ইসলামে ইমামরা ছিলেন আমাদের আলোকবর্তিকা। আকাশের তারকা যেমন রাতের আধারে পথিককে দিকনির্দেশনা দিয়ে সঠিক পথে পরিচালিত করে, তেমনি ইমামরাও আমাদের ধর্মপ্রাণ সাধারন মুসলমানদের সঠিক পথে চলানোর জন্য নিজেরদের সারাটি জীবন দ্বীনের কাজে ব্যয় করেছেন । এবার আমরা আলােচনা করবাে ইলম ও জ্ঞানের আকাশে সমুজ্জ্বল নক্ষত্র ইমাম আবু ইউসুফ কাযী (ইয়াকৃব ইবনে ইবরাহীম আল-আনসারী, আল- কুফী সুম্মাল বাগদাদী)-রহ.-কে নিয়ে। তিনি ছিলেন মুজতাহিদ ও মুহাদ্দিস। হযরত ইমাম আবু হানীফা রহ.-এর স্বর্ণশিষ্যদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। ইমাম ও হাফেযে হাদীস। বাদশাহ মাহদী, হাদী এবং হারুনুর রশীদের কালের সম্মানিত বিচারপতি। কাযীউল কুযাত বা প্রধান বিপারপতি উপাধিতে বিভূষিত প্রথম মনীষী। কাযীউ কুযাতিদ দুনিয়া-জগতের প্রধান বিচারপতি বলা হতাে। ইমাম আবু হানীফা রহ.-এর মাযহাব প্রতিষ্ঠিত তার লেখা মূলনীতির ওপর। হাদীস, তাফসীর, মাগাযী এবং আরব ইতিহাস ছিলাে তাঁর নখদৰ্পণে। ১১৩ হিজরিতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৮২ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন। বলা হয় তিনি মৃত্যু বিছানায় শুয়ে পড়লে, জীবনের অন্তিম মুহূর্তে উপনীত তখনও তিনি মগ্ন ছিলেন তাঁর কয়েকজন সাক্ষাৎপ্রার্থী ও শুশ্রষাকারীর সাথে ফিকহী মাসআলা আলোচনায়। জীবনের অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি মগ্ন ছিলেন ইলম চর্চা এবং মানুষের উপকারের ফিকিরে।
![]() |
সময়ের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে ইমামদের কঠোর সাধনা |
তাঁর শিষ্য বিচারপতি ইবরাহীম ইবনুল জাররাহ আল-কুফী সুম্মাল মিসরী বলেন, আমার গুরু আবু ইউসুফ রহ, অসুস্থ হয়ে পড়লে আমি তাঁকে দেখতে যাই। রােগের তীব্রতায় তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন। জ্ঞান ফিরে এলে তিনি আমাকে দেখে বললেন ইবরাহীম! এই মাসআলার ব্যাপারে তােমার কী মতামত? আমি বললাম, হযরত, এই অবস্থায়?! তিনি বললেন, তাতে কোনাে অসুবিধা নেই। আমরা দারস চালিয়ে যাই, আমাদের উত্তরসূরী যারা জাহান্নাম থেকে বাঁচতে চায় তাদের জন্য যেন তা সহজ হয়।
পরে তিনি বললেন- হজে কিভাবে রামী (শয়তানের উদ্দেশ্যে পাথর নিক্ষেপ) করা উত্তম; পায়ে হেঁটে না কি আরােহণ করে? আমি বললাম- আরােহী অবস্থায়। তিনি বললেন, তুমি ঠিক বলােনি। আমি বললাম- তাহলে কি পায়ে হেঁটে? তিনি বললেন, তুমি ঠিক বলোনি। আমি বললাম- তাহলে আপনিই বলুন। আল্লাহ আপনার ওপর সন্তুষ্ট হােন। অতঃপর তিনি বললেন, যেখানে দুআর জন্য দাঁড়াবে সেখানে হেঁটে রামী করা উত্তম। আর যেখানে দুআ করবে না সেখানে আরােহী অবস্থায় উত্তম। এতটুকু কথার পর আমি তাঁর কাছ থেকে উঠে গেলাম। এরপর আমি তাঁর থেকে বিদায় নিয়ে তাঁর ঘরের দরজা না পেরােতেই ভেতর থেকে কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম। ইতােমধ্যে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। রাহমাতুল্লাহ আলাইহি।
ইলমের এমনই পিয়াসী ছিলেন আমাদের মনীষীরা। দীনী আলােচনা করছেন, দুর্বোধ্য মাসআলার সমাধান দিচ্ছেন, এমন সময়ই মৃত্যু এসে জীবনকে বিদায় জানালাে!! আল্লাহ তাআলা তাঁকে কতাে সম্মানিত করেছেন! তাঁর অন্তরে ইলমের কী অগাধ মহব্বত লালিত ছিলো!
সময়ের সঠিক ব্যবহার করছেন আমাদের ইমামরা। তারা তাদের জীবনের সবটুকু উৎসর্গ করেছেন দ্বীনের কাজে। মানুষকে সঠিক জানাতে, সঠিক পথের পথিক বানাতে তারা সময়কে কখনো অপচয় করেননি। আমাদেরকেও তাদের জীবনাচরণ অনুসরণ করে নিজেদের কে প্রস্তুত করা উচিত। এই ঘূণেধরা সমাজে চারদিকে গুনাহের আসবাব। সমাজ আজ সময়কে অপচয় করার আসবাব দিয়ে পরিপূর্ণ। সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের ছেলেমেয়েরা ঘন্টার পর ঘন্টা অহেতুক সময় পার করছে৷ আমাদের তাই সচেতন হতে হবে। নিজেকে এবং অন্যদের কেও বাঁচাতে হবে সময় অপচয়ের এই দুষ্টচক্র থেকে।