কুসংস্কারঃ অতীত ও বর্তমানের তারতম্য

অতীত ও বর্তমানের তারতম্যঃ

আজ মুসলিম জাতি এক মহান ঘােষকের দিকে তাকিয়ে আছে-যার মায়াভরা ডাক তার মাঝে প্রাণ সঞ্চার করবে, তাকে জাগিয়ে দেবে। আজ এই উম্মাহ বড়ােই দিশাহীন, পথভােলা। আল্লাহ নির্দেশনা থেকে দূরে সরে গেছে। তাঁর পছন্দ ও সন্তুষ্টিমূলক কাজ বর্জন করেছে। নবির শিক্ষা ও দিকনির্দেশনা অমান্য করছে। অথচ নবির শিক্ষায় আলাের পথ পেয়েছিল তাঁর অসংখ্য সাহাবা। আবু বকর -এর কাছে যখন নবির ইসরা ও মিরাজের খবর এসেছিল, তখন তিনি নির্দ্বিধায় বলেছিলেনযদি তিনি এমন কথা বলে থাকেন, তবে সত্য বলেছেন।

কুসংস্কারঃ অতীত ও বর্তমানের তারতম্য
কুসংস্কারঃ অতীত ও বর্তমানের তারতম্য


এই বিবেক বা মানসই হলাে অত্যধিক মূল্যবান রত্ন। সুস্থ বিবেকই মানুষকে প্রকৃত মানুষরূপে গড়ে তােলে। মনুষ্যত্বকে পরিণিত করে। তাই মানুষের বিবেক কিছুতেই কুসংস্কারের বেড়াজালে আটকে থাকতে পারে না। কিন্তু আফসােসের ব্যাপার হলাে-আমি যখনই কোনাে মুসলিম দেশ সফর করেছি, হতাশ হয়েছি; সমস্ত দ্বীনি পরিবেশই কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। মসজিদের পাশেই বিভিন্ন মাজার। তাতে বিরামহীন নৃত্য-গান পরিবেশিত হচ্ছে। কিছু মানুষ কবরের চারপাশ জুড়ে বসে আছে, তাবিজ-কবজ করছে, গায়েবের সন্ধান দিয়ে চলেছে। ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অলীক কথাবার্তা বলছে। তাদের দাবি-তারা সব রকমের বিপদ-আপদ, রােগ-বালাই অতি দ্রুত নিরাময় করার ক্ষমতা রাখে! মানুষ তাদের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। অবলীলায় তাদের কথা গিলছে, মেনে চলেছে! নানা উদ্ভট পদ্ধতি মেনে জীবন-সমস্যার সমাধানে এগিয়ে চলেছে।

একটা ব্যাপার ভেবে বেশ অবাক হই, যে দ্বীনের আবির্ভাব হয়েছিল কুসংস্কারের মূলে কুঠারাঘাতের তরে, সেই দ্বীনের অনুসরারীরা অবলীলায় কুসংস্কারে ডুবে আছে। তাদের মন-মগজে, অন্তরে কুসংস্কারের প্রবল ছাপ। মুসলমানদের ইবাদতের দিকে তাকালেই বােঝা যাবে, তাদের নামাজে, জিকিরে সর্বোপরি ইবাদতের রন্ধ্রে রন্ধ্রে কুসংস্কার ঢুকে পড়েছে। আকিদা-বিশ্বাসের অবস্থা তাে আরও নাজুক। মুসলমানদের ধর্মবিশ্বাসে ঢুকে পড়েছে কুসংস্কার। আজ কুসংস্কার যেন মুসলিম জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। সত্য ধর্ম কখনােই কুসংস্কারের সাথে আপস করবে না; বরং শেষ পর্যন্ত এর বিরদ্ধে লড়ে যাবে,মূলে কুঠারাঘাত করবে। কুরআন ও হাদিসের মূল শিক্ষায়, রাসূল -এর জীবনে, সাহাবা ও সােনালি যুগের মানুষদের জীবনে এমন হাজারাে উদাহরণ রয়েছে। কোনাে কোনাে বরেণ্য ইমাম বলেছেন,

কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে যদি আমার হৃদয়ে পেরেক ঠুকা হয়, তবুও কুরআন ও হাদিসের দলিল ছাড়া আমি তা গ্রহণ করব না।

অনেক সময় দ্বীনের বেশে ঢুকে পড়া কুসংস্কারের জন্য মানুষের আবেগ ও ভাবাবেগ কাজ করে। তবুও কুরআন ও সুন্নাহর বিশুদ্ধ প্রমাণ ছাড়া তা গ্রহণ করা যাবে না।

আমরা বাস্তবতা বুঝতে পারি। অনেক মুসলমান এখনও দ্বীনি শিক্ষা থেকে বেশ দূরে। এক্ষেত্রে দায়িত্ব পড়ে আলিম, দায়ি ও প্রচারমাধ্যমের ওপর। এসব ক্ষেত্রে সঠিক ইসলামি মানস ও বিবেক গঠনে জোর প্রচেষ্টা চালানাে উচিত মুসলিম মানস কখনােই কুসংস্কার গ্রহণ করবে না এবং তার ডাকে সাড়া দেবে না; বরং সুস্থ বিবেক ও বুদ্ধিই তার কাছে সবকিছুর মানদণ্ড হবে। কুরআনে। ইরশাদ হয়েছে,

বলুন! যদি তােমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো, তাহলে তােমাদের প্রমাণ নিয়ে আসাে। সূরা বাকারা : ১১১

মুসলমানের কাছে তার সুস্থ বিবেক ও বুদ্ধিই সত্যের মানদণ্ড। সে কিছুতেই কুরআন ও সুন্নাহর সমর্থন ছাড়া কোনাে কুসংস্কার গ্রহণ করতে যাবে না। আজ কুসংস্কার মুসলমানদের কথায়, বক্তব্যে, বৈঠকে, আলােচনা সভায় ইত্যাদিতে ঢুকে পড়েছে। বরং অনেক মুসলমান কিছু কুসংস্কারকে কুসংস্কার মানতেই নারাজ। কারণ, তার মাঝে কুসংস্কার চেনার জ্ঞান নেই; সে দ্বিধায় পড়ে যায়।

তাই আলিমদের উচিত মুসলমানদের অজ্ঞতার পরিধি সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল থাকা, যেন সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হয়। কিছুতেই যেন ওহি ও কুসংস্কারের মাঝে গুলিয়ে না যায়। কুসংস্কার যেন কিছুতেই দ্বীন হিসেবে জায়গা করে নিতে না পারে! ইসলাম কুসংস্কারের আড়ালে ঢাকা পড়ে গেছে। আমরা কি এই কুসংস্কার দূর করতে পারব? হয়তাে! আশায় বুক বেঁধে আছি।


-ড. সালমান আল আওদা রচিত  মা'আল মুস্তফা এর বাংলা অনুবাদ থেকে।
রেফারেন্স বুকঃ মা'আল মুস্তফা/ড. সালমান আল আওদা/পৃষ্ঠা নংঃ ৪৮-৫০।
Previous Post Next Post