নাপাকীর বর্ণনা : নাজাসাত কি ও কত প্রকার

নাপাকি বা নাজাসাত কি ও কত প্রকার। কোন প্রকার নাজাসাত সহ ইবাদত বৈধ নয়

পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ৷ ইবাদত করার আগে পবিত্রতা অর্জন করা ফরয। তাই ইসলাম সর্বদা পবিত্র থাকার নির্দেশ দিয়েছে৷ শরীরের সঙ্গে সঙ্গে পরিধানের কাপড়ও পাক-পবিত্র হতে হবে। কেননা কাপড়ে নাপাক বস্তু যদি লেগে যায়, তবে আপনার ইবাদত গ্রহণযোগ্য হবে না। কাপড়ে নাপাক বস্তু লাগাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে কাপড় ভালোভাবে পাক-পবিত্র করে নিতে হবে।নাপাকির বর্ণনা সম্পর্কে বিস্তারিত থাকছে আমাদের এ পর্বে৷ নাজাসাত কি? কোন নাজাসাত লাগলেও নামায পড়া যায় ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর চলুন জেনে নেওয়া যাক  -


নাপাকির প্রকারভেদঃ

যে সমস্ত নাপাকী চক্ষু দ্বারা দেখা যায় এবং যা থেকে শরীর, কাপড় ও খাদ্যবস্তু পাক রাখা উচিত তা দুই ধরনেরঃ


(১) নাজাসাতে গলীজা (যে নাপাকীর হুকুম শক্ত)

(২) নাজাসাতে খফীফা (যার হুকুম কিছুটা হালকা)


নাজাসাত এর বিস্তারিত আলোচনাঃ

মানুষের মল মূত্র, মানুষ ও প্রাণীর রক্ত, বীর্য, মদ, সব ধরনের পশুর পায়খানা, সব ধরনের হারাম পশুর পেশাব এবং পাখীর মধ্যে শুধু হাঁস ও মুরগির বিষ্টা হল নাজাছাতে গলীজা বা শক্ত নাপাকী।


* গরু, মহিষ, বকরী ইত্যাদি সকল হালাল পশুর পেশাব, কাক চিল ইত্যাদি সকল হারাম পাখির বিষ্ঠা এবং ঘােড়ার পেশাব হল নাজাছাতে খফীফা।


* হাঁস, মুরগি ও পানকৌড়ি ব্যতীত অন্যান্য হালাল পাখির বিষ্ঠা (যেমন কবুতর, চড়ই, শালিক ইত্যাদির বিষ্ঠা) এবং বাদুর ও চামচিকার পেশাব পায়খানা পাক। এমনিভাবে মশা, মাছি, ছারপােকা এবং মাছের রক্তও পাক।


* নাজাছাতে গলীজার মধ্যে যেগুলাে তরল, ফেমন রক্ত পেশাব ইত্যাদি, তা এক দেরহাম (গােলকৃত ভাবে একটা কাঁচা টাকা অর্থাৎ, হাতের তালুর নীচ স্থান পরিমাণের সমান) পর্যন্ত শরীর বা কাপড়ে লাগলে মাফ আছে অর্থাৎ, তা না ধুয়ে নামায পড়লে নামায হয়ে যাবে, তবে বিনা ওজরে স্বেচ্ছায় এরূপ করা মাকরূহ। আর এক দেরহাম পরিমাণের চেয়ে বেশী হলে তা মাফ নয় অর্থাৎ, তা পাক না করে নামায পড়া জায়েয নয়।


* নাজাছাতে গলীজার মধ্যে যেগুলাে গাঢ় যেমন গােবর, পায়খানা ইত্যাদি তা এক সিকি পরিমাণ পর্যন্ত (অর্থাৎ, ৪.৮৬ গ্রাম পর্যন্ত) কাপড় বা শরীরে লাগলে মাফ কিন্তু তার চেয়ে অধিক পরিমাণ লাগলে মাফ নয়। মাফ-এর অর্থ পূর্বে বয়ান করা হয়েছে।


* নাজাছাতে খফীফা শরীর বা কাপড়ে লাগলে যে অঙ্গে লেগেছে তার চার ভাগের এক ভাগের কম হলে মাফ, আর পূর্ণ চার ভাগের এক ভাগ বা আরও বেশী হলে মাফ নয়। জামার হাতা, কলি, কাপড়ের আঁচল, পায়জামার দুই মুহরীর প্রত্যেকটা ভিন্ন ভিন্ন অঙ্গ (অংশ) বলে গণ্য হবে।


* নাজাছাত কম হােক বা বেশী হােক পানিতে পড়লে সেই পানি নাজাছাত বা নাপাক হয়ে যাবে- নাজাছাতে গলীজা পড়লে পানিও নাজাছাতে গলীজা হয়ে যাবে এবং নাজাছাতে খফীফা পড়লে নাজাছাতে খফীফা হবে। তবে প্রবাহিত পানিতে বা ১০০ বর্গহাত কিংবা তার চেয়ে বড় কোন কুয়া হাউজ ইত্যাদিতে নাপাকী পড়লে তা নাপাক হবে না। তবে নাপাকী পড়ার কারণে তার রং স্বাদ ও গন্ধ পরিবর্তিত হয়ে গেলে নাপাক হয়ে যাবে। যে পানি দ্বারা কোন নাপাক জিনিস ধৌত করা হয়, সে পানি নাপাক হয়ে যায়। মৃতকে যে পানি দ্বারা গােসল দেয়া হয় সে পানিও নাপাক।


