রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া : রোজার মাসায়েল (১ম পর্ব)

সুবেহ সাদেক থেকে সূর্যান্ত পর্যন্ত নিয়ত সহকারে ইচ্ছাকৃতভাবে পান, আহার ও যৌন তৃপ্তি থেকে বিরত থাকাকে রােযা বলা হয়। প্রত্যেক আকেল (বােধ সম্পন্ন), বালেগ (বয়সপ্রাপ্ত) ও সুস্থ্য নর-নারীর উপর রমযানের রােযা রাখা ফরয। ছেলে মেয়ে দশ বৎসরের হয়ে গেলে তাদের দ্বারা (শাস্তি দিয়ে হলেও) রােযা রাখানাে কর্তব্য। এর পূর্বেও শক্তি হলে রােযা রাখার অভ্যাস করানাে উচিত।  রোজা পালন উপলেক্ষ আল্লাহ তাআলা বলেন, 

"হে মুমিন সকল! তোমাদের উপর রমজানের রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপরও ফরজ করা হয়েছিল। যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার। (সূরা বাকারা-১৮৩)"

রোজার নিয়ত, ইফতারের দোয়া ও সাহরির মাসায়েল
রোজার নিয়ত, ইফতারের দোয়া ও সাহরির মাসায়েল

রােযার নিয়ত ও মাসায়েলঃ

রমযানের রােযার জন্য নিয়ত করা ফরয। নিয়ত ব্যতীত সারাদিন পানাহার ও যৌনতৃপ্তি থেকে বিরত থাকলেও রােযা হবে না। মুখে নিয়ত করা জরূরী নয়। অন্তরে নিয়ত করলেই যথেষ্ট হবে, তবে মুখে নিয়ত করা উত্তম। মুখে নিয়ত করলেও আরবীতে হওয়া জরুরী নয়- যে কোন ভাষায় নিয়ত করা যায়। আরবীতে রোজার নিয়ত-

نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم

আরবি নিয়ত : নাওয়াইতু আন আছুম্মা গাদাম মিন শাহরি রমাজানাল মুবারাকি ফারদাল্লাকা, ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।

সূর্য ঢলার দেড় ঘন্টা পূর্ব পর্যন্ত রমযানের রােযার নিয়ত করা দুরস্ত আছে, তবে রাতেই নিয়ত করে নেয়া উত্তম। রমযান মাসে অন্য যে কোন প্রকার রােযা বা কাযা রােযার নিয়ত করলেও এই রমযানের রােযা আদায় হবে- অন্য যে রােযার নিয়ত করবে সেটা আদায় হবে না। রাতে নিয়ত করার পরও সুবেহ সাদেকের পূর্ব পর্যন্ত পানাহার ও যৌনকর্ম জায়েয। নিয়ত করার সাথে সাথেই রােযা শুরু হয়না, বরং রােযা শুরু হয় সুবেহ সাদেক থেকে।

সেহরীর মাসায়েলঃ

* সেহরী খাওয়া জরুরী নয় তবে সেহরী খাওয়া সুন্নাত, আমল, তাই ক্ষুধা না লাগলে বা খেতে ইচ্ছে না করলেও সেহরীর ফযীলত হাছিল করার নিয়তে যা-ই হােক কিছু পানাহার করে নিবে। নিদ্রার কারণে সেহরী খেতে না পারলেও রােযা রাখতে হবে। সেহরী না খেতে পারায় রােযা না রাখা অত্যন্ত পাপ।

* সেহরী-র সময় আছে বা নেই নিয়ে সন্দেহ হলে সেহরী না খাওয়া উচিত। এরূপ সময়ে খেলে রােযা কাযা করা ভাল। আর যদি পরে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে, তখন সেহরীর সমায় ছিল না, তাহলে কাযা করা ওয়াজিব।

