পবিত্রতা ইমানের অংশ। প্রত্যেক মুসলিমকে তাই সবর্দা পাক-পবিত্র থাকা জরুরি। আল্লাহ তাআলা হলেন পুত ও পবিত্র এ সত্তা৷ আর তাই তিনি পবিত্রতা পছন্দ করেন। ফেরেস্তারাও সর্বদা পবিত্র। অর্থাৎ পবিত্র থাকা ইসলামি জীবনব্যবস্থার এ গুরুত্বপূর্ণ ও অবিচ্ছেদ্য অংশ। নামায ও অন্যান্য ইবাদতের জন্য নিজেকে পবিত্র করে নিতে হয়। আর তাই আজকে আমরা পবিত্রতা নিয়ে আলোচনা করবো৷
তাহলে চলুন ধাপে ধাপে জেনে নেই কি কি কারণে গোসল ফরজ হয়, কি কি কারণে গোসল ফরজ হয় না। আর যদি গোসল ফরজ হয় তবে গোসলের ফরজসমুহ কি এবং কিভাবে আদায় করা যায়।
![]() |
গোসল ফরজ হওয়ার কারণ |
১. যৌন সম্ভোগ দ্বারা অথবা অন্য কান কারণে জোশের সাথে মনী (বীর্য) বের হলে।
২. স্বপ্ন দেখুক বা না দেখুক রাতে অথবা দিনে ঘুমন্ত অবস্থায় বীর্যপাত হলে। তবে শয়নের কাপড়ে বা শরীরে মনীর চিহ্ন না দেখা গেলে গােসল ফরয হয় না।
৩. স্বামীর লিঙ্গের শুধু অগ্রভাগ অর্থাৎ, খৎনার স্থানটুকু স্ত্রীর গুপ্তাংগে প্রবেশ করলে (যদিও কিছু বের না হয়)। যেমন সামনের রাস্তার এই হুকুম, তদ্রপ মহাপাপ হওয়া সত্ত্বেও যদি কেউ পেছনের রাস্তায় প্রবেশ করায় তবুও এই হুকুম।
৪. স্ত্রীলােকের হায়েয হওয়ার পর যখন রক্ত বন্ধ হয় তখন গােসল ফরয হয়।
৫. স্ত্রীলােকের নেফাসের রক্তস্রাব বন্ধ হলে পাক হওয়ার জন্য গােসল ফরয হয়।
যে সব কারণে গােসল ফরয হয় নাঃ
গোসল ফরজ হওয়ার কারণগুলো জানার সাথে সাথে আমাদের এও জানা জরুরি যে কি কি কারণে গোসল ফরজ হয় না। কারণ এ বিষয়ে জ্ঞান না থাকলে আমাদের অনেক সময় বিভ্রান্ত হতে হয। তাহলে চলুন জেনে নেই, কি কি কারণে গোসল ফরজ হয় না -
১. যদি কোন রােগের কারণে ধাতু পাতলা হয়ে বা কোন আঘাত খেয়ে বিনা উত্তেজনায় ধাতু নির্গত হয় তাতে গােসল ফরয হয় না।
২. স্বামী স্ত্রী শুধু লিঙ্গ স্পর্শ করে যদি ছেড়ে দেয়- কিছু মাত্র ভিতরে প্রবেশ না করায় এবং মনীও বের না হয়, তাতে গােসল ফরয হয় না।
৩. শুধু মযী বের হলে তাতে কেবল উয়ু ভঙ্গ হয় গােসল ফরয হয় না।
৪. ঘুম থেকে উঠাব পর যদি স্বপ্ন স্মরণ থাকে কিন্তু কাপড়ে বা শরীরে কোন কিছু দেখা না যায় তবে তাতে গােসল ফরয হয় না।
৫. এস্তেহাযার রক্তের কারণে গােসল ফরয হয় না।
গােসলের ফরয সমূহঃ
