কবীরা গুনাহ : পরিচয় ও বেঁচে থাকার উপায়

কবীরা গুনাহ কী?

মহান আল্লাহ ও তার রাসূল (সাঃ) যে সমস্ত বিষয়গুলো থেকে বিরত থাকতে বলেছেন এবং ওলামাদের বর্ণনা থেকে যেসব বিষয় আল্লাহ ও তার রাসূল (সাঃ) কর্তৃক হারাম হওয়ার অকাট্য দলীল রয়েছে, সেগুলোই কবীরা গুনাহ। গুনাহ দুই প্রকার কবীরা গুনাহ ও সগীরা গুনাহ। কবীরা গুনাহ থেকে মাফ পেতে চাইলে তওবা করতে হবে। যদি কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা যায় তবে আল্লাহ তাাআলা সগীরা গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন

আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে বলেছেন (সূরা আন-নিসা-৩১) ‘যে বিষয়গুলো সম্পর্কে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে যদি তোমরা সেসব বিষয়গুলো থেকে বিরত থাকতে পার, তবে আমি তোমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো ক্ষমা করে দেব এবং সম্মানজনক স্থানে তোমাদের প্রবেশ করাব।‘

কবীরা গুনাহ তাওবা ছাড়া মাফ হয় না। আর আল্লাহ তাআলা সেই ব্যাক্তিকে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন যে তাওবা করে। 

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ)-বর্ননা করেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ রব্বুল ‘আলামীন ইরশাদ করেছেন : আমার উপর বান্দার ধারণা অনুযায়ী আমি তার সাথে আছি। সে যেখানেই আমাকে স্মরণ করে আমি তার সাথে আছি। আল্লাহর কসম, শূণ্য মাঠে তোমাদের কেউ হারানো প্রাণী পাওয়ার পর যে আনন্দিত হয় আল্লাহ তা‘আলা বান্দার তাওবার কারণে এর চেয়েও বেশি আনন্দিত হন। যদি কেউ একবিঘত সমান আমার দিকে অগ্রসর হয় তাহলে আমি তার দিকে একহাত অগ্রসর হই। যদি কেউ একহাত সমান আমার প্রতি অগ্রসর হয়, তাহলে আমি একগজ সমান তার প্রতি অগ্রসর হই। যদি কেউ আমার দিকে পায়ে হেঁটে আসে তবে আমি তার দিকে দৌড়ে আসি। (ই. ফা. ৬৭০০, ই. সে. ৬৭৫৫)

 কবীরা গুনাহ থেকে সর্বদা বেচে থাকার চেষ্ঠা করতে হবে এবং আল্লাহ তাআলার কাছে গুনাহ থেকে বেচে থাকার জন্য দোয়া-কান্নাকাটি করতে হবে। নিস্নে কতগুলো কবীরা গুনাহের উল্লেখ করা হলো। 

কবীরা গুনাহ কি? কবীরা গুনাহের তালিকা।  কবীরা গুনাহ থেকে বাচার উপায়
কবীরা গুনাহ কি?
কবীরা গুনাহের তালিকাঃ

 ১. শিরক।

২. মা-বাপের নাফরমানী করা অর্থাৎ, তাদের হক আদায় না করা।

৩. "কাত্য়ে রেহমী" করা অর্থাৎ, যে সব আরীয়দের সাথে রক্তের সম্পর্ক রয়েছে তাদের সাথে অসদ্ব্যবহার করা ও তাদের হক নষ্ট করা।

