সাঈদ ইবনে আমের আল-জুমাহী : এক দুনিয়া বিরাগী গভর্নর

সাঈদ ইবনে আমের আল-জুমাহী : এক দুনিয়া বিরাগী গভর্নর 

মক্কার মুশরিকরা যেদিন খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে মক্কার অদূরে তানিম প্রান্তরে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল সেদিন অনেক মুশরিক সেখানে জড়ো হয়েছিল ওই দৃশ্য উপভোগ করতে। সাঈদ ইবনে আমের রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন ঐ সকল লোকদের একজন যারা কুরাইশদের ডাকে সাড়া দিয়ে তানঈম প্রান্তরে খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু এর মৃত্যুর দৃশ্য উপভোগ করতে উপস্থিত হয়েছিল। 


খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন হুজুর (সাঃ) এর অত্যন্ত র্প্রিয় একজন সাহাবী। মক্কার মুশরিকরা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু ও তাঁর সাহাবীদের বন্দি করে মক্কায় নিয়ে আসে। উহুদ প্রান্তরে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে মক্কার মুশরিকরা তাকে তানিম প্রান্তরে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার জন্য নিয়ে আসে। সেদিন তানিম প্রান্তরে অনেক মুশরিকরা জড়ো হয়েছিল মৃত্যুদণ্ডের দৃশ্য উপভোগ করতে যেন তাদের অন্তর জ্বালা কিছুটা নিভাতে পারে। তাদেরই একজন সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী রাদিয়াল্লাহু আনহু। 


খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে তানিম প্রান্তরে নিয়ে আসা হল। একটু পরেই তাকে শূলীতে চড়ানো হবে। উৎসুক জনতা তাকিয়ে আছে খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু এর দিকে। সাঈদ ইবনে আমের লক্ষ্য করলেন খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু এর চেহারা চিন্তার কোন ছাপ নেই। যেন তিনি জানেনই না এখন তার সাথে কি ঘটতে চলেছে। এমন সময় খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু মুশরিকদের কাছে দু'রাকাত নামায আদায়ের জন্য অনুরোধ করলেন। অনুমতি পেয়ে খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন। অতঃপর নামাজ শেষ করে কুরাইশ নেতাদের উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমরা যদি এই ধারণা না করতে যে আমি মৃত্যুর ভয়ে নামাজকে দীর্ঘ করছি তবে আমি আমার নামাজকে আরো দীর্ঘায়িত করতাম। অতঃপর সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী লক্ষ করলেন মক্কার মুশরিকরা খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু এর একটি একটি অঙ্গ কেটে নিচ্ছে।  এই কঠিন মুহূর্তেও খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু অত্যন্ত শান্ত ছিলেন। তখন মুশরিকরা বলল, তুমি কি চাও, যে তোমার স্থানে মোহাম্মদ অবস্থান করুক আর তুমি নিরাপদে তোমার পরিবারের সাথে মিলিত হবে?


এমন কথা শোনা মাত্রই খুবাইব রাদিআল্লাহু আনহু এর মধ্যে পরিবর্তন ঘটে। সাঈদ ইবনে আমের লক্ষ্য করলেন খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু এর দেহে যেন প্রাণের সঞ্চার হলো। বজ্রকন্ঠে খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলে উঠলেন, মহান আল্লাহর কসম, আমি পরিবারের সাথে মিলিত হবো এবং দুনিয়ার সমস্ত সুখ স্বাচ্ছন্দ আমার সাথে থাকবে আর হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর পায়ে একটি কাঁটা ফুটবে এটাও আমি সহ্য করবো না।তানিম প্রান্তরের আকাশে বাতাসে আন্দোলিত হতে থাকলো তার ঈমানদীপ্ত উত্তর। 


বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল কুরাইশ নেতারা। সায়ীদ ইবনে আমের অবাক হয়ে ভাবছেন মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও আপন নেতার প্রতি একি সীমাহীন শ্রদ্ধা? একি অবিচল ভক্তি? মক্কার মুশরিকরা তাদের ইচ্ছেমতে খুবাইব রাদিআল্লাহু আনহুর উপর প্রতিশোধ নিলো। রবের নির্দেশে দুনিয়ার মায়া কাটিয়ে চলে গেলেন খুবাইব রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু।। 


কালের আবর্তে মক্কার লোকেরা খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু এর মৃত্যুর দৃশ্যটি ভুলে গেলেও সাঈদ ইবনে আমের তা  ভুলতে পারলেন না। সর্বদা তার স্মৃতিপটে সেই দৃশ্যটা ভেসে উঠে। কি সুন্দর ছিল তার(খুবাইব রাদিআল্লাহু আনহুর) নামায! সীমাহীন শ্রদ্ধাবোধ। ভাবছিলেন এমন নির্মমভাবে কি কাউকে হত্যা করা যায়? 


এই চিন্তা সাঈদ ইবনে আমের স্থির থাকতে দিত না। এক পর্যায়ে আল্লাহ তায়ালা সাঈদ ইবনে আমের এর অন্তরকে হেদায়েতের আলোয় আলোকিত করলেন। তিনি মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন। সাঈদ ইবনে আমের রাদিয়াল্লাহু আনহু সর্বদাই রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পাশে থাকতেন। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের সাথে খাইবার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং পরবর্তী সকল যুদ্ধে তিনি রাসুলের সাথে ছিলেন।

সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী
সাঈদ ইবনে আমেরঃ এক গরিব গভর্নর 

সাঈদ ইবনে আমের ছিলেন দুনিয়া বিরাগী এক বীর মুজাহিদ। আল্লাহভীরু  মুমিন। তিনি দুনিয়ার উপর সর্বদা আখেরাতকে প্রাধান্য দিতেন। সবাই সাঈদ ইবনে আমের রাদিয়াল্লাহু আনহু এর উপদেশ কে সম্মান দিতেন। 

ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর খেলাফতের সময় তিনি ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেন, হে উমর, তুমি তোমার জনসাধারণের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করবে, আর আল্লাহর ব্যাপারে কাউকেই ভয় করবে না। মনে রাখবে, তোমার কথা যেন তোমার কাজের বিপরীত না হয়। কেননা উত্তম কথা তো সেটাই যেটা কাজে পরিণত করা হয়। কাছের এবং দূরের সকল মুসলিমদের সমান অধিকার নিশ্চিত করবে। তাদের জন্য তাই পছন্দ করবে যা নিজের এবং পরিবারের জন্য পছন্দ করবে। তখন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে সাঈদ, এটা কে করতে পারবে?  তখন সাঈদ রাদিআল্লাহু আনহু বললেন, তুমি পারবে। তখন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি তোমাকে হিমসের গভর্নর নিযুক্ত করতে চাই। 


তখন সাঈদ রাদিআল্লাহু আনহু বললেন, হে উমর, তুমি আমাকে পরীক্ষায় ফেলো না। উমর রাদিআল্লাহু আনহু বললেন, এটা কেমন কথা? তোমরা আমার উপর সকল দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে নিজেরা দূরে সরে যাবে। অতঃপর তাকে হিমসের গভর্নর নিযুক্ত করে দেয়া হলো। সায়ীদ ইবনে আমের হিমস চলে গেলেন। 


কিছুদিন পর হিমস থেকে একটি প্রতিনিধিদল মদিনায় আসলো ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সাথে দেখা করার জন্য। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদেরকে হিমসের গরিব লোকদের একটি তালিকা করে দিতে বললেন। যাতে করে তাদের সাহায্য করা যায়। যখন তালিকাটি উমর রাদিআল্লাহু আনহু এর কাছে পৌঁছাল তখন তিনি তাদের চোখ বুলাচ্ছিলেন।  হঠাৎ তিনি সাঈদের নামটি দেখতে পেলেন। তিনি অবাক হয়ে জানতে চাইলেন, কে এই সাঈদ ইবনে আমের? 


