যাকাতের খাত সমুহঃ যেভাবে যাকাত বন্টন করবেন

যাকাতের মাসায়েলঃ

যাকাত ইসলামের পাঁচটি অত্যাবশকীয় রুকনের একটি। যাকাতের অর্থ বা সম্পদ গরিবদুঃখী মানুষের হক। অর্থাৎ যাকাত গরিবদের সম্পদ, এটা তাদের প্রাপ্য অংশ। তাই কেউ যদি যাকাত দিয়ে মনে করে যে সে গরিবদের উপর রহম করেছে তবে সে ভুলের মধ্যে আছে। বরং যাকাত আদায় করার মাধ্যমে সে নিজের উপরই দয়া করেছে বা নিজেরই উপরকার করেছে। কারন তার কাছে গচ্ছিত যাকাতের টাকা আসলে তার নিজের টাকা নয়, এটা গরিবদের টাকা। এ টাকা গরিবের মাঝে দিয়ে দেয়াই তার কাজ। তাই আমাদের মধ্যে যাদের যাকাত ফরজ তারা যেন এ বিষয়টি খেয়াল রাখি,  যে ব্যক্তি যাকাত নিতে এসেছেন তার প্রতি যেন এমন কোনো আচরণ করা না হয় যাতে প্রমানিত হয় তার প্রতি করুণা করা হচ্ছে। ধারাবাহিক আলোচনার আজকের পর্বে আমরা জানবো কাদেরকে যাকাতের টাকা দেওয়া যাবে। তাহলে চলুন জেনে নেই, কাদের যাকাতের টাকা দেয়া যায় এবং কাদের যাকাতের টাকা দেওয়া যাবে না।  

যাকাতের মাসায়েল
যাকাতের মাসায়েল  


কোন কোন লােকদেরকে বা কোন কোন খাতে বা যাদের যাকাত দেয়া যায় নাঃ


নিম্নলিখিত লােকদেরকে বা নিম্নলিখিত খাতে যাকাত দেয়া যায় না, দিলে যাকাত আদায় হয় না।


১। যার নিকট নেছাব পরিমাণ অর্থসম্পদ আছে।

২। যারা সাইয়েদ অর্থাৎ, হাসানী, হুসাইনী, আলাবী, জাফরী ইত্যাদি।

৩। যাকাত দাতার মা, বাপ, দাদা, দাদী, পরদাদা, পরদাদী, পরনানা, পরনানী ইত্যাদি উপরের সিড়ি।

৪। যাকাত দাতার ছেলে, মেয়ে, নাতি, নাতনি পােতা, পৌত্রী, ইত্যাদি নীচের সিড়ি।

৫। যাকাত দাতার স্বামী বা স্ত্রী।

৬। অমুসলিমকে যাকাত দেয়া যায় না।

৭। যার উপর যাকাত ফরয হয়-এরূপ মালদার লােকদের নাবালেগ সন্তান।

৮। মসজিদ, মাদ্রাসা বা স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল প্রভৃতি নির্মাণ কাজের জন্য।

৯। মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফনের জন্য বা মৃত ব্যক্তির ঋণ ইত্যাদি আদায়ের জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যায়না।

১০। রাস্তা-ঘাট, পুল ইত্যাদি নির্মাণ ও স্থাপন কার্যে- যেখানে নির্দিষ্ট কাউকে মালিক বান্যনাে হয় না- সেখানে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যায়না।

১১ সরকার যদি যাকাতের মাসআলা অনুযায়ী সঠিক খাতে যাকাতের অর্থ ব্যয় না করে, তাহলে সরকারের যাকাত ফাণ্ডে যাকাত দেয়া যাবে না।

১২। যাকাত দ্বারা মসজিদ মাদ্রসার স্টাফকে (গরীব হলেও) বেতন দেয়া যায়না।


যে লােকদেরকে বা যাদের যাকাত দেয়া যায়ঃ


১। ফকীর অর্থাৎ, যাদের নিকট সন্তান-সন্ততির প্রয়ােজন সমাধা করার মত সম্বল নেই অথবা যাদের নিকট যাকাত ফে্রা ওয়াজিব হওয়ার পরিমাণ অর্থ সম্পদ নেই।

২। মিসকীন অর্থাৎ, যারা সম্পূর্ণ রিক্ত হস্ত অথবা যাদের জীবিকা অর্জনের ক্ষমতা নেই।

৩। ইসলামী রাষ্ট্র হলে তার যাকাত তহবিলের দায়িত্বে নিয়ােজিত ব্যক্তিগণ।

৪। যাদের উপর ঋণের বােঝা চেপেছে।

৫। যারা আল্লাহর রাস্তায় শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদে লিপ্ত।