৪. যেনা করা অর্থাৎ, নারীর সতীত্ব নষ্ট করা এবং পুরুষের চরিত্র নষ্ট করা।

৫. বালকদের সাথে কুকর্ম করা।

৬. হস্ত মৈথুন করা।

৭. প্রাণীর সাথে কুকর্ম করা।

৮. আমানতের খেয়ানত করা। 

৯. মানুষ খুন করা।

১০.মিথ্যা তােহমত বা অপবাদ লাগানাে, বিশেষভাবে যেনার অপবাদ লাগানাে।

১১. মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া।

১২. সাক্ষ্য গােপন করা, যখন অন্য কেউ সাক্ষ্য দেয়ার না থাকে।

১৩. যাদু দ্বারা কারও ক্ষতি সাধনের চেষ্ট করা।

১৪. যাদু শিক্ষা করা এবং শিক্ষা দেয়া।

১৫. অঙ্গীকার ভঙ্গ করা, ওয়াদা খেলাফ করা, কথা দিয়ে তা ঠিক না রাখা।

১৬. গীবত করা।

১৭.স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে, মনীবের বিরুদ্ধে চাকরকে, উস্তাদের বিরুদ্ধে শাগরেদকে, রাজার বিরুদ্ধে প্রজাকে, কর্তার বিরুদ্ধে কর্মচারীকে ক্ষেপিয়ে তােলা।

১৮. নেশা করা।

১৯. জুয়া খেলা। 

২০. সূদ অনেক প্রকারের আছে- সরল সূদ, চক্রবৃদ্ধি সূদ ইত্যাদি সর্বপ্রকারের সূদই মহাপাপ। সূদ দাতা, সূদ গ্রহীতা, সূদের লেন-দেনে সাক্ষদাতা ও সূদ বিষয়ক লেন-দেনের দলীল লেখক সকলের প্রতি রাসূল (সাঃ) লা'নত করেছেন। সকলেরই কবীরা গােনাহ হয়।

২১. ঘুষ বা রেশওয়াত প্রদান ও গ্রহণের কারণে আল্লাহর অভিশাপ অবতীর্ণ হয়, এটা মহাপাপ। তবে জালেমের জুলুমের কারণে নিজের হক আদায় করার জন্য ঠেকায় পড়ে ঘুষ দিলে তা পাপ নয়। কিন্তু ঘুষ দিয়ে কার্য উদ্ধার করার মনােবৃত্তি ভাল নয়। যাদের বেতন ধার্য আছে তারা কর্তব্য কাজ করে দিয়ে অতিরিক্ত যা কিছু নিবে সবই ঘুষ, চাই একটা সিগারেট হােক বা এক কাপ চা বা একটা পানই হােক।

২২. অন্যায়ভাবে কারও স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি হরণ বা ভােগ দখল করা।

২৩. অনাথ, এতীম, নিরাশ্রয় বা বিধবার মাল গ্রাস করা।

২৪. খােদার ঘর যিয়ারতকারী তথা হজ্জযাত্রীদের প্রতি দুর্ব্যবহার করা।

২৫. মিথ্যা কছম করা।

২৬. গালি দেয়া। 

২৭. অশ্লীল কথা বলা।

২৮. জেহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করা।

২৯. ধােকা দেয়া।

৩০. অহংকার করা। 

৩১. চুরি করা।

৩২. ডাকাতি ও লুটতরাজ করা, এমনিভাবে পকেট মারা, ছিনতাই করা।

৩৩. নাচ, গান-বাদ্য সিনেমা ইত্যাদি। 

৩৪. স্বামীর নাফরমানী করা, অর্থাৎ, স্বামীর হক আদায় না করা।

৩৫. জায়গা যমীর আইল (সীমানা) নষ্ট করা।

৩৬. শ্রমিক থেকে কাজ পূর্ণ নিয়ে তার পূর্ণ মজুরী না দেয়া বা পূর্ণ মজুরী দিতে টাল-বাহানা করা।

৩৭. মাপে কম দেয়া ও মালে মিশাল দেয়া।

৩৯. খরীদ্দারকে ধােকা দেয়া।

৪০. দাইয়ুছিয়াত অর্থাৎ, নিজের বিবিকে বা অধীনস্থ কোন নারীকে পর পুরুষের সঙ্গে মেলাযেশা করতে দেয়া, পর পুরুষের বিছানায় যেতে দেয়া, এসবের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা।

