ইসলামি পরিভাষা কি?

ইসলামের বিধিনিষেধ সমুুহ বুুুঝতে হলে আমাদের কিছু পরিভাষা সম্পর্কে জানা খুবই জরুরি। তাই নিচে কিছু পরিভাষা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। 
  • ফরযঃ যা অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত এবং যা আল্লাহ্র পক্ষ থেকে সুনিশ্চিতরূপে করার জন্য আদেশ দেয়া হয়েছে তাকে ফরয বলে। যেমন কালিমা, নামায, রােযা, হজ্জ, যাকাত, জেহাদ, ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা, সত্য কথা বলা ইত্যাদি। ফরয দুই প্রকার-
  • ফরযে আইন- যে কাজ প্রত্যেক বালেগ বুদ্ধিমান নর-নারীর উপর সমানভাবে ফরয। যেমন পাঁচ ওয়াক্তের নামায, আবশ্যক পরিমাণ ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা ইত্যাদি। 
  • ফরযে কেফায়া- যে কাজ কতক লােকে পালন করলে সকলেই গােনাহ থেকে বেঁচে যায়; কিন্তু কেউ পালন না করলে সকলেই ফরয তরকের জন্য পাপী হয়ে যায়। যেমন জানাযার নামায পড়া, মৃত ব্যক্তির কাফন-দাফন করা, আবশ্যক পরিমাণ অপেক্ষা অতিরিক্ত ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা ইত্যাদি। 
  • ওয়াজিবঃ ওয়াজিব কাজ ফরযের ন্যায় অবশ্য করণীয়। তবে পার্থক্য এতটুকু যে, কেউ ফরয অস্বীকার করলে কাফের হয়ে যায় কিন্তু ওয়াজিব অস্বীকার করলে কাফের হয় না, তবে ফাসেক হয়ে যায়। যেমন বেতরের নামায পড়া, কুরবানী করা, ফেতরা দেয়া ইত্যাদি।
ইসলামি পরিভাষা কি?
image: book

  • সুন্নাতঃ যে কাজ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ করেছেন তাকে সুন্নাত বলে । সুন্নাত দুই প্রকার (এক)সুন্নাতে মুয়াক্কাদা'- যে কাজ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীগণ সব সময় করেছেন, বিনা ওজরে কখনও ছাড়েননি। যেমন আযান, ইকামত, খতনা, বিবাহ ইত্যাদি। 
  • সুন্নাতে মুয়াক্কাদাঃ ওয়াজিবেরই মত গুরুত্বপূর্ণ, বিনা ওজরে তা ছাড়লে বা ছাড়ার অভ্যাস করলে পাপী হতে হয়। তবে ওজর বশতঃ কখনও ছুটে গেলে কাযা করতে হয় না। 
  • সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদাঃ- যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীগণ করেছেন তবে ওযর ছাড়াও কোন কোন সময় তরক করেছেন। সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদা'কে 'সুন্নাতে যায়েদা"-ও বলে। এটা করলে ছওয়াব আছে কিন্তু না করলে আযাব হবে না।
  • মুস্তাহছানঃ যাকে কুরআন ও সুন্নাহের আলােকে পূর্বর্তী পরবর্তী উলামায়ে কেরাম ভাল মনে করেছেন। 
  • মােস্তাহাবঃ যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীগণ করেছেন কিন্তু সব সময় করেননি, কোন কোন সময় করেছেন। এটা করলে ছওয়াব আছে না করলে পাপ নেই। মােস্তাহাবকে 'নফল এবং মানদূব' ও বলা হয়। 
  • হালালঃ শরীআতের দৃষ্টিতে যেসব বস্তু ব্যবহার করা বৈধ তাকে হালাল বলা হয়। জায়েয ও হালাল সমার্থবােধক। 
  • হারামঃ হারাম হল ফরযের বিপরীত অর্থাৎ, যা নিষিদ্ধ হওয়াটা অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত। হারামকে হালাল মনে করলে কাফের হয়ে যায় আর বিনা ওজরে হারাম কাজ করলে কাফের হয় না তবে ফাসেক হয়ে যায়। হারাম কাজ বর্জন করা ফরয। 'না জায়েয' ও হারাম' সমার্থবােধক। 
  • মাকরূহ তাহরীমীঃ ওয়াজিবের বিপরীত, যা কেউ অস্বীকার করলে কাফের হয় না তবে ফাসেক হয়ে যায়। বিনা ওজরে মাকরূহ তাহরীমী করাও ফাসেকী। 
  • মাকরূহ তানযীহীঃ যা না করলে ছওয়াব আছে করলে আযাব নেই। 
  • মোবাহঃ যা মানুষের ইচ্ছাধীন। আল্লাহ মানুষকে এমন কাজ করা বা না করার এখতিয়ার দিয়েছেন। যেমন মাছ মাংস খাওয়া, পানাহার করা, কৃষি কর্ম করা, ব্যবসা-বাণিজ্য করা, দেশ ভ্রমণ করা ইত্যাদি। তবে মােবাহ কাজের সংগে যদি ভাল নিয়ত সংযুক্ত হয়, তাহলে তা ছওয়াবের কাজ হয়ে যায়। যেমন পানাহার করল এই নিয়তে যে, এতে শরীর-স্বাস্থ্য ভাল থাকবে, তাহলে ইবাদত, ইসলামের খেদমত, জেহাদ ইত্যাদি ভাল ভাবে করা যাবে ইত্যাদি। পক্ষান্তরে মােবাহ কাজের সঙ্গে খারাপ নিয়ত যুক্ত হলে তা পাপের হয়ে যায়; যেমন কোথাও ভ্রমণে গেল বেগানা-নারী দর্শনের উদ্দেশ্যে বা নাজায়েয কিছু দেখা ও করার জন্য তাহলে গােনাহ হবে।
أحدث أقدم