এক নজরে আব্বাসি শাসনামলে মুসলমানদের শিক্ষাব্যবস্থা।

আব্বাসি খলিফারা ছিলেন জ্ঞানানুরাগী। তাদের এই মনােভাব সঞ্চারিত হয়েছিল সাধারণ জনগণের মধ্যেও। ফলে শিক্ষার ব্যাপক প্রসার হয়েছিল। একইসাথে আমির ও সেনাপতিরাও নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। শিক্ষা ছিল সহজলভ্য। একালের মতাে তখন শিক্ষার জন্য অর্থ বাধ্যতামূলক ছিল না। আলেমরা বিনাবেতনে শিক্ষা দিতেন। পরে যখন বেতন নির্ধারিত হয়, তাও রাষ্ট্র বহন করত। ফলে শিক্ষার্থীরা থাকত নির্ভার। এমনকি মাদরাসার পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের মাসিক ভাতা দেওয়া হতাে। ফলে দরিদ্র পরিবার থেকেও বহু প্রতিভাবান আলেম বের হয়ে আসত। কবি আবুল আতাহিয়া পেশায় ছিলেন কুমার। আবু তামাম মিশরের আমর ইবনুল আস মসজিদে কাঁধে মশক নিয়ে পানি বহন বয়ে বেড়াতেন। কাজি আবু ইউসুফ শৈশবে একটি দোকানে কর্মচারী হিসাবে কাজ করেন। সেকালে নির্দিষ্ট কোনাে পাঠ্যসূচি অনুসরণ করা হতাে না, এ কথা খুব জোর দিয়ে বলা যায়।

প্রতীকী চিত্রঃ আব্বাসী আমলে শিক্ষাব্যবস্থা 


এজন্য দেখা যায় একেক প্রতিষ্ঠানে একেক বিষয়ে পাঠদান করা হতাে। বইপত্র বা পাঠ্যক্রম নির্দিষ্ট ছিল না। মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরেও দেখা গেছে আলেমরা মসজিদে দরস দিতেন। বিভিন্ন বিষয়ে হালাকাহ করতেন। এসব আসরে উন্মুক্ত প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হতো। শ্রোতারা যেকোনো প্রশ্ন করতেন। আলেমরা উত্তর দিতেন। শিক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে শিক্ষকরা ছিলেন স্বাধীন। রাষ্ট্র তাদের ব্যাপারে নাক গলাত না। তবে কারাে বিরুদ্ধে নাস্তিকতার অভিযােগ উঠলে তা খতিয়ে দেখা হতাে। এখন যেমন বিভিন্ন স্তরের পরীক্ষা নেওয়া হয় তখন ব্যাপকভাবে এর প্রচলন ছিল না। তবে হিফজ করলে বিষয়টি নানাভাবে উদযাপন করা হতো। নানা শিক্ষকের কাছে।

পড়াশােনা শেষে কারাে আত্মবিশ্বাস জন্ম নিলে তিনি মসজিদের এক কোণে বসে যেতেন। দরস দিতেন। আলেমদের সাথে নানা বিষয়ে আলােচনা ও তর্কবিতর্ক করতেন। ফলে সহজেই তার যোগ্যতা সম্পর্কে অন্যরা জেনে যেত। ফলে তখন চাইলেই কোনাে মূর্খ নিজেকে জ্ঞানী সাজাতে পারত না।

সবাই তার কারসাজি ধরে ফেলত। আলেমরা যখন দেখতেন কোনা ছাত্র যােগ্য হয়ে গেছে তখন তার ব্যাপারে নিজের আস্থার কথা জানিয়ে দিতেন সবাইকে। কখনাে কখনাে তইলাসান পরিয়ে দিতেন। এটা ছিল একালের সমাপনি গাউনের মতােই। শিক্ষার উদ্দেশ্য কী ছিল, তার নিশ্চিত কোনোে বক্তব্য দাঁড় করানাে না গেলেও এটা সহজেই বলা যায় যে বেশিরভাগের উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। এর সাথে পার্থিব কোনা স্বার্থ জড়িত ছিল না। আলেমদের সুবিশাল কর্মযজ্ঞ ও তাদের জীবনের দিকে তাকালেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

দেখা যায় অনেকে আলেম গবেষক ইলমের খাতিরে বিবাহও করেননি। একইসাথে যাপন করেছেন যুহদের জীবন।

Previous Post Next Post