৪১. চোগলখুরী করা।

৪২. গণকের কাছে যাওয়া।

৪৩. মানুষ বা অন্য কোন জীবের ফটো আদর করে ঘরে রাখা।

৪৪. পুরুষের জন্য সােনার আংটি পরিধান করা।

৪৫. পুরুষের জন্য রেশমী পােষাক পরিধান করা। 

৪৬. শরীরের রূপ ঝলকে- মেয়েলােকদের জন্য এমন পাতলা পােশাক পরিধান করা।

৪৭. মহিলাদের জন্য পুরুষের এবং পুরুষের জন্য মহিলার পােশাক পরিধান করা।

৪৮. গর্বভরে লুঙ্গি, পায়জামা, জামা ও প্যান্ট পায়ের নীচে ঝুলিয়ে চলা।

৪৯. বংশ বদলানাে অর্থাৎ, পিতৃ পরিচয় বদলে দেয়া।

৫০. মিথ্যা মােকাদ্দমা করা, মিথ্যা মােকাদ্দমার পরামর্শ প্রদান, তদবীর ও পায়রবী করাও কবীরা গােনাহ।

৫১. মৃত ব্যক্তির শরীয়ত সম্মত ওছিয়াত পালন না করা।

৫২. কোন মুসলমানকে ধােকা দেয়া।

৫৩. গুপ্তচরবৃত্তি করা, অর্থাৎ, মুসলমান সমাজের এবং মুসলমান রাষ্ট্রের গুপ্ত ভেদ ও দুর্বল পয়েন্টের কথা অন্য সমাজের লােকের কাছে, অন্য রাষ্ট্রের কাছে প্রকাশ করা।

৫৪. কাউকে মেপে দিতে কম দেয়া এবং মেপে নিতে বেশী নেয়া।

৫৫. টাকা বা নােট জাল করা।

৫৬. ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত প্রহরায় ক্রুটি করা।

৫৭. দেশের জরুরী রসদ, খাদ্য বা হাতিয়ার চোরাচালান বা পাচার করা।

৫৮. রাস্তা-ঘাটে, ছায়াদার কিম্বা ফলদার বৃক্ষের নীচে মল-মূত্র ত্যাগ করা।

৫৯. বাড়ি-ঘর, আনাচ-কানাচ, থালা-বাসন, কাপড়-চোপড় নােংরা ও গন্ধ করে রাখা।

৬০. হায়েয বা নেফাছ অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করা।

৬১. মলদ্বারে স্ত্রী সহবাস করা।

৬২. যাকাত না দেয়া।

৬৩. ইচ্ছা পূর্বক ওয়াক্তিয়া নামায কাযা করা।

৬৪. জুমুআর নামায না পড়া।

৬৫. বিনা ওজরে রােযা ভাঙ্গা।

৬৬. রিয়া তথা লােক দেখানাের জন্য ইবাদত করা।

৬৭. জনগণের কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও দাম বাড়ানাের জন্য জীবিকা নির্বাহােপযােগী খাদ্য-দ্রব্য, জিনিসপত্র গােলাজাত করে রাখা।

৬৮. মানুষের কষ্ট হয় এমন খাদ্য-দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি দেখে খুশী হওয়া।

৬৯. ষাড় বা পাঠার দ্বারা গাভী বা ছাগী পাল দিতে না দেয়া। পাল দেয়ার জন্য বিনিময় গ্রহণ করা জায়েয নয়।

৭০. প্রতিবেশীকে (ভিন্ন জাতির হলেও) কষ্ট দেয়া।

৭১. পাড়া প্রতিবেশীর ঝী-বৌকে কু-নযরে দেখা।

৭২. মাল থাকা বা মাল উপার্জনের শক্তি থাকা সত্ত্বেও লােভের বশবর্তী হয়ে সওয়াল করা।

