগরে তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য হুমকির মুখে পড়ে গিয়েছিল। তখন ছিল ১৬ শতক। বিশ্বশক্তির পট পরিবর্তনের এক গুরুত্বপূর্ণ টার্নিং পয়েন্ট। গুরুগম্ভীর উসমানি সুলতান ইয়াভুজ সেলিমের শাসনকাল। উসমানিদের ক্ষমতা রাজ্য থেকে খিলাফতে রূপান্তরিত হওয়ার সময়।


লাল দাড়িওয়ালা। হাইরেদ্দীন বারবারোসা। বারবারোসা অভিযান
প্রতীকী চিত্রঃ Old Naval Ship 

আটলান্টিক মহাসাগর ও ভূমধ্যসাগরে যেখানে একচ্ছত্র আধিপত্যবিস্তার করত ইউরোপিয়ানরা, সেখানে হঠাৎ করেই ধূমকেতুর মতো আবির্ভাব ঘটল তুর্কি-উসমানিদের! লাল দাড়িওয়ালা একটা অসীম সাহসী লোকের বদৌলতে। দিনের পর দিন তার দৌরাত্ম্য বেড়ে যেতে লাগল সাগরসীমানায়। ক্রুশের পতাকাবাহী জাহাজগুলো নাকানিচোবানি খেতে লাগল তার চাঁদতারা খচিত লাল পতাকাকাবাহী জাহাজগুলোর সামনে!


বলছিলাম ১৫১০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে, গ্রিকের লেসবসে জন্ম নেওয়া ইয়েনিসারি বাবা ও আন্দালুসি বংশোদ্ভূত মায়ের চতুর্থতম কনিষ্ঠ সন্তান খিজির বিন ইয়াকুব এর কথা। উসমানি ইতিহাসে যিনি খাইরুদ্দিন পাশা এবং ইউরোপি ইতিহাসে বারবারোস বলে পরিচিত। তবে সাধারণত ইতিহাসে তিনি হাইরেদ্দীন বারবারোস পাশা নামেই বেশি পরিচিত।


ছোটবেলা থেকেই তিনি ও তার ভাই উরুচ সাগরে চষে বেড়াতেন। লেখাপড়ার প্রতি মোটেও কোনো আগ্রহ ছিল না তাদের। সাগরে বাণিজ্য করতেন। তাদের আরও দুজন ভাই ছিলেন। ইসহাক ও ইলিয়াস। ইসহাক লেখাপড়া জানা একজন বিদ্বান মানুষ ছিলেন।


বারবারোস ও উরুচের দাপুটে শক্তি দেখে উসমানি সুলতান ইয়াভুজ সেলিম তাদেরকে উসমানি নৌবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করেন। পরে সুলেমান কানুনি বারবারোসকে উসমানি নৌবাহিনীর প্রধান ক্যাপ্টেন হিসেবে পদোন্নতি দেন।


যাইহোক, তখন ছিল স্পেন থেকে মুসলমানদের বিতাড়নের দুঃখজনক সেই সময়কাল। স্পেন থেকে পলায়নপর মজলুম মুসলমানকদের দুভাই মিলে উদ্ধার করতেন। তাদের জাহাজে করে উত্তর আফ্রিকায় এনে ঠাঁই দিতেন। এতে করে স্প্যানিশ ও পর্তুগিজ খ্রিষ্টানদের জন্য তারা মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠলেন।


লাল দাড়িওয়ালা। হাইরেদ্দীন বারবারোসা। বারবারোসা অভিযান
প্রতীকী চিত্রঃ BNS Turag

পাশাপাশি ভূমধ্যসাগরে ত্রাস সৃষ্টিকারী খ্রিষ্টান জলদস্যুদের জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়ালেন। আবার রোডস দ্বীপ ও মাল্টা দ্বীপে ঘাঁটি গাড়া নাইটস টেম্পলারদদের জন্যও তারা বেজায় মুশকিল হয়ে আবির্ভূত হলেন। উল্লিখিত সকলের সাথেই তাদের সংঘর্ষ বাঁধত। বিজয় সবসময় দুভাইয়ের পদচুম্বন করত।