তারা উত্তর দিল, ইনি আমাদের গভর্নর। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু জিজ্ঞেস করলেন তোমাদের আমিরও কি গরিব?


তারা উত্তর দিল এমনও দিন হয়, দিনের পর দিন তার চুলায় আগুন জ্বলে না। একথা শুনে উমর রাদিআল্লাহু আনহু কান্না ধরে রাখতে পারলেন না। তিনি তালিকাটি হাতে নিয়ে অঝোরে কাঁদতে লাগলেন। 


ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রতিনিধি দলটিকে ১০০০ দিরহাম এর একটি থলে দিয়ে বললেন, এটা তোমাদের আমির সায়ীদ ইবনে আমের কে দিবে যেন তিনি তার প্রয়োজনে খরচ করতে পারেন। 


হিমসের প্রতিনিধি দলটির সাঈদের বাড়িতে থলেটি নিয়ে উপস্থিত হল এবং বলল আমিরুল মুমিনিন আপনার কাছে এই থলিটি পাঠিয়েছেন, যেন আপনি আপনার প্রয়োজনে খরচ করতে পারেন। 


সাঈদ ইবনে আমের রাদিয়াল্লাহু আনহু থলিটি দেখে অবাক কন্ঠে উচ্চস্বরে বলে উঠলেন, ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। এটি শুনে সাঈদের স্ত্রী ছুটে আসলেন। তিনি জানতে চাইলেন, কি হয়েছে? আমিরুল মুমিনিন কি ইন্তেকাল করেছেন? সাঈদ ইবনে আমের  বললেন, না। সাঈদ ইবনে আমের এর স্ত্রী জানতে চাইলেন, তাহলে কি মুসলিম বাহিনী কোথাও পরাজিত হয়েছে? সাঈদ ইবনে আমের রাদিআল্লাহু আনহু বললেন, না।  আখেরাত ধ্বংসকারী দুনিয়া আমার ঘরে প্রবেশ করেছে।  অতঃপর তিনি তার স্ত্রীকে মুদ্রাগুলো দেখিয়ে গরীবদের মাঝে বন্টন করার ইচ্ছা পোষণ করলেন। তিনিও সন্তুষ্টচিত্তে তা গ্রহণ করলেন। সাঈদ ইবনে আমের ততক্ষণ পর্যন্ত অন্য কাজে নিজেকে নিয়োজিত করলেন না যতক্ষণ না পর্যন্ত মুদ্রাগুলো দান করে সম্পূর্ণরূপে শেষ হয়ে গিয়েছিল। 


একবার ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু জনসাধারণের অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য শামে গিয়েছিলেন। যখন তিনি হিমসে প্রবেশ করলেন তখন সেখানের অধিবাসীরা তাদের গভর্নরের প্রতি কয়েকটি অভিযোগ আনল। অভিযোগগুলো একটি চেয়ে আরেকটি গুরুতর ছিল। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু অভিযোগগুলো নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়লেন। কারণ ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু সাঈদ ইবনে আমের কে একজন ভাল মানুষ হিসেবে চিনতেন আর তার ধারণা ভুল হতে পারে না। 


তিনি হিমসের গভর্নর সাঈদ ইবনে আমের রাযিয়াল্লাহু আনহু কে অভিযোগকারীদের সাথে একত্রিত করলেন এবং তাদেরকে একটি একটি অভিযোগ উত্থাপন করতে বললেন। 


অভিযোগকারীদের প্রথম অভিযোগ ছিল  এই যে, আমাদের গভর্নর সকালে দেড়ি করে ঘর থেকে বের হন। আমিরুল মুমিনিন উমর রাদিআল্লাহু আনহু তখন বললেন হে সাঈদ এই ব্যাপারে তোমার বক্তব্য কি? তখন সাঈদ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন, আমার ঘরে কোন চাকর নেই তাই সকালে আমি আমার স্ত্রীকে কাজে সহায়তা করি এবং নিজেই রুটি তৈরি করে খাওয়া সম্পন্ন করে ঘর থেকে রাষ্ট্রীয় কাজের জন্য বের হই।


তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন তোমাদের দ্বিতীয় অভিযোগটি কি? তারা বলল, তিনি রাতের বেলা আমাদের ডাকে সাড়া দেন না। উমর রাদিআল্লাহু আনহু সাঈদ ইবনে আমের কে বললেন, এর কি উত্তর তোমার কাছে আছে?