৭৩. জনগণ চায় না তা সত্ত্বেও তাদের নেতৃত্ব দেয়া।

৭৪. কারণ ছাড়াই স্ত্রীর স্বামী সহবাসে অসম্মত হওয়া।

৭৫. পরের দোষ দেখে বেড়ানাে।

৭৬. কারও জান, মাল বা ইজ্জতের হানি করা।

৭৭. নিজের প্রশংসা করা।

৭৮. বিনা দলীলে কারও প্রতি বদগােমানী করা।

৭৯. ইলমে দ্বীনকে তুচ্ছ মনে করে ইমে দ্বীন হাছিল না করা বা হাছিল করে আমল না করা।

৮০. এমন কথা যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেননি বা এমন কোন কাজ যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেননি- সে সম্পর্কে এরূপ বলা যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন বা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছেন।

৮১. হজ্জ ফরয হওয়া সত্ত্বেও হজ্জ করা ব্যতীত মৃত্যুবরণ করা। তবে মৃত্যুর সময় হজ্জের ওছিয়াত বা ব্যবস্থা সম্পন্ন করে গেলে পাপমুক্ত হতে পারবে।

৮২. কোন সাহাবীকে মন্দ বলা, সাহাবীদের সমালােচনা করা।

৮৩. হযরত আলী (রাঃ)-কে হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) থেকে শ্রেষ্ঠ বলা।

৮৪. কোন নারীকে তার স্বামীর কাছে গমন ও স্বামীর হক আদায়ে বাধা দেয়া।

৮৫. কোন অঙ্ধকে ভুল পথ দেখিয়ে দেয়া।

৮৬. পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করা ও অশান্তি ছড়ানাে, ফ্যাসাদ করা।

৮৭. কাউকে কোন পাপ কাজে উদ্বুদ্ধ করা ও পাপ কাজে সহযােগিতা করা।

৮৮. কোন গােনাহে সগীরার উপর হটকারিতা করা।

৮৯. পেশাবের ছিটা থেকে সাবধান সতর্ক না থাকা।

৯০. কোন দান-সদকা করে বা হাদিয়া-উপটৌকন দিয়ে খোঁটা দেয়া।

৯১. অনুগ্রহকারীর না-শুকরী করা।

৯২. কোন মুসলমান ভাইকে ছুরি, চাকু, তলােয়ার ইত্যাদি লৌহ অস্ত্র দ্বারা ইশারা করে ভয় দেখানাে।

৯৩. দাবা ও ছক্কা পাঞ্জা খেলা। আরও কতিপয় খেলা রয়েছে যা হারাম ও কবীরা গােনাহ।

৯৪. বিনা জরুরতে লােকের সামনে সতর খােলা।

৯৫. মেহমানের খাতির ও আদর যত্ন না করা।

৯৬. হাসি-ঠাট্টা করে কাউকে অপমানিত করা।

৯৭. স্বজন প্রীতি করা।

৯৮. অন্যায় বিচার করা।

৯৯. নিজে ইচ্ছা করে, দাবী করে পদপ্রার্থী হওয়া বা পদ গ্রহণ করা। তবে কোন ক্ষেত্রে যদি এমন হয় যে, তিনিই একমাত্র উক্ত পদের যােগ্য, উক্ত পদ গ্রহণ না করলে বৃহত্তর জনগােষ্ঠির স্বার্থ নষ্ট হবে, তাহলে সে ক্ষেত্রে পদ চাওয়া হলে তা ভিন্ন কথা।

