রহমাতুল্লিল আলামীন : কেমন ছিল প্রিয় নবীর বিশ্বস্ততা

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন উম্মতে ইসলামিয়া বরং সমগ্র মানব জাতির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা। তাঁর শারীরিক সৌন্দ্যর্য, মানসিক পূর্ণতা, প্রশংসনীয় চরিত্র, চমৎকার ব্যক্তিত্ব, পরিশীলিত অভ্যাস ও কর্মতৎপরতা দেখে আপনা থেকেই তাঁকে ভালাবাসার ইচ্ছা জাগতাে। তাঁর জন্যে মন উজাড় করে দিতে ইচ্ছা হতাে। মানুষ যেমন গুণ বৈশিষ্ট মনে প্রাণে পছন্দ করে, সেসব তার মধ্যে এতাে বেশী ছিলাে যে, এতােগুলাে গুণবৈশিষ্ট্য একত্রে অন্য কাউকেই দেয়া হয়নি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মর্যাদা, শ্রেষ্ঠত্ব, আভিজাত্য, ও চারিত্রিক সৌন্দর্যে সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ক্ষমাশীলতা, আমানতদারি, সততা সত্যবাদিতা, সহিষ্ণুতা ইত্যাদি গুণ এতাে বেশী ছিলাে যে, তাঁর স্বাতন্ত্র্য ও শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে শত্রুরাও কখনাে সন্দেহ পােষণ করেনি। তিনি যে কথা মুখে একবার উচ্চারণ করতেন তাঁর শত্রুরাও জানতাে যে, সে কথা সত্য এবং তা বাস্তবায়িত হবেই হবে। বিভিন্ন ঘটনা থেকে একথার প্রমাণও পাওয়া যায়।

একবার কোরায়শদের তিনজন লােক একত্রিত হয়েছিলাে, তারা প্রত্যেকেই গােপনে কোরআন তেলাওয়াত শুনেছিলাে। কিন্তু কারাে কাছে তারা সে কথা প্রকাশ করেনি। এদের মধ্যে আবু জেহেলও ছিলাে একজন। অন্য দু'জনের একজন আবু জেহেলেকে জিজ্ঞাসা করলাে যে, মােহাম্মদের কাছে যা কিছু শুনেছাে, বলতাে, সে সম্পর্কে তােমার মতামত কি? আবু জেহেল বললো, আমি কি শুনেছি? আসলে কথা হচ্ছে যে, আমরা এবং বনু আবদে মান্নাফ আভিজাত্য ও মর্যাদার ব্যাপারে একে অন্যের সাথে মােকাবেলা করতাম। তারা গরীবদের পানাহার করালে, আমরাও তা করতাম, তারা দান খয়রাত করলে আমরাও করতাম। ওরা এবং আমরা ছিলাম পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। আমরা ছিলাম রেসের ঘােড়ার দুই প্রতিযােগীর মতাে। এমনি অবস্থায় আবদে মান্নাফ বলতে শুরু করলাে যে, আমাদের মধ্যে একজন নবী আছেন, তার কাছে আকাশ থেকে ওহী আসে। বলতাে আমরা কিভাবে ওরকম ওহী পেতে পারি? খােদার কসম, আমি ঐ ব্যক্তির ওপর কখনাে বিশ্বাস স্থাপন করবাে না এবং কখনাে তাকে সত্যবাদী বলে স্বীকৃতি দেবাে না। আবু জেহেল বলতাে, হে মােহাম্মদ আমি তােমাকে মিথ্যাবাদী বলি না, কিন্তু তুমি যা কিছু নিয়ে এসেছ সেটাকে মিথ্যা বলি।

