সাদ বিন আবী ওয়াক্কাস (রাদিআল্লাহু আনহু), কাদেসিয়ার যুদ্ধে মুসলমানদের বীরত্ব

রুমান সেনাপতি রুস্তমের নাম কে না জানে?

ইতিহাসে যে-কজন সাহসী যােদ্ধার নাম পাওয়া যায়, রুস্তম তাদেরই একজন। যেমন ছিল তার শক্তি, তেমন ছিল তার বীরত্ব। সেই রুস্তমের সাথে একবার যুদ্ধ হলাে সাহাবিদের। 

সেই যুদ্ধটি ইতিহাসে কাদেসিয়ার যুদ্ধ নামেই পরিচিত। সাহাবিদের মোকাবিলা করার জন্যে রুস্তম তার বাহিনী প্রস্তুত করল। দু-বাহিনী মিলিত হলাে কাদেসিয়ার প্রান্তরে। মুসলিম বাহিনীর সেনাপতি নিযুক্ত হলেন সাদ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রা.)। আর পারস্যের সেনাপতিত্ব রুস্তম নিজেই গ্রহণ করল।

যুদ্ধ শুরুর আগে রুস্তমের একটা ভাবনা এলো। মুসলিমরা কেন পারস্যের মতাে সুপার পাওয়ারের সাথে যুদ্ধ করতে এসেছে, তাদের উদ্দেশ্য কী, পারস্যের সাথে মােকাবিলা করার মতো সাহস তারা পেল কোথায়- এসব প্রশ্নের উত্তর জানার জন্যে একজন প্রতিনিধি পাঠাতে বলল রুস্তম। রিবিয়ি ইবনু আমির (রাদিআল্লাহু আনহু)  মুসলিম বাহিনীর প্রতিনিধি নিযুক্ত হলেন। হালকা পাতলা গড়নের একটি ঘােড়ায় চড়ে রুস্তমের রাজদরবারে পৌঁছুলেন তিনি। গায়ে কমদামি পোশাক দেখে রক্ষীরা তাঁকে আটকে দিলাে ফটকে। তারা বলল 'তুমি কার সাথে দেখা করতে এসেছ, জানাে? এই পােশাকে তােমাকে আমরা ভেতরে যাবার অনুমতি দিতে পারি না। যাও, পােশাক পাল্টে পরিষ্কার হয়ে আসো ।

image: War in old age      


রিবিয়ি কর্ণপাত করলেন না তাদের কথায়। পােশাকের মধ্যে কোনা সম্মান নেই, সম্মান হলাে তাকওয়ার মধ্যে। এই শিক্ষাই নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহিসসালাম) তাঁদের দিয়েছেন। তাই তিনি বললেন, আমি স্বেচ্ছায় এখানে আসিনি। তােমাদের সেনাপতি আমায় ডেকে পাঠিয়েছেন। যদি এভাবেই যেতে দাও তাে যাব, নয়তাে ফিরে যাব আমাদের শিবিরে। তখন, নতিস্বীকার করল দ্বাররক্ষীরা। তাঁকে ভেতরে প্রবেশ করার অনুমতি দেওয়া হলাে।

তবে শর্ত হলাে তলােয়ার জমা দিতে হবে। রিবিয়ি এবারও তাদের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন। রক্ষীরা পড়ল মহা-যন্ত্রণায়। এই লােকটা তাদের মুখের ওপর কথা বলছে। লােকটা কি জানে না, তারা সুপার পাওয়ার পারস্যসম্রাটের লােক? লােকটা কি জানে না, যে-কোনাে সময় তার গর্দান চলে যেতে পারে? তা হলে? এত সাহস কোথায় পেয়েছে এই বেদুইন?

শেষমেশ ওরা হার মেনে নিল রিবিয়ি-র দৃঢ়তার সামনে। ঘােড়ায় চড়েই রুস্তমের দরবারে প্রবেশ করলেন তিনি। রুস্তমের লাল গালিচা ছিড়ে গেল ঘােড়ার খুরের আঘাতে। উপস্থিত লােকেরা অবাক হলাে এই দৃশ্য দেখে। এই লােকটার আগে রুস্তমের সামনে কেউই এমনটা করতে সাহস পায়নি। রিবিয়ি যখন তলােয়ার দিয়ে কার্পেট ছিদ্র করে নিজের ঘােড়া বাঁধলেন, তখন তাদের চোখ যেন কপালে উঠে গেল। উঠবেই-বা না কেন। আজ যদি কেউ হােয়াইট হাউজে গিয়ে এমনটা করে, তাে লােকজন তাকে দেখে অবাক হবে না? অবশ্যই হবে। সে সময়কার রুস্তমের রাজপ্রাসাদ আজকের হােয়াইট হাউজ থেকে কম কীসে।

রুস্তম বলল, 'আমাদের সাথে যুদ্ধ করার জন্যে তােমাদের কে পাঠিয়েছে? রিবিয়ি নির্ভয়ে জবাব দিলেন, আল্লাহ। আল্লাহ আমাদেরকে এখানে আসার নির্দেশ দিয়েছেন।

উত্তর শুনে ভুরু কুঁচকে গেল রুস্তমের। সে বলল, কী উদ্দেশ্য নিয়ে তােমরা এসেছ এখানে?

তিনি বললেন, আল্লাহর ইচ্ছায় মানুষকে মানুষের দাসত্ব থেদকে স্বাধীন করে এক আল্লাহর দাসত্বে নিয়ােজিত করার জন্য। সংকীর্ণ পৃথিবীর মােহ থেকে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্যে। খ্রিষ্টধর্মের অত্যাচার থেকে ন্যায় ও ইনসাফের ধর্ম ইসলামের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্যে আমরা এখানে এসেছি।

এই ছিল আমাদের পূর্বপুরুষদের জীবনচরিত। যারা ধন্য হয়েছিল মহানবী (সা.) এর সান্নিধ্যে। 

أحدث أقدم