১০০. ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদ্রোহিতা করা।

১০১. নিজের বিবি-বাচ্চার খবর-বার্তা না নিয়ে তাদেরকে নষ্ট হয়ে যেতে দেয়া।

১০২. খতনা না করা মহাপাপ।

১০৩. অসৎ ও অন্যায় কাজ দেখে পারতপক্ষে তাতে বাধা না দেয়া।

১০৪. জালেমের প্রশংসা বা তােষামোদ করা।

১০৫. অন্যায়ের সমর্থন করা।

১০৬.   আত্মহত্যা করা।

১০৭. স্বেচ্ছায় নিজের কোন অঙ্গ নষ্ট করা।

১০৮. স্ত্রী সহবাস করে গােসল না করা।

১০৯. প্রিয়জন বিয়ােগে সিনা পিটিয়ে বা চিৎতকার করে কাঁদা

১১০. স্ত্রী পুরুষের নাভীর নীচের পশম, বগলের পশম বর্ধিত করে রাখা।

১১১. উস্তাদ ও পীরের সঙ্গে বেয়াদবী করা, হাফেজ ও আলেমের অমর্যাদা করা, তাদের সাথে বেয়াদবী করা।

১১২. প্রাণীর ছবি তৈরি করা বা ব্যবহার করা।

১১৩. শুকরের গােস্ত খাওয়া।

১১৪. কোন হারাম দ্রব্য ভক্ষণ করা।

১১৫. ষাঢ়, কবুতর বা মােরগ ইত্যাদির লড়াই দেয়া।

১১৬. কুরআন শরীফ পড়ে ভুলে যাওয়া। (কোন রােগের কারণে হলে তা ভিন্ন কথা) কেউ কেউ বলেছেন ভুলে যাওয়ার অর্থ এমন হয়ে যাওয়া যে, দেখেও আর পড়তে পারে না।

১১৭. কোন জীবকে 'আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে হত্যা করা কবীরা গােনাহ। তবে সাপ, বিচ্ছু, ভীমরুল ইত্যাদি কষ্টদায়ক জীব থেকে বাঁচার আর কোন উপায় না থাকলে ভিন্ন কথা।

১১৮. আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া।

১১৯. আল্লাহর আযাব থেকে নির্ভীক হওয়া।

১২০. মৃত প্রাণী খাঁওয়া।

১২১. হালাল জীবকে আল্লাহ্র নামে জবাই না করে অন্য কারও নামে জবাই করে বা অন্য কোন উপায়ে মেরে খাওয়া।

১২২. অপব্যয় করা ।

১২৩. বখীলী বা কৃপণতা করা।

১২৪. রাজকীয় ক্ষমতা হাতে থাকা সত্ত্বেও ইসলামী আইন সমর্থন না করে অনৈসলামি আইন সমর্থন করা।

১২৫. ইসলামী আইন হওয়া সত্ত্বেও ই সলামী আইন অমান্য করা বা রাষ্ট্রদ্রোহীতা করা।

১২৬. ছােট জাত, ছােট (পশাদার বলে বা জোলা, তেলি, কুমার, কামার, বান্দীর বাচ্চা ইও্যাদি বাণে কাউকে তুচ্ছ- তাচ্ছিল্য করা বা খোঁটা দেয়া।

১২৭. বিনা এজাযতে কারও বাড়ির ভিতরে বা ঘরের ভেতরে প্রবেশ করা।

১২৮. লুকিয়ে কারও কথা শােনা।

১২৯. ছুরত শেকেলের কারণে বা গরীব হওয়ার কারণে কোন মুসলমানকে টিটকারি বা ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা।

১৩০. কোন মুসলমানকে কাফের বলা।

১৩১. কোন মুসলমানের সাথে উপহাস করা।

১৩২. একাধিক স্ত্রী থাকলে তাদের মধ্যে সমতা রক্ষা না করা।

১৩৩. কোন খাদ্যকে মন্দ বলা। (তবে রান্নার ক্রুটি বর্ণনা করা হলে তা খাদ্যকে মন্দ বলার অন্তর্ভুক্ত নয়।)

