![]() |
মুহাম্মদ বিন কাসিম |
হযরত মুহম্মদ (সা.) এর জীবদ্দশায় সমগ্র আরব দেশ ইসলামের দীপ্ত আলোকে আলোকিত হয়ে উঠে। তাঁর জীবদ্দশায় আরবের দূরবর্তী অঞ্চল গুলোয় ইসলামের প্রচার ও প্রসার না হলেও তার মৃত্যুর পর তার উত্তরাধীকারীগণ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ইসলামের বিজয় পতাকা বহন করে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিতে থাকে। খ্রিস্ট্রীয় অষ্টম শতকের শুরুতেই ইসলাম ইউরোপের সমগ্র স্পেন, উত্তর আফ্রিকা পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে। ধীরে ধীরে ইসলাম পৃথিবী ব্যাপী প্রসার লাভ করতে থাকে।
খলিফা হযরত ওমর রাঃ এর খেলাফতের সময় মুসলমানগন প্রথম ভারত বিজয়ের চেষ্টা করে, দূরাভিযানের বিপদ ও নানা অসুবিধার জন্য তখন অভিযান সাফল্যের মুখ দেখেনি। খিলাফাতের পর উমাইয়া শাসনামলে উমাইয়া বংশের শাসক খলিফা আল ওয়ালিদের ক্ষমতা লাভের পর আরবের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সংযোজন হয়। আরব সাম্রাজ্যের পূর্বাংশের শাসনকর্তা হাজ্জাজ বিন ইউসুফ তার স্বীয় ভ্রাতুষ্পুত্র ও জামাতা মুহম্মদ বিন কাসিম কে ভারতের সিন্ধু ও মুলতান প্রেরণ করে ভারত উপমহাদেশ জয়ের দ্বার উম্মোচন করেন।
উমাবী খেলাফতের মিত্র সিংহলের রাজা একদা ইতিহাসের অন্যতম আলোচিত প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফের নিকট প্রচুর উপটোকনসহ একদন আরব মহিলা ও শিশুকে নৌজাহাজে করে পাঠিয়েছিলেন। সিংহলের বহু মুসলমান হজ্জব্রত পালনের জন্য এ সফরে যাত্রী হয়েছিল। কাফেলাটি আম্মান সাগরে প্রবেশ করলে বিরূপ আবহাওয়ার কারনে সিন্ধু রাজা দাহিরের কর্তৃত্বাধীন বর্তমান করাচীর অন্তর্গত দেবল বন্দরে ঢুকে পড়ে।
এসময় রাজা দাহিরের দস্যু বাহিনী তাদের ধরে নিয়ে যায়। বাচানোর আকুতি করে ভাগ্যক্রমে বেচে যাওয়া এক নারীর নিজ রক্ত দিয়ে একটি চিঠি হাজ্জাজ বিন ইউসুফের কাছে পৌঁছলে তিনি ভীষণ ক্ষুব্ধ হন। তিনি অনতিবিলম্বে রাজা দাহিরকে সকল মুসলিম বন্দীদের মুক্তি দিতে বলে দূত প্রেরণ করেন। দাক্ভিক রাজা তা প্রত্যাখ্যান করে দূতকে হত্যা করে।
ফলে ক্ষুব্ধ হয়ে হাজ্জাজ সিন্ধু আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। এ অভিযানে তার ভাতিজা তরুন মুসলিম বীর মুহাম্মাদ বিন কাসিমকে প্রেরন করেন।
৯৩ হিজরি এর ৭ই রমযান মুহাম্মাদ বিন কাসিম সিন্ধু আক্রমণ করে প্রথমেই দেবল তথা করাচি জয় করলেন। একে একে সিহরওয়ান ও নিরুন তথা বর্তমান হায়দ্রাবাদেও কালেমার পতাকা উড্ডিন হল। অতঃপর রাওয়ার নামক স্থানে স্বয়ং সিন্ধুরাজ দাহির বিশাল অশ্ববাহিনী ও হস্তিবাহিনী নিয়ে মুসলমানদের মুকাবিলা করল।
কিন্তু মুসলমানদের বীরত্বের সামনে রাজা দাহিরের বাহিনী ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেল। নিহত হল রাজা দাহির। ক্রমেই পুরো সিন্ধু বিজিত হল মুসলমানদের হাতে। সকল অন্যায় অনাচারকে মুছে দিয়ে সত্য ও ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা করলেন এ তরুন বীর মুহাম্মাদ বিন কাসেম।
কিন্তু খলীফা সুলাইমান বিন আব্দুল মালিকের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বলি হয়ে অকালেই ঝরে পড়তে হল তাকে। নির্মম নির্যাতন সয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন মহাপ্রতিভাবান এ বীর। সত্যি এ হৃদয়বিদারক ঘটনা কখনোই ভুলবার নয়।