যেসব কারণে রোজা না রাখার অনুমতি আছে : রোজার মাসায়েল (৩য় পর্ব)

সুবেহ সাদেক থেকে সূর্যান্ত পর্যন্ত নিয়ত সহকারে ইচ্ছাকৃতভাবে পান, আহার ও যৌন তৃপ্তি থেকে বিরত থাকাকে রােযা বলা হয়। প্রত্যেক আকেল (বােধ সম্পন্ন), বালেগ (বয়সপ্রাপ্ত) ও সুস্থ্য নর-নারীর উপর রমযানের রােযা রাখা ফরয। ছেলে মেয়ে দশ বৎসরের হয়ে গেলে তাদের দ্বারা (শাস্তি দিয়ে হলেও) রােযা রাখানাে কর্তব্য। এর পূর্বেও শক্তি হলে রােযা রাখার অভ্যাস করানাে উচিত।  রোজা পালন উপলেক্ষ আল্লাহ তাআলা বলেন, 

"হে মুমিন সকল! তোমাদের উপর রমজানের রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপরও ফরজ করা হয়েছিল। যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার। (সূরা বাকারা-১৮৩)"

রোজার মাসায়েলের ধারাবাহিক পর্বের আজকে থাকছে ৩য় পর্ব-

যেসব কারণে রোজা না রাখার অনুমতি আছে | Ramadan Picture Hd
Ramadan
যেসব কারণে রােযা না রাখার অনুমতি আছে

১। যদি কেউ শরীআত সম্মত সফরে থাকে তাহলে তার জন্য রােযা না রাখার অবকাশ রয়েছে কিন্তু পরে তাকে সেই রোজা কাযা করে নিতে হবে। কিন্তু সফরে যদি তেমন কোনো কষ্ট না হয় (যেমনটা বর্তমানের ক্ষেত্রে দেখা যায়) তেমন হলে রােযা রাখাই উত্তম! আর যদি কোন ব্যক্তি রােযা রাখার নিয়ত করার পর সফর শুরু করে তাহলে সে দিনের রােযা রাখা জরুরী।

২। গর্ভবতী বা দুগ্ধদায়িনী স্ত্রী লােক রােযা রাখলে যদি নিজের জীবনের ব্যাপারে বা সন্তানের জীবনের ব্যাপারে আশংকা বাধ করে বা রােযা রাখলে দুধ শুকিয়ে যাবে আর সন্তানের সমূহ কষ্ট হবে-এরূপ নিশ্চিত হলে তার জন্য তখন রােযা ছাড়া জায়েয, পরে কাযা করে নিতে হবে।

২। কোন রােগী ব্যক্তি রােযা রাখলে যদি তার রােগ বেড়ে যাওয়ার আশংকা হয় অথবা অন্য কোন নতুন রােগ দেখা দেয়ার আশংকা হয় অথবা রােগ মুক্তি বিলম্বিত হওয়ার আশংকা হয়, তাহলে রােযা ছেড়ে দেয়ার অনুমতি আছে। সুস্থ হওয়ার পর কাযা করে নিতে হবে। তবে অসুস্থ অবস্থায় রাযা ছাড়তে হলে কোন দ্বীনদার পরহেযগার চিকিৎসকের পরামর্শ থাকা শর্ত, কিংবা নিজের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের ভিত্তিতে হতে হবে, শুধু নিজের কাল্পনিক খেয়ালের বশীভূত হয়ে আশংকাবােধ করে রােযা ছাড়া দুরস্ত হবে না। তাহলে কাযা কাফ্ফারা উভয়টা ওয়াজিব হবে।

৩। রােগ মুক্তির পর যে দুর্বলতা থাকে তখন রােযা রাখলে যদি পুনরায় রােগাক্রান্ত হওয়ার প্রবল আশংকা হয় তাহলে তখন রোজাদার ব্যক্তির রোজা না রাখার অবকাশ রয়েছে কিন্তু পরবর্তীতে রোজা কাযা করে নিতে হবে।

৫। হায়েয নেফাস অবস্থায় রােজা ছেড়ে দিতে হয় পরবর্তীতে পবিত্র হওয়ার পর কাযা ছেড়ে দেয়া রোজা কাযা আদায় করতে হবে৷ 

কখন রােযা শুরুর পর ভেঙ্গে ফেলার অনুমতি আছে

১। যদি এমন কোন রােগ বা অবস্থা দেখা দেয় যে, ওষুধ-পত্র গ্রহণ না করলে জীবনের আশা ত্যাগ করতে হয়।

২।  যদি এমন পিপাসা বা ক্ষুধা লাগে যাতে প্রাণের আশংকা দেখা দেয়।

৩। গর্ভবতী স্ত্রীলােকের যদি এমন অবস্থা হয় যে, নিজের বা সন্তানের প্রাণ নাশের আশংকা হয়।

৪। বেইশ বা পাগল হয়ে গেলে। উল্লেখ্য যে, পরবর্তীতে সুস্থ হলে এসব অবস্থায় যে রাযা ছেড়ে দেয়া হবে তার কাযা করে নিতে হবে।

* কেউ যদি অন্যকে দিয়ে কাজ করাতে পারে বা জীবিকা অর্জনের জন্য অন্য কোন কাজ করতে পারে তা সত্ত্বও সে টাকার লােভে রােদে গিয়ে কাজ করল এবং এ কারণে অনুরূপ পিপাসায় আক্রান্ত হল কিংবা বিনা অপারগতায় আগুনের কাছে যাওয়ার কারণে পিপাসায় আক্রান্ত হল, তাহলে তার জন্যে রােযা ছাড়ার অনুমতি নেই।

রমযান মাসের সম্মান রক্ষায় করণীয়

* রমযান মাসে দিনের বেলায় লােকদের পানাহারের উদ্দেশ্যে হােটেল রেস্তোরা প্রভৃতি খাবার দোকান খােলা রাখা রমযানের অবমাননা বিধায় তা পাপ। অন্য ধর্মাবলম্বী বা মা'যুর ব্যক্তিদের খাতিরে খােলা রাখার অজুহাত গ্রহণযােগ্য নয়।

* কোন কারণ বশতঃ রােযা ভেঙ্গে গেলেও বাকী দিনটুকু পানাহার পরিত্যাগ করে রােযাদারের ন্যায় থাকা ওয়াজিব(বেহেশতী জেওর)। দুর্ভাগ্য বশতঃ কেউ যদি রােযা না রাখে তবুও অন্যের সামনে পানাহার করা বা প্রকাশ করা যে, আমি রােযা রাখিনি-এতে দ্বিগুণ পাপ হয়, প্রথম হল রােযা না রাখার পাপ, দ্বিতীয় হল গােনাহ প্রকাশ করার পাপ।

৫. রোজার মাসায়েল (৫ম পর্ব)

তথ্যসূত্রঃ
১. আহকামে জিন্দেগী/ইবাদত/রোজার মাসায়েল/
Previous Post Next Post