১৩৪. দুনিয়ার মহব্বত। অর্থাৎ, দ্বীনের মােকাবেলায় দুনিয়াকে প্রাধান্য দেয়া।

১৩৫. দাড়ি বিহীন বালকের প্রতি খাহেশাতের নজরে তাকানাে।

১৩৬. গায়রে মাহরাম স্ত্রী লােকের নিকট একা একা বসা।

১৩৭. কাফেরদের রীতিনীতি পছন্দ করা।

কবীরা গুনাহ থেকে বাঁচার উপায়ঃ

আল্লাহর রহমত ছাড়া অন্যায়-অপরাধ তথা গোনাহের কাজ থেকে বাঁচার কোনো উপায় নেই। কারণ খালেছ বান্দা হওয়ার জন্য যেমন আল্লাহর একান্ত রহমত প্রয়োজন, ঠিক তেমনি গোনাহ তথা পাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকতে আল্লাহর রহমতের বিকল্প নেই। নিচে কয়েকটি কাজ বর্ণনা করা হলো গুনাহ থেকে বাচার উপায় হিসেবে-

★ তওবা ছাড়া কবীরা গুনাহ মাফ হয় না। তাই যদি কবীরা গুনাহ হয়েই যায় তবে তওবা করে নিতে হবে। আর ভবিষ্যতে এমন কাজ না করার জন্য প্রতিজ্ঞা করতে হবে।

★ কবীরা গুনাহ থেকে বেচে থাকার জন্য নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা অত্যন্ত জরুরি। 

★ পাপ কাজ থেকে বেচে থাকার জন্য গুনাহের আসবাবপত্র থেকে দুরে থাকতে হবে। কেননা গুনাহের আসবাবপত্র বা পরিবেশ মানুষকে গুনাহের কাজের প্রতি উদ্ভুদ্ধ করে। 

★ কথায় আছে সৎ সঙ্গে সর্গ বাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। অর্থাৎ, মানুষের আচার-আচরণ অনেকাংশে তার সঙ্গীর উপর নির্ভর করে।  যদি আমরা খারাপ মানুষদের সাথে সর্বদা নিজেদের পরিচালনা করি তবে তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য দ্বারা নিজেরাও একসময় প্রভাবিত হবো। তাই সঙ্গী নির্বাচনে সচেতন হতে হবে। আর তাই বন্ধু নির্বাচনে ইসলামের বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। এ সম্পর্কে আরো জানতে পড়ুন- বন্ধু নির্বাচনে সচেতনতা : নববী যুগের একটি ঘটনা

★ আলেমদের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখতে হবে। মাঝে মাঝে তাদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করে নিজের প্রাত্যহিক জীবন ঘনিষ্ঠ মাসায়েল জিজ্ঞেস জীবন পরিচালনা করলে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা অনেক সহজ হবে। 

★ সর্বশেষ আল্লাহ তাআলার কাছে খুব দোয়া-কান্নাকাটি করতে হবে যেন, তিনি আমাদেরকে সর্বপ্রকার গুনাহ থেকে বেচে থাকার শক্তি দান করেন। পাপ কাজ থেকে হিফাজত থাকার দোয়াটি তুলে ধরা হলো-

উচ্চারণ : আল−-হুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন মুংকারা-তিল আখলা-ক্বি ওয়াল আ’মা-লি ওয়াল আহওয়া-ই।

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে মন্দ আখলাক্ব বা চরিত্র ও আমল এবং মন্দ কামনা-বাসনা থেকে পানাহ চাই।’ (তিরমিজি, রিয়াদুস ছালিহীন) 


তথ্যসূত্রঃ আহকামে জিন্দেগী/মাওলানা মুহাম্মদ হেমায়েত উদ্দিন/কবীরা গুনাহের তালিকা/
ট্যাগঃ কবিরা গুনাহর তালিকা/ কবিরা গুনাহ থেকে মাফ পাওয়ার উপায়/ ৭০ টি কবিরা গুনাহ/কবিরা গুনাহ কত প্রকার

Post a Comment

أحدث أقدم