যেমন ছিলো সাহাবিদের নামাজ!

একবার এক যিহাদ থেকে ফেরার সময় এক স্থানে রাত যপন করার জন্য নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবাইকে নির্দেশ দিলেন এবং বললেন, আজ রাতে কে আমাদের পাহারা দিবে? একজন মুহাজির আম্মার ইবনে ইয়াসির (রাযিঃ) এবং একজন আনসারী আব্বাদ ইবনে বিশর (রাযিঃ) বললেন, আমরা পাহারা দিব। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেই পথ দিয়ে শত্ৰুর আগমনের সম্ভাবনা ছিল সেই দিকের একটি পাহাড় দেখিয়ে বললেন, তােমরা উভয়ে এই স্থানে অবস্থান কর। দ্বায়িত্ব পেয়ে সাহাবি দুজন যথা সময়ে সেখানে চলে গেলেন। সেখানে যাওয়ার পর আনসারী সাহাবী মুহাজিরকে বললেন, চলুন, আমরা রাতকে দুই ভাগ করে একভাগে আপনি ঘুমাবেন আর আমি জাগ্রত থাকবো আরেকভাগে আপনি জাগ্রত থাকবেন আর আমি ঘুমাবো। এভাবে পলাক্রমে পাহাড়া দিলেই বোধ হয় উত্তম হবে।

কেননা, উভয়ই সারা রাত জেগে থাকলে হতে পারে কোন এক সময় উভয়েরই ঘুম চলে আসবে। জাগ্রত ব্যক্তি যদি কোন আশঙ্কা বােধ করে তবে অপর সঙ্গীকে জানাতেও পারবে।

Sample image: Namaz (qiamul lyal) 


রাত্রের প্রথম ভাগে আনসারী সাহাবীর পাহাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলো। তাই তিনি পাহড়ার জন্য প্রস্তুত হলে এবং মুহাজির সাহাবী ঘুমিয়ে পড়লেন। পাহাড়ার এক মুহূর্তে আনসারী সাহাবী ভাবলেন একটু এবাদত করে কাটানো যাক সময়টা। তাই তিনি নামাজে দাড়িয়ে গেলেন। এমন সময় শত্রুদের একটি টহল টিম দুর থেকে একজনকে একটি টিলার উপর দন্ডায়মান দেখতে পেল। তখন তারা সেখান থেকে তাকে লক্ষ করে তীর নিক্ষেপ করলো। কিন্তু কোনো প্রকার নড়াচড়া টের পেল না। তারা ভাবলো হয়তো তীর শরীরে আঘাত করেনি। তখন আবার নিক্ষেপ করলো। এবারো আগের মতোই নড়াচড়া টের পেল না। এইভাবে সে তৃতীয় তীর নিক্ষেপ করল। প্রতিটি তীর আনসারীর শরীরে বিদ্ধ হচ্ছিল আর তিনি তা হাত দ্বারা শরীর হতে বের করে নিচ্চিলেন। অতঃপর তিনি ধীরস্থিরভাবে রুকু সেজদা করলেন এবং নামায শেষ করে  সঙ্গীকে জাগালেন। শত্রুপক্ষের লোক একজনের স্থলে দুইজনকে দেখতে পেয়ে মনে করল নাজানি আরাে কি পরিমাণ লোক আছে।

তাই সে ওখান থেকে চলে গেল। মুহাজির সঙ্গী জাগ্রত হইয়া দেখলেন আনসারীর শরীরের তিন স্থান হতে প্রচুর পরিমাণে রক্ত ঝরছে। তিনি বললেন, সুবহানাল্লাহ! আপনি শুরুতেই আমাকে জাগালেন না কেন? আনসারী বললেন, আমি নামাযে একটি সূরা (সূরায়ে কাহ্ফ) শুরু করেছিলাম। সূরাটি শেষ না করে রুকুতে যেতর মনে চাইছিল না। পরে আমার এই ব্যাপারে ভয় হল যে, এমন না হয় যে, বারবার তীর বিদ্ধ হওয়ার কারণে আমি মৃত্যুবরণ করি আর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাহারার যে দায়িত্ব অর্পণ করেছেন তা অপূর্ণ রয়ে যায়। যদি আমার এই আশঙ্কা না হতো তবে আমি মৃত্যুবরণ করতাম কিন্তু সূরা শেষ না করে রুকু করতাম না। (বাইহাকী, আবু দাউদ)

এই ছিল ঐ সমস্ত বুযুর্গ ব্যক্তির নামায এবং তার প্রতি তাঁদের আগ্রহ। তীরের পর তীর বিদ্ধ হচ্ছেন  আর রক্তে রঞ্জিত হচ্ছেন কিন্তু নামাযের স্বাদে কোন রকম ব্যতিক্রম হচ্ছে না। আর আমাদের নামায এইরূপ যে, যদি মশাও কামড় দেয় তবে নামাযের ধ্যান চলে যায়। আর ভিমরুলের কথা তাে বাদই দিলাম।

Note: এখানে ফেকাহ সম্পর্কিত একটি মতভেদ আছে। আমাদের ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)এর মতে রক্ত বাহির হইলে অযু ভঙ্গ হইয়া যায় আর ইমাম শাফেয়ী (রহঃ)এর মতে অযু ভঙ্গ হয় না। সম্ভবতঃ ঐ সাহাবীর অভিমতও ইহাই ছিল অথবা তখন পর্যন্ত এই মাসআলার তাহকীক হয় নাই ; কেননা হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই মজলিসে উপস্থিত ছিলেন না। অথবা তখন পর্যন্ত এই হুকুম নাযিলই হয় নাই।


أحدث أقدم