তখন সাঈদ রাদিআল্লাহু আনহু বললেন, এই বিষয়টি আমি কারো কাছে প্রকাশ করতে চাচ্ছিলাম না। আমি আমার রাত ও দিন কে দুই ভাগে ভাগ করে নিয়েছি। দিনের ভাগ রাষ্ট্রীয় কাজের জন্য আর রাতের ভাগ আমার আল্লাহ তায়ালার এবাদতের জন্যে রেখেছিলাম। 


ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন তোমাদের তৃতীয় অভিযোগটি কি? তারা বলল, তিনি প্রতি মাসে একবার ঘর থেকে বের হন না। সাঈদ রাদিআল্লাহু আনহু এর জবাবে বললেন হে আমীরুল মুমিনীন আমার গায়ের এই জামাটি ছাড়া আমার আর কোন কাপড় নেই। প্রতি মাসে আমি তা ধুয়ে দিয়ে শুকাতে দিয়ে ঘরে অপেক্ষা করি। দিন শেষে কাপড় শোকালে পরিধান করে ঘর থেকে বের হই।


এবার উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তোমাদের কি আর কোন অভিযোগ আছে? তারা বলল, আমাদের আমির মাঝেমাঝেই অজ্ঞান হয়ে যান। যার ফলে তিনি মজলিসে উপস্থিত হতে পারেন না। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, হে সাঈদ, এর কারণ কি?


সাঈদ রাদিআল্লাহু আনহু বললেন, আমি মুশরিক অবস্থায় খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু এর মৃত্যুর সেই বিভীষিকা দেখেছি। আল্লাহর কসম আমার যখন এই দৃশ্যটি মনে পড়ে আমি নিজেকে সামলে রাখতে পারি না। আমার ভয় হয়,  আমিতো ওই স্থানে উপস্থিত থেকেও আমার ভাইয়ের জন্য কিছু করতে পারিনি, এজন্য হয়তো আল্লাহ তাআলা আমাকে ক্ষমা করবেন না। এই সব ভাবতে ভাবতে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই, আমি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলি। 


এবার ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা আবেগজড়িত কণ্ঠে বলে উঠলেন  আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ তাআলা সাঈদ এর ব্যাপারে আমার ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করেননি। 


হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু মদিনায় এসে সাঈদ রাদিআল্লাহু আনহু এর কাছে এক হাজার দিরহামের একটি থলি পাঠালেন। থলিটি দেখে সাঈদ রাদিআল্লাহু আনহু স্ত্রী ভাবলেন এবার হয়তো তাদের অভাব দূর হবে। কিন্তু সাঈদ ইবনে আমের রাদিআল্লাহু আনহু বললেন, এগুলো দিয়ে আমরা আরো ভালো কিছু করতে পারি। উনার স্ত্রী জানতে চাইলেন। তখন তিনি বললেন, আমরা এগুলো আল্লাহ তা'আলাকে করজ দিবো যেন বিপদের দিনে কাজে আসে। তার স্ত্রী বললেন, উত্তম প্রস্তাব। এই বলে তারা সবগুলো দিরহাম কে কতগুলো ছোট ছোট ভাগ করে গরীবদের মাঝে বন্টন করে দিলেন। 

এই ছিল আমাদের পূর্বপুরুষদের আদর্শ। সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী রাদিয়াল্লাহু আনহু তার নিজের প্রয়োজনের উপর অন্যদেরকে প্রাধান্য দিতেন। তিনি দুনিয়ার বিনিময়ে আখিরাতকে ক্রয় করেছেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকেও তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করার তৌফিক দান করুন। 


Previous Post Next Post