জিহাদঃ মানবতার মুক্তির পথ!

জিহাদ প্রতিপত্তি ও সম্প্রসারণের হাতিয়ার নয় 

ইসলামে জিহাদের নিজস্ব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আছে। জিহাদ সর্বদা আপন লক্ষ্যেই স্থির থাকে। মানুষের সম্পদ কুক্ষিগত কিংবা মানুষকে দাস বানানাে জিহাদের লক্ষ্য নয়; বরং জিহাদ মানুষকে খােদার পথের সন্ধান দেয়, শােষণ ও নৈরাজ্য দূর করে। প্রাচীনকালে পারস্য ও বাইজান্টাইন শাসকরা মানুষের ওপর উৎপীড়ন চালাত। মানুষ তাদের গােলামে পরিণত হয়। ঠিক এমন সময় নবিজির আবির্ভাব ঘটে। দুনিয়ায় বিদ্যমান রীতির পরিবর্তন ঘটায়। মানুষের অধিকার ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেয়। মানুষকে অন্যের দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে বের করে আনে, স্বাধীনতা ও মুক্তির পথ দেখায়। আল্লাহর পথের সন্ধান দেয়। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে

"তােমাদের কী হলাে যে তােমরা আল্লাহর রাস্তায় এবং দুর্বলদের রক্ষায় জিহাদ করছ না?' সূরা নিসা : ৭৫"

রাসূল মক্কা বিজয় করলেন। বাইতুল্লায় প্রবেশ করে একের পর এক প্রতিমা ভাঙতে শুরু করেন। পৌত্তলিকতা মুখ থুবড় পড়ে মাটিতে গড়াগড়ি খায়। রাসূল (সাঃ)-এর ঘােষক উচ্চ কণ্ঠে ঘােষণা করে-'আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই!

ইসলামের ইতিহাস হচ্ছে শুভ্র, স্বচ্ছ ও নিষ্কলুষতার ইতিহাস; কোথাও কোনো কালিমা নেই। হ্যা, পরবর্তী যুগগুলােতে পার্থিব লােভ ও দম্ত দেখা যায়। তরে তা। অনেক কম। ইতিহাস তাে বিবেচনায় আনা হয় না; বরং জীবনাচারে, প্রাত্যহিক। লেনাদেনায় দ্বীনের মূল রূপ ফুটে ওঠে। বাস্তব জীবনে ইসলামের চর্চাই মূল ব্যাপার। তারপরও ইতিহাসকে এড়ানাে যায় না। ইসলামের বিজয়গাথার সােনলি অধ্যায়কে ভুলে থাকা যায় না। ইসলামের শত্রুরাই এ কথা স্বীকার করেছে। পাশ্চাত্যের লেখক এই মহাসত্যকে এড়াতে পারেনি; স্বীকার করে নিয়েছে।

এক ব্রিটিশ লেখক আরনল্ড তুইনবি বলছেন।

ইতিহাসের পাতায় আরবদের চেয়ে অধিক ন্যায়পরায়ণ ও দয়ালু কোনাে বিজেতার দেখা মেলে না।'

মক্কা বিজয় ছিল ইতিহাসের এক রােমাঞ্চকর অধ্যায়। কারণ, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহিসসালাম-এর হাতে হয়েছিল এই বিজয়। তিনি মানুষকে সঠিক পথের দিকে আহ্বান করেন, 

তাদের কাছে মূল ব্যাপার তুলে ধরেন। এই মহান বিজয় মানবতার ইতিহাসে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, স্বচ্ছ ও শুভ্র অধ্যায়। মানুষের অধিকার রক্ষায় এক অনন্য মাইলফলক; ন্যায়পরায়ণতা, সুবিচার ও সমান অধিকারের এক সমুজ্জল পর্ব।
জিহাদ কি?
জিহাদঃ মানবতার মুক্তি

অনেকেই ইসলাম ও ইসলামের ইতিহাস নিয়ে লিখেছেন। ইসলামের বিজয়গাথা ও সােনালি অধ্যায়গুলাের কথা বলেছেন। সবাই এই দ্বীনের বড়ােত্বের কথা স্বীকার করেছেন। মুসলমানদের অনুপম চরিত্র ও উন্নত মূল্যবোধের কথা-যা দিয়ে একের পর এক বিজয় অর্জিত হয়েছে, তা তুলে ধরেছেন। মুসলমানরা দেশ জয়ের আগে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। ইসলামের প্রথমদিকে যে জাতিগুলাে বিজিত হয়েছে, ইসলামের ছায়ায় আশ্রয় নিয়ে ঈমান কবুল করেছে তারাই আজ ইসলামের সেবক ও রক্ষক। ইসলামের তরেই তারা জীবন বাজি। রাখে। তারা ইসলামের বর্তমান হালচাল নিয়ে ভাবে। মুসলমানদের দুর্দশা তাদের উদ্বিগ্ন করে তােলে। তারা অতীতে যেমন ইসলামের গৌরবময় ইতিহাস রচনায় জান বাজি রেখেছে, তেমনি বর্তমান বিনির্মাণেও তৎপরতা দেখিয়েছে।

কারণ, ইসলাম তাদের সাথে বেইমানি করেনি, অন্যায়-অবিচার চালায়নি। অবৈধ হস্তক্ষেপ করে তাদের দেশ কেড়ে নেয়নি; বরং ইসলামের সৌন্দর্যে তারা অভিভূত হয়ে পড়েছিল। ইসলাম তাদের রক্ষকে পরিণত হয়।

বিজিত জাতিগুলাে ইসলাম ও মুসলমানদের কাছে যে নিরাপত্তা, ন্যায়পরায়ণতা ও অধিকার পেয়েছে, তা তাদের স্বজাতির শাসকের কাছে পায়নি। তাই তারা ইসলাম ও মুসলমানদের ভালােবেসে ফেলে। তাদের প্রভাব মেনে নেয়, শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে এবং বিজয়ী দ্বীনকে গ্রহণ করে। এই মহান আসমানি ধর্ম সত্য, সুবিচার, অনুপম চরিত্র এবং উন্নত মূল্যাবোধের মাধ্যমে তাদের হৃদয় জয় করে নিয়েছে। পরে দেশ জয় করেছে। আজ মুসলমানরা তাদের মূল সম্পদ চরিত্র, সততা ও নিষ্ঠা, সত্যবাদিতা ও বিশুদ্ধ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। মুসলমানদের কথায় ও কাজে কুরআনের ছাপ দেখা যায় না। সত্য ও ইনসাফের মূল ভাষ্য হারিয়ে ফেলেছে।

তথ্যসুত্রঃ 
১. মা'আল মুস্তফা/ড. সালমান আল আওদা/৭৭-৭৮

Post a Comment

أحدث أقدم