হজরত উমর ইবনে খাত্তাব (রাদিঃ) - আল্লাহ ভীরু শাসক।

তাহার গােলাম হযরত আসলাম (রাযিঃ) বলেন, আমি একবার হযরত ওমর (রাযিঃ)এর সঙ্গে (মদীনার নিকটবর্তী হাররার দিকে যাচ্ছিলাম। মরুভূমির এক জায়গায় আগুন জ্বলতে দেখা গেল। হযরত ওমর (রাযিঃ) বললেন, সম্ভবতঃ কোন কাফেলা হবে, রাত হয়ে যাওয়ার কারণে শহরে যেতে পারে নি হয়তো  তাই বাহিরেই অবস্থান করছে । চলো, তাদের খোঁজ-খবর নিয়ে আসি। রাত্রে তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। 
sample image: Helping poor people     

সেখানে পৌঁছে  একজন মহিলাকে দেকতে পেলেন তিনি, তাহার সাথে কয়েকটি শিশুসন্তান রয়েছে। তারা সবাই কান্নাকাটি ও চিৎকার করছিলো। আর পানি ভর্তি একটি ডেকচি চুলার উপর বসানাে ছিলো, যার নীচে আগুন জ্বলছিলো। তিনি সালাম করিলেন এবং অনুমতি চাহিয়া তাহার নিকটে গেলেন এবং জিজ্ঞাসা করিলেন, এই শিশুগুলি কাঁদছে কেন? মহিলা জওয়াব দিল, ক্ষুধার জ্বালায় অস্থির হয়ে তারা কান্না করছে। উমর রাদিআল্লাহু আনহু  জিজ্ঞাসা করিলেন, এই ডেকচির মধ্যে কি আছে? মহিলাটি বলিল, তাদেরকে  ভুলাইয়া রাখার জন্য পানি ভর্তি করে চুলার উপর রেখেছি, যাহাতে কিছুটা সান্তনা পায় এবং ঘুমিয়ে পড়ে। অতঃপর মহিলা বললেন,
আমীরুল মুমিনীন ওমর (রাযিঃ) ও আমার মধ্যে আল্লাহর দরবারেই ফয়সালা হইবে। কেননা, তিনি আমার এই অভাব-অনটনের কোন খোঁজ-খবর লন না।

এই কথা শুনিয়া হযরত ওমর (রাযিঃ) কাদিতে লাগিলেন এবং বলিলেন, আল্লাহ তােমার উপর রহম করুন। ওমর তােমার এই অবস্থা কি করিয়া জানিবেন?

মহিলা বলিল, 
তিনি আমাদের আমীর হইয়াছেন অথচ আমাদের কোন খোঁজ-খবর রাখেন না।

হযরত আসলাম (রাযিঃ) বলেন, অতঃপর হযরত ওমর (রাযিঃ) আমাকে লইয়া ফিরিয়া আসিলেন এবং বাইতুল মাল হইতে কিছু আটা, খেজুর, চর্বি ও কিছু কাপড় ও দিরহাম লইয়া একটি বস্তায় ভর্তি করিলেন। মােটকথা বস্তাটি খুব ভাল করিয়া বােঝাই করিলেন এবং আমাকে বলিলেন, ইহা আমার কোমরে উঠাইয়া দাও।
আরজ করিলাম, আমি লইয়া যাইব। তিনি বলিলেন, না, আমার কোমরে উঠাইয়া দাও। আমি দুই তিনবার অনুরােধ করিলে তিনি বলিলেন, 
কিয়ামতের দিনও কি আমার বােঝা তুমিই বহন করিবে? ইহা আমিই বহন করিয়া লইয়া যাইব। কেননা কিয়ামতের দিন এই ব্যাপারে আমাকেই প্রশ্ন করা হইবে। 
পরিশেষে আমি বাধ্য হইয়া বস্তা তাঁহার কোমরে উঠাইয়া দিলাম।
তিনি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে মহিলাটির নিকট পৌছিলেন। আমিও তাঁহার সঙ্গে ছিলাম। সেখানে পৌছিয়াই তিনি পাতিলে আটা, কিছু চর্বি ও কিছু খেজুর ঢালিয়া দিলেন এবং নাড়াচাড়া করিতে শুরু করিলেন এবং চুলায় নিজেই ফু দিতে আরম্ভ করিলেন। হযরত আসলাম (রাযিঃ) বলেন, আমি দেখিতেছিলাম তাহার ঘন দাড়ির ভিতর দিয়া ধোঁয়া বাহির হইতেছে। এইভাবে কিছুক্ষণের মধ্যেই 'হারীরা'র মত এক প্রকার খাদ্য তৈয়ার হইয়া গেল। অতঃপর তিনি তাঁহার মুবারক হস্তে সেই খাদ্য বাহির করিয়া তাহাদিগকে খাওয়াইলেন।
তাহারা তৃপ্ত হইয়া খেলাধুলা ও আনন্দ-ফুর্তিতে মাতিয়া উঠিল। অবশিষ্ট খাদ্য অন্য বেলার জন্য মহিলার হাতে উঠাইয়া দিলেন। মহিলাটি অত্যন্ত আনন্দিত হইয়া বলিতে লাগিল,
আল্লাহ তায়ালা তােমাকে উত্তম বদলা দান করুন। হযরত উমরের পরিবর্তে তুমিই খলীফা হওয়ার উপযুক্ত ছিলে।


হযরত ওমর (রাযিঃ) তাহাকে সান্ত্রনা দিয়া বলিলেন, 
তুমি যখন খলীফার নিকট যাইবে তখন সেখানে আমাকেও দেখিতে পাইবে।

অতঃপর হযরত ওমর (রাযিঃ) তাহাদের নিকট হইতে একটু দূরে সরিয়া জমিনের উপর বসিয়া পড়িলেন। কিছুক্ষণ বসিয়া থাকিয়া চলিয়া আসিলেন। এবং বলিলেন, আমি এইজন্য বসিয়াছিলাম যে, প্রথমে তাহাদিগকে আমি ক্রন্দনরত অবস্থায় দেখিয়াছিলাম। আমার মন চাহিল, তাহাদিগকে একটু হাসিতে দেখিয়া যাই। (আশহারে মাশাহীর, মুন্তাখাব কানযুল-উম্মাল)

Post a Comment

Previous Post Next Post