* রাস্তা-ঘাটে বা বাজারে যে পানি বা কাদার ছিটা কাপড়ে কিংবা শরীরে লাগে তাতে স্পষ্টতঃ কোন নাপাক জিনিস দেখা গেলে তা নাপাক আর স্পষ্টতঃ কোন নাপাক জিনিস দেখা না গেলে নাপাক নয়। এটাই ফতওয়া; তবে মুত্তাকী লােকদের জন্য- যাদের হাটে বাজারে যাওয়ার অভ্যাস নয়, যারা সাধারণতঃ খুব পাক ছাফ থাকেন- তাদের শরীরে বা কাপড়ে এই পানি কাদা লাগলে তাতে কোন নাপাক জিনিস দেখা না গেলেও ধুয়ে নেয়া উচিৎ।


* গাভী, বকরী দহন করার সময় যদি দুই একটি লেদা বা সামান্য গােবর দুধের মধ্যে পড়ে এবং সাথে সাথে তা বের করে ফেলা হয় তাহলে তা মাফ। কিন্তু যদি লেদা বা গােবর দুধের সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে যায়, তাহলে সম্পূর্ণ দুধ নাপাক হয়ে যাবে, তা খাওয়া জায়েয হবে না।


* উৎপন্ন ফসল মাড়াই করার সময় গরু অথবা অন্য কোন পশু তার উপর পেশাব করলে তা নাপাক হবে না। তবে মাড়াবার সময় ব্যতীত অন্য সময় পেশাব করলে নাপাক হয়ে যাবে।


* কুকুর, শুকর, বানর এবং বাঘ, চিতাবাঘ প্রভৃতি হিংস্র প্রাণীর ঝুটা নাপাক। (খাদ্য বা পানীয় বস্তুতে মুখ লাগিয়ে ত্যাগ করলে তাকে ঝুটা বা উচ্ছিষ্ট বলা হয়)।


* বিড়ালের ঝুটা পাক, তবে মাকরূহ। কোন পানিতে বিড়াল মুখ দিয়ে থাকলে তা দ্বারা উয়ু করবে না। অবশ্য যদি অন্য পানি না পাওয়া যায় তবে ঐ পানি দ্বারাই উযু করবে। আর দুধ বা তরকারী ইত্যাদি খাদ্য খাবারের মধ্যে মুখ দিয়ে থাকলে যদি মালিক অবস্থাপন্ন হয় তাহলে তা খাবে না- খাওয়া মাকরূহ হবে। যদি গরীব হয় তবে তার জন্য তা খাওয়া মাকরুহ নয়। তবে বিড়াল যদি সদ্য ইঁদুর ধরে এসে তৎক্ষণাৎ কোন পানি বা খাদ্য খাবারে মুখ দেয় তবে তা নাপাক হয়ে যাবে। আর যদি কিছুক্ষণ দেরী করে নিজের মুখ চেটে চুষে পরিষ্কার করে তারপর মুখ দেয় তখন নাপাক হবে না- এখন পূর্বের মাসআলার ন্যায় মাকরূহ হবে।


যে সব প্রাণী ঘরে থাকে যেমন সাপ, বিচ্ছু, ইদুর, তেলাপােকা, টিকটিকি এবং মুরগি- যে গুলাে সর্বত্র ছাড়া থাকে- এদের ঝুটা মাকরূহতানযীহী। ইঁদুর যদি রুটির কিছু অংশ খেয়ে থাকে সেদিক দিয়ে কিছুটা ছিড়ে ফেলে অবশিষ্ট অংশ খাবে।


* হালাল পশু ও হালাল পাখীর ঝুটা পাক। ঘােড়ার ঝুটাও পাক। যে কোন রকম পােশা পাখী যদি মরা না খায় এবং তার ঠোটে কোন রকম নাপাকী থাকার সন্দেহ না থাকে তবে তাদের ঝুটাও পাক ।


* হালাল পশু ও হালাল জানােয়ারের ঝুটা পাক। তাদের ঘামও পাক । যাদের ঝুটা মাকরূহ তাদের ঘামও মাকরূহ।


* মুসলমান অমুসলমান সব লােকের ঝুটা পাক, তবে কোন নাপাক বস্তু তার মুখে থাকা অবস্থায় পানি উচ্ছিষ্ট করলে ঐ পানি নাপাক হয়ে যাবে। জানা অবস্থায় বে-গানা পুরুষের ঝুটা খাদ্য ও পানি নারীর জন্য খাওয়া মাকরূহ। অনুরূপ বে-গানা নারীর ঝুটাও পুরুষের জন্য মাকরূহ। অবশ্য না জানা অবস্থায় খেয়ে ফেললে মাকরূহ হবে না।


তথ্যসূত্রঃ

১. আহকামে জিন্দেগী/মাওলানা মুহাম্মদ হেমায়েত উদ্দিন/ইবাদত/নাপাকীর বর্ণনা 

ট্যাগঃ নাজাসাত কি ও কত প্রকার। নাপাকি কত প্রকার ও কি কি। কোন নাজাসাত লাগলে নামাজ বৈধ আর কোন নাজাসাত লাগলে নামাজ বৈধ বা জায়েজ হবে না। 

Previous Post Next Post