একথার প্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেন, "ওরা আপনাকে মিথ্যাবাদী বলে না। কিন্তু ওসব যালেম আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করে।"
কেমন ছিলো প্রিয় নবীর বিশ্বস্ততা
কেমন ছিলো প্রিয় নবীর বিশ্বস্ততা
একবার পৌত্তলিকরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে একদিন গালাগাল করছিলাে। পরপর তিনবার এরূপ করলাে। তৃতীয়বার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থমকে দাঁড়ায় বললেন, হে কোরায়শদল, আমি তােমাদের কাছে যবাইর পশু নিয়ে এসেছি। একথা শােনার সাথে সাথে কাফেররা আল্লাহর রসূলকে ভালাে ভালাে কথা বলে খুশী করার চেষ্টা করতে লাগলাে।

একবার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেজদা দেয়ার সময় কয়েকজন কাফের তাঁর ঘাড়ের ওপর উটের নাড়িভুড়ি চাপিয়ে দিয়েছিলাে। নামায শেষে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ধরনের কাজ যারা করেছে, তাদেরকে বদ দোয়া দিলেন। সেই বদ দোয়া শুনে কাফেরদের মুখের হাসি মিলিয়ে গেলাে, তারা গভীর চিন্তায় পড়ে গেলাে। কেননা তারা নিশ্চিতভাবে জানতাে যে, এবার আর তারা রেহাই পাবে না।


এমনই একটি ঘটনা ঘটল আবু লাহবের পুত্রের সাথে। একদিন আবু লাহাবের পুত্র ওতাইবা রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললাে, "ওয়াননাজমে ইযা হাওয়া এবং ছুম্মা দানা ফাতাদাল্লা"র সাথে আমি কুফর করছি। সূরা নাজম-এর এ দুটি আয়াতের অর্থ হচ্ছে, "শপথ নক্ষত্রের, যখন তা অস্তমিত হয়। অতপর, সে তার নিকটব্তী হলাে অতি নিকটবর্তী।"

এরপর ওতাইবা আল্লাহর রসূলের ওপর অত্যাচার শুরু করলাে। তাঁর জামা ছিড়ে দিলাে এবং পবিত্র চেহারা লক্ষ্য করে থুথু নিক্ষেপ করলাে। কিন্তু থুথু তাঁর চেহারায় পড়েনি। সে সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বদদোয়া দিলেন। তিনি বলেছিলেন, হে আল্লাহ তায়ালা, ওর ওপর তােমার কুকুরসমূহের মধ্যে থেকে একটি কুকুর লেলিয়ে দাও।' রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ বদদোয়া কবুল হয়েছিলাে। ওতবা একবার কোরায়শ বংশের কয়েকজন লােকের সাথে এক সফরে সিরিয়া যাচ্ছিলাে। যারকা নামক জায়গায় তারা একদা রাত্রি যাপনের জন্যে তাঁবু স্থাপন করলাে। সে সময় একটি বাঘকে ঘােরাফেরা করতে দেখা গেলাে। ওতাইবা বাঘ দেখে বললাে, হায়রে, আমার ধ্বংস অনিবার্য খােদার কসম, এই বাঘ আমাকে খাবে। মােহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার ওপর বদদোয়া করেছেন। দেখাে আমি সিরিয়ায় রয়েছি, অথচ তিনি মক্কায় বসে আমাকে মেরে ফেলছেন। সতর্কতা হিসাবে সফরসঙ্গীরা তখন ওতাইবাকে নিজেদের মাঝখানে রেখে শয়ন করলাে। রাত্রিকালে বাঘ এলাে, সবাইকে ডিঙ্গিয়ে ওতাইবার কাছে গেলাে এবং তার ঘাড় মটকালাে। 

এমন হাজারো ঘটনার দ্বারা এটাই প্রমানিত হয় যে তখনকার মুশরিকরাও নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসালাম কে সত্য বলেই মানতেন৷ এটাও জানতেন তার দাবি সত্য। তবুও তারা তাদের পূর্বপুরুষদের ধর্মকে পরিত্যাগ করেনি।  

Previous Post Next Post