আমরা গোসল ফরজ হওয়ার কারণ গুলো সম্পর্কে জানলাম এবং এও জানলাম যে কি কি কারণে গোসল ফরজ হয় না। এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা আমাদের জানতে হবে তা হল গোসল ফরজ হলে কিভাবে পবিত্রতা অর্জন করা যায়। তাহলে চলুন জেনে নেই, গোসলের ফরজ কয়টি এবং গোসলের ফরজগুলো কি -
১. কুলি করা ফরয। রােযাদার না হলে গড়গড়া করা সুন্নাত এবং তিনবার এরূপ গড়গড়াসহ কুলি করা সুন্নাত। দাঁতের মধ্যে খাদ্যকণা আঁটকে থাকলে তা অপসারণ করবে।
২. নাকের নরম স্থান পর্যন্ত পানি পৌঁছানাে ফরয। নাকের মধ্যে শুকনাে ময়লা থাকলে তা-ও দূরীভূত করবে। তিনবার এরূপ পানি পৌঁছানাে সুন্নাত।
৩. সমস্ত শরীরে পানি পৌঁছানাে ফরয। মহিলাদের নাকের ও কানের ছিদ্রে অলংকার না থাকলে তার মধ্যেও পানি পৌঁছাতে হবে। অলংকার থাকলে নাড়াচাড়া দিয়ে ছিদ্রের ভিতরে পানি প্রবেশ করাবে। চুলের বেণী ও খােপা খুলে সমস্ত চুল ভিজাতে হবে। তবে কান গাম বা আঠালাে বস্তু দ্বারা মহিলাদের চুল বেণী বা খােপা করে বাঁধানাে থাকলে সে ক্ষেত্রে তা না খুলে গােড়ায় পনি পৌঁছাতে পারলেও চলবে। (বেহেশতী জেওর ; বাংলা)
* গােসলের স্থানে পানি জমা হয়-এমন স্থানে গােসল করলে গােসলের পরে অন্যত্র সরে গিয়ে পা ধােয়া সুন্নাত।
* সমস্ত শরীরে পানি পৌঁছানাের সুন্নাত তরীকা হল প্রথমে ভিজা হাত দ্বারা সমস্ত শরীর ভিজিয়ে নিবে। তারপর তিনবার মাথায় পানি ঢালবে। তারপর তিনবার ডান কাঁধে পানি ঢালবে। তারপর বাম কাধে তিনবার পানি ঢালবে; প্রতিবার পানি ঢেলে ভাল করে শরীর মর্দন করে পরিষ্কার করা সুন্নাত।
* গােসলের পর পানি মুছে ফেলার কিছু থাকলে তা দিয়ে শরীর মুছে ফেলবে।
* তারপর যথাসম্ভব দ্রুত কাপড় দ্বারা শরীর আবৃত করবে।
* গােসলখানা থেকে বের হওয়ার সময় যদি বাম পা দিয়ে প্রবেশ করে থাকে, তাহলে ডান পা দিয়ে বের হবে। বের হওয়ার পর উযুর শেষে যে সব দুআ পড়া মােস্তাহাব এখানেও সেগুলাে পড়বে।
* গােসলের পর কোন অঙ্গ ধােয়া হয়নি বা কোথাও শুকনাে রয়ে গেছে মনে হলে শুধু সেটা ধুয়ে নিলেই চলবে, পুরাে গােসল দোহরানাের প্রয়ােজন নেই।
কীওয়ার্ডঃ গোসলের ফরজ কয়টি, ফরজ গোসলের নিয়ম, গোসলের ফরজ সমুহ, ফরজ গোসলের সুন্নত কয়টি, ফরজ গোসলের ফরজ কয়টি ও কি কি, ওযু ও গোসলের ফরজ কয়টি ও কি কি, ওযু ও গোসলের ফরজ কয়টি, ফরজ গোসলের নিয়ম, ফরজ গোসলের দোয়া, ফরজ গোসলের নিয়ত, ফরজ গোসলের কারণসমূহ, ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম, ফরজ গোসলের কারণ।