আটলান্টিক মহাসাগর ও ভূমধ্যসাগরে দাপড়িয়ে বেড়ানো এই দুভাইয়ের দৌরাত্ম্য টনম নড়িয়ে দিলো ক্রুসেডারদের। পশ্চিমের পোপেরা নড়েচড়ে বসলেন। তাদের বিরুদ্ধে ক্রুসেডের ডাক দিলেন। একের পর এক। কিন্তু সবই বিফল। বারবারোসই দুরন্ত, দুর্দান্ত ও দুর্বার। নাইটস টেম্পলারদের হাতে গ্রেফতার হয়ে পরে পলায়ন করেছিলেন উরুচ। কিন্তু পরবর্তীকালে ক্রুসেডারদের সাথে প্রাণপণ লড়ে শাহাদতবরণ করেছিলেন। পক্ষান্তরে বারবারোস আজীবন সমুদ্রজগতে লড়ে গেছেন ক্রুসেডারদের সাথে। উঁচু করেছেন উসমানিদের চাঁদতারা খচিত লাল নিশান। তাদের এহেন কর্মকাণ্ডে ইউরোপীয়রা দিশেহারা হয়ে তাদেরকে জলদস্যু বলতে লাগল! আজও পশ্চিমারা তাদেরকে জলদস্যু বলেই আখ্যায়িত করার চেষ্টা করে।



কিন্তু আফসোস, পশ্চিমাদের মানসিক গোলামনফর হিসেবে কর্মরত মুসলমানদের অনেকেই বারবারোস ও উরুচকে জলদস্যু হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করে! গতকাল এরকমই একটা লেখা নজরে পড়ল রোরবাংলা ফেইসবুক পেইজে। তারা বারবারোস ও উরুচকে জলুদস্যু সাব্যস্ত করে লেখা পোস্ট করেছে। খুঁজে দেখি, তথ্যসূত্র হিসেবে কোনো মুসলিম লেখকের লিখিত বই বা সাইটের উদ্বৃতি নেই; সবগুলো বিভিন্ন ইংরেজি আর্টিকেলের সূত্র।


আফসোস, এরা তাদের বেতনভুক্ত এডমিনদের মধ্যে আরবি জানা এডমিনদের নিয়োগ দেয় না কেন? তাহলে তো অন্ততপক্ষে আরবিভাষায় লেখা ইসলামি ইতিহাসের আলোকে সত্য ও বাস্তব ইতিহাসটা ফুটে উঠত। নাকি ইসলামি ইতিহাসের ব্যাপারে তাদেরও এলার্জি আছে?


অতি সংক্ষেপে বারবারোসাকে নিয়ে কিছু কথা বললাম। এলোমেলো ও অগোছালোভাবে। সময়ের অভাবে। বারবারোসকে জানতে হলে নিম্নের কিতাবগুলো পড়া অবশ্য কর্তব্য। এগুলো ছাড়া কীভাবে চলে, হে মুসলিম ভাই?



Reference: 
*তারিখুদ দাওলাতিল উসমানিয়্যাহ : ড. আলি সাল্লাবি।
*মুজাক্কিরাতু খাইরুদ্দিন বারবারোস : ড. মুহাম্মাদ দাররাজ।
*খাইরুদ্দিন বারবারোস : বাসসাম আসিলি।
tags:  লাল দাড়িওয়ালা কে? হাইরেদ্দীন বারবারোস। বারবারোস হাইরেদ্দীন পাশা বা খাইরেদ্দী বারবারোস পাশা। তুর্কি নৌ কমান্ডার বারবারোস হাইরেদ্দীন পাশা।    
বিঃদ্রঃ পোস্টটি ফেইসবুক থেকে নেওয়া। লেখককে শনাক্ত করা যায়নি। যদি তিনি আপনিই হন তবে আপনার অনুমতি কামনা করছি। আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। ফেইসবুক গ্রুপে।

Post a Comment

Previous Post Next Post