ইমাম আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক (দুনিয়াবিরাগী আবিদ)

ইমাম আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক (দুনিয়াবিরাগী আবিদ)

দ্বীনের স্বার্থে দুনিয়ার চাকচিক্য আর আরাম-আয়েশকে তারা মাটি চাপা দিয়েছেন। তাদের হাড়ভাংগা মেহনত আর আত্মত্যাগের কারনেই আজ আমরা দ্বীনের সঠিক পথটি সহজে বেছে নিতে পারছি। অন্ধকার আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্র হলেন ইমাম আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক রহিমাহুল্লাহ।  

তিনি জ্ঞান অনুসন্ধানের পাশাপাশি যুদ্ধের ময়দানেও দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক (রঃ) যুদ্ধের ময়দানে ঠিকই বীরত্ব দেখাতেন। কিন্তু যুদ্ধ-শেষে গনীমাতের মাল বণ্টনের সময় প্রায়ই তাঁকে খুঁজে পাওয়া যেত না। মূলত এই দুনিয়াবিরাগই ইবনুল মুবারকের প্রসিদ্ধির সবচেয়ে বড়াে কারণ।

ইমাম আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক (দুনিয়াবিরাগী আবিদ)
ইমাম আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক (দুনিয়াবিরাগী আবিদ)

ইবনুল মুবারকের শুধু বেশি বেশি ও নিয়মিত নফল ইবাদাত করেই ক্ষান্ত হননি, মানুষের কাছ থেকে সেগুলাে যথাযথভাবে গােপন রাখারও চেষ্টা করেছেন। যতটুকু স্বাভাবিকভাবেই প্রকাশ হয়ে গেছে, সে ব্যাপারে তাঁর আশপাশের মানুষদের সাক্ষ্যদেখলে অবাক হতে হয়। আলি ইবনুল হাসান বলেছেন, "ইবনুল মুবারকের চেয়ে বেশি ও সুন্দর করে তিলাওয়াত করতে এবং তাঁর চেয়ে বেশি সালাত পড়তে আমি আর কাউকে দেখিনি। বাড়িতে থাকুন বা সফরে, তাঁর সালাতের পরিমাণ ও তিলাওয়াতের সৌন্দর্য কিছুমাত্র কমত না। 

মুসাফির অবস্থায় তিনি রাতের বেলা উঠে সালাতে চলে যেতেন, সফরসঙ্গীরা কখনও জানতেও পারেনি।" যুদ্ধকালীন এক-রাতে তিনি কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে থাকার ভান করেন। সবাইকে ঘুমিয়ে যেতে দেখার পর উঠে তাহাজ্জ্বদ পড়তে চলে যান। সকালে জানতে পারেন যে, আরেক সঙ্গীও ঘুমের ভান করে তাঁর সালাত পড়া দেখে ফেলেছেন। লজ্জায়-সংকোচে তিনি আর সেই সঙ্গীর সাথে কথা বলেননি।

মানুষের অধিকার ও সন্দেহমুক্ত হালাল উপার্জনের ব্যাপারে তিনি ছিলেন খুবই সচেতন। শামে (বৃহত্তর সিরিয়ায়) থাকা অবস্থায় একবার তাঁর কলম ভেঙে যায়। আরেকজনের একটি কলম ধার নিয়ে তিনি বাকি লেখার কাজ সারেন। কিন্তু পরে তা ফেরত দিতে ভুলে যান এবং সেটি নিয়েই চলে আসেন খুরাসানে। এসে যখন কলমটি খেয়াল করলেন, শুধু তা ফেরত দেওয়ার জন্যই আবার শামে ফিরে যান। তিনি বলতেন "লাখ লাখ দিরহাম সদাকা করার চেয়ে সন্দহপূর্ণ উপায়ে উপার্জিত একটি দিরহাম ছুড়ে ফেলে দেওয়া আমার বেশি প্রিয়।"

ইবনুল মুবারকের ইবাদাতে এমন-কোনাে বৈশিষ্ট্য তাে অবশ্যই ছিল, যার ওসিলায় তাঁর সকল দুআ কবুল হতাে। হাসান ইবনু ঈসা তাকে বলতেন 'মুজাবুদ দাওয়াহ (যার দুআ কবুল করা হয়)। এই হাসান নিজেই তার জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ। তিনি আগে খ্রিস্টান ছিলেন। ইবনুল মুবারক দুআ করেছিলেন, "হে আল্লাহ, তাকে মুসলিম বানিয়ে দিন। আল্লাহ সে দুআ কবুল করেন এবং হাসান ইসলাম গ্রহণ করেন। আল্লাহ তাআলা তাঁকে বিনয় ও নমত্রতার ভূষণেও ভূষিত করেছিলেন। 

একবার তিনি কুফায় ছিলেন। তাঁকে হাজ্জের আহকাম-সম্বলিত হাদীসের কিতাব পড়ে শােনানাে হচ্ছিল। একটি হাদীসের শেষে পড়া হলাে  'আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক বলেছেন, আমরা এই হাদীসের ওপর আমল করি। ইবনুল মুবারক বললেন, 'আমার এই কথা কে লিখেছে? হাসান জবাব দিলেন, 'যে লেখক হাদীস লিখেছেন তিনিইরলিখেছেন। তিনি হাত দিয়ে ঘষে ঘষে পাণ্ডুলিপি থেকে এই কথাটুকু তুলে ফেললেন।রতারপর পাঠদান শুরু করলেন। বললেন, আমি এমন কে যে আমার কথা লিখে রাখতে হবে?

হাসান রহিমাহুল্লাহ আরও বর্ণনা করেছেন, আমি একদিন ইবনুল মুবারকের সঙ্গে ছিলাম। আমরা একটি পানিপানের কৃপের কাছে এলাম। কূপের কাছে লােকদের ভিড় লেগে ছিল, সবাই পানি পান করছিল। ইবনুল মুবারকও পানি পানের কূপটির কাছে যেতে চাইলেন। কিন্তু লােকেরা তাঁকে চিনল না। তাঁকে ঠেলে পেছনে সরিয়ে দিল। ভিড় থেকে বের হয়ে এসে বললেন, জীবন তাে এ-রকমই। যেখানে আমাদের কেউ চেনে না সেখানে আমাদের কেউ সম্মান দেখায় না।

Reference Books: তারিখুল দিমাশক,৩৮/২৪০। সিফাতুস সাফওয়া, ৪/১৩৯। সিফাতুস সাফওয়ার,৪/১৩৫। সিফাতুস সাফওয়া, ৪/১৩৪, ৪/১৩৫। 
Tags: ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনুল মোবারক (রঃ)। ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনুল মোবারক (রঃ)। ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনুল মোবারক (রঃ)। ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনুল মোবারক (রঃ)। 

Post a Comment

Previous Post Next Post