৬। মুসাফির ব্যক্তি (বাড়িতে সম্পদশালী হলেও) সফরে রিক্ত হস্ত হয়ে পড়লে।

৭। যাকাত দাতার ভাই-বােন, ভাতিজা-ভাতিজী, ভগ্নিপতি, ভাগনা-ভাগনী, চাচা-চাচী, খালা-খালু, ফুপা-ফুফী, মামা-মামী, শ্বাগুড়ী, জামাই, সৎ বাপ ও সৎ মা ইত্যাদি (যদি এরা গরীব হয়)।

৮। নিজের গরীব চাকর-নওকর বা কর্মচারীকে দেয়া যায়। তবে এটা বেতন বাবদ কর্তন করা যাবে না।


যাদেরকে যাকাত দেয়া উত্তমঃ


১। দ্বীনী ইলম পড়নেওয়ালা এবং পড়ানেওয়ালা যদি যাকাতের হকদার হয়, তাহলে এরূপ লােককে যাকাত দেয়া সবচেয়ে উত্তম। 

২। তারপর যাকাত পাওয়ার সবচেয়ে যােগ্য নিজের আরীয়-স্বজনের মধ্যে বারা যাকাত পাওয়ার যােগ্য তারা।

৩। তারপর বন্ধু-বাদ্ধব ও প্রতিবেশীর মধ্যে যারা যাকাত পাওয়ার যােগ্য তারা।

৪। তারপর যাকাতের অন্যান্য প্রকার হকদারগণ। 


যাকাত আদায় করার তরীকা ও মাসায়েলঃ


১।  বৎসর পুর্ণ হওয়ার সাথে সাথে যাকাত আদায় করতে হবে। বিনা ওজরে বিলম্ব করলে পাপ হবে।

২। যাকাত আদায় করার সময় নিয়ত করতে হবে যে, এ সম্পদ আল্লাহর ওয়াস্তে যাকাত হিসেবে প্রদান করা হচ্ছে, নতুবা যাকাত আদায় হবে না। নেছাবের মালিক হওয়ার পর বৎসর পূর্ণ হওয়ার পূর্বেও অর্থাৎ, যাকাত ওয়াজিব হওয়ার পূর্বেও অগ্রিম প্রদান করা যায়।

৩। যাকাত প্রদানের সময় গ্রহণকারীকে একথা জানানাে প্রয়ােজন নেই যে, এটা যাকাতের টাকা। আপনজনকে যাকাত দিলে তাকে একথা না বলাই শ্রেয়, কেননা বললে তার খারাপ লাগতে পারে।

৪। যে পরিমাণ টাকা থাকলে কারও উপর যাকাত হরয হয়- এত পরিমাণ যাকাতের টাকা একজনকে দেয়া মাকরূহ। তবে ঋণী ব্যক্তির বাণ মুক্তির জন্য বা অধিক সন্তান-সন্ততি ওয়ালাকে এত পরিমাণ দিলেও ক্ষতি নেই।

৫। যাকাত দেয়ার নিয়তে কোন টাকা পথক করে রাখলে পরে দেয়ার সময় যাকাতের নিয়তেৰ কথা মনে না আসলেও যাকাত আপায় হয়ে যাবে।

৬। যাকে যাকাত দিবে অন্ততঃ এত পরিমাণ দিবে যেন ঐ দিনের খরচের জন্য সে আর অন্যের মুখাপেক্ষী না হয়। কম পক্ষে এত পরিমাণ দেয়া মােস্তাহাব, এর চেয়ে কম দিলেও যাকাত আদায় হয়ে যাবে।

৭। কারও নিকট টাকা পাওনা থাকলে যাকাতের নিয়তে সেই পাওনা মাফ করে দিলে যাকাত আদায় হবে না বরং তার নিকট যাকাতেব টাকা দিয়ে পরে তার নিকট খেকে ঋণ পরিশােধ বাবদ সে টাকা নিয়ে নিলে যাকাতও আদায় হবে ঋণও উসূল হবে।

৮। যাকাতের টাকা নিজের হাতে গরীবদেরকে না দিয়ে অন্য কাউকে উকীল বানিয়ে তার দ্বারা দিলেও যাকাত আদায় হবে।

৯। যাকাত ওয়াজিব হওয়ার পর কেউ নিজের সমস্ত মাল দান করে দিলে তার যাকাত মাফ হয়ে যায়।

১০। যাকাত দাতার অনুমতি ছাড়া অন্য কেউ তার পক্ষ থেকে যাকাত দিয়ে দিলে যাকাত আদায় হবে না। যাকাত দাতা কাউকে পুরস্কার বা ঋণের নামে কিছু দিল আর অন্তরে নিয়ত রাখল যে, যাকাত হতে দিলাম, তবুও যাকাত আদায় হয়ে যাবে। মুখে যাকাত কথাটা বলার আবশ্যকতা নেই।


Tag: যাদের যাকাত দেওয়া যাবে। যাদের যাকাত দেওয়া যাবে না। ঋনের টাকার ক্ষেত্রে যাকাত। যাকাতে খাত। যাকাত বন্টন। যাকাতের মাসায়েল।  


Post a Comment

Previous Post Next Post