* সেহরীর সময় আছে মনে করে পানাহার করল অথচ পরে জানা গেল যে, তখন সেহরীর সময় ছিল না, তাহলে রােযা হবে না; তবে সারাদিন তাকে রােযাদারের ন্যায় থাকতে হবে এবং রমযানের পর ঐ দিনের রােযা কাযা করতে হবে। বিলম্বে সেহরী খাওয়া উত্তম। আগে খাওয়া হয়ে গেলেও শেষ সময় নাগাদ কিছু চা-পানি ইত্যাদি করতে থাকলেও বিলম্বে সেহরী করার ফযীলত অর্জিত হবে।

ইফতারের দোয়া ও মাসায়েলঃ

* সূর্য অন্তমিত হওয়ার পর বিলম্ব না করে তাড়াতাড়ি ইফতার করা মােস্তাহাব। বিলম্বে ইফতার করা মাকরূহ। মেঘের দিনে কিছু দেরী করে ইফতার করা ভাল। মেঘের দিনে ঈমানদার ব্যক্তির অন্তরে সূর্য অন্ত গিয়েছে বলে সাক্ষ্য না দেয়া পর্যন্ত ছবর করা ভাল। শুধু ঘড়ি বা আযানের উপর নির্ভর করা ভাল নয়, কারণ তাতে ভুলও হতে পারে। সূর্য অন্ত যাওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ থাকা পর্যন্ত ইফতার করা দুরস্ত নেই। সবচেয়ে উত্তম হল খােরমার দ্বারা ইফতার করা, তারপর কোন মিষ্টি জিনিস দ্বারা, তারপর পানি দ্বারা।(লবণ দ্বারা ইফতার শুরু করা উত্তম-এই আকীদা ভুল)। 

ইফতারের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দোয়া পড়ে ইফতার করবে। ইফতারের দোয়া-

اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَ عَلَى رِزْقِكَ وَ اَفْطَرْتُ بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّاحِيْمِيْن

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা ওয়া আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেয়া রিযিক্বের মাধ্যমে ইফতার করছি।

ইফতারের পর দোয়াঃ

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন-

ذَهَبَ الظَّمَاءُ وَابْتَلَتِ الْعُرُوْقُ وَ ثَبَتَ الْأَجْرُ اِنْ شَاءَ اللهُ

উচ্চারণঃ 'জাহাবাজ জামাউ; ওয়াবতালাতিল উ’রুকু; ওয়া ছাবাতাল আঝরূ ইনশাআল্লাহ।'

অর্থঃ (ইফতারের মাধ্যমে) পিপাসা দূর হলো, শিরা-উপসিরা সিক্ত হলো এবং যদি আল্লাহ চান সাওয়াবও স্থির হলো। (দাউদ, মিশকাত)

ইফতার-এর সময় দুআ কবূল হয়, তাই ইফতারের পূর্বে বা কিছু ইফতার করে বা ইফতার থেকে সম্পূর্ণ ফারেগ হয়ে দুআ করা মােস্তাহাব। পশ্চিম দিকে প্লেনে সফর শুরু করার কারণে যদি দিন লম্বা হয়ে যায় তাহলে সুবেহ সাদেক থেকে নিয়ে ২৪ ঘন্টার মধ্যে সূর্যাস্ত ঘটলে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ইফতার বিলম্ব করতে হবে, আর ২৪ ঘন্টার মধ্যেও সূর্যাস্ত না ঘটলে ২৪ ঘন্টা পূর্ণ হওয়ার সামান্য কিছু পূর্বে ইফতার করে নিবে। পূর্ব দিকে প্লেনে সফর করলে যখনই সূর্যাস্ত পাবে তখনই ইফতার করবে।

৫. রোজার মাসায়েল (৫ম পর্ব)

তথ্যসূত্রঃ 
১. আহকামে জিন্দেগী/মাওলানা মুহাম্মদ হেমায়েত উদ্দিন/ইবাদত/রমজানের রোজা/রোজার নিয়তের মাসায়েল/২৪৬-২৪৭

Previous Post Next Post