কখন তাইয়াম্মুম করতে হবে : তায়াম্মুমের মাসায়েল (৪র্থ পর্ব)

তায়াম্মুমের আভিধানিক অর্থ হলো কোনো কিছুর দিকে ধাবিত হওয়া বা কোন কিছু করার ইচ্ছে পোষন করা। তায়াম্মুমের শরয়ী পারিভাষিক অর্থ হলো পবিত্রতা অর্জন করার উদ্দেশ্যে পবিত্র মাটি দিয়ে মুখ ও দুই হাত মাসেহ করা। তায়াম্মুমের হুকুম তখনই আরোপিত হবে যখন পানি পাওয়া যাবে না যা দ্বারা অযু সম্পন্ন করা যায়। যদি এমন হয় যে উক্ত ব্যাক্তির জন্য পানি ব্যবহার অসম্ভব (বিশেষ রোগ বা এ জাতীয় কিছুর জন্য) তবে তার জন্যও তায়াম্মুমের হুকুম বৈধ থাকবে।

পানির অনুপস্থিতিতে বা পানি ব্যবহার করা অসম্ভব হলে যেসব বিষয়ে পবিত্রতা অর্জন করা ফরজ সেসব ক্ষেত্রে তাইয়াম্মুম করা ফরজ যেমনঃ নামাজ ইত্যাদি। আবার যেসকল ইবাদতের ক্ষেত্রে পবিত্রতা মুস্তাহাব সেসব বিষয়ে তায়াম্মুম করাও মুস্তাহাব। যেমনঃ মুখস্ত কোরআন তিলাওয়াত করা ইত্যাদি। আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَلَمۡ تَجِدُواْ مَآءٗ فَتَيَمَّمُواْ صَعِيدٗا طَيِّبٗا فَٱمۡسَحُواْ بِوُجُوهِكُمۡ وَأَيۡدِيكُم مِّنۡهُۚ

অর্থঃ অতঃপর পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করো। সুতরাং তোমাদের মুখ ও হাত তা দ্বারা মাসেহ করো (সূরা আল মায়েদা:৬)

নিচে ধারাবাহিকভাবে তাইয়াম্মুমের করণীয় বিষয়সমূহ বর্ণনা করা হলঃ 

তায়াম্মুমের বিধি বিধান। কখন তায়াম্মুম করা যাবে। তায়াম্মুমের মাসায়েল
তায়াম্মুমের মাসায়েল

পূর্বের পর্বগুলোতে নাপাকীর (নাজাছাতে হুক্মী তথা বে-উযু বে-গােসল হওয়ার অবস্থা) বর্ণনা করা হয়েছে। ছােট বড় যে কোন অপ্রকৃত নাপাকী অবস্থায় তাইয়াম্মুম দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা যায়। তবে প্রকৃত নাপাকীর বেলায় তাইয়াম্মুম করলে যথেষ্ঠ হবে না বরং ধৌত করতে হবে।

উল্লেখ্য যে, উয়ু ও গােসলের জন্য এক রকম তাইয়াম্মুমই করতে হবে। এক তাইয়াম্মুমই উভয়ের জন্য যথেষ্ট হবে।

কখন তাইয়াম্মুম করতে হবে

নিম্নলিখিত কারণগুলাে ব্যতীত তাইয়াম্মুম জায়েয নয় 

১. পানি এক মাইল অথবা তদুর্ধ অথবা এর চেয়েও দূর হতে হবে।

২. পানির কূপ আছে, কিন্তু পানি উঠাবার কোন ব্যবস্থা না থাকলে।

৩. পানির নিকট কোন ক্ষতিকর প্রাণী অথবা কোন শত্ৰু থাকলে এবং কাছে। গেলে কোন বিপদের আশংকা থাকলে।

৪. রেলগাড়ী, উড়ােজাহাজ অথবা মােটর গাড়ীতে আরােহণ অবস্থায় পানি না পাওয়া গেলে অথবা উযু করার সুযােগ না থাকলে বা উয়ু করতে গেলে গাড়ী ছেড়ে দেয়ার ভয় থাকলে। তবে রেলগাড়ী বা মােটরে তাইয়াম্মুমের জন্য শর্ত হল (এক) রেলগাড়ীর অন্য কোন ডাব্বায় (বগিতে) পানি নেই (দুই) পথিমধ্যে এক মাইলের (১.৬৩ কিঃ)-এর মধ্যে পানি অর্জন করা যাবে- এরূপ জানা নেই।

৫. পানি ব্যবহার করলে রােগ বৃদ্ধি অথবা রােগ সৃষ্টি অথবা স্বাস্থ্যের উপর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির ভয় হলে। অবশ্য এসব ব্যাপারে অনর্থক সন্দেহ করে তাইয়াম্মুম না করা চাই। তবে রােগ বৃদ্ধি পাওয়ার অথবা রােগ সৃষ্টি হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হলে, যেমন, সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত লােক শীতকালে ঠান্ডা পানি ব্যবহার করলে ক্ষতি হয়, এমতাবস্থায় গরম পানি দিয়ে গােসল অথবা উযূ করা দরকার। গরম পানি সংগ্রহ করতে না পারলে অথবা গরম পানি ব্যবহার করলেও ক্ষতির আশংকা হলে তাইয়াম্মুম করবে।

৬. অল্প পানি থাকায় উযু করলে পিপাসায় কষ্ট করতে হবে অথবা খাবার পাক করতে অসুবিধার সম্ভাবনা আছে।

৭. পানি আছে, কিন্তু নিজে উঠে গিয়ে আনতে সক্ষম নয়, আর পানি এনে দেয়ার জন্য অন্য লােকও না পাওয়া যায়।

৮. যে নামাযের কাযা হয় না, উু অথবা গােসল করতে গেলে এমন নামায ছুটে যাওয়ার আশংকা দেখা দিলে। যেমন দু-ঈদের নামায, জানাযার নামায। এগুলােতে উু ব্যতীত তাইয়াম্মুম করা যায়।

* উল্লেখ্য, কোন লােকের গােসলের প্রয়ােজন, কিন্তু গােসল করলে ক্ষতির আশংকা রয়েছে, উযু করলে কোন ক্ষতি হবে না, তখন সে গােসলের তায়াম্মুম করে নিবে এবং প্রত্যেক নামাযের জন্য নতুন করে উযু করে নামায পড়েব। পানির পরিমাণ যদি অল্প হয় ও মাত্র একবার করে মুখ হাত ও পা ধৌত করা যায়, এমতাবস্থায় তায়াম্মুম করবে না- উযুর অঙ্গুলাে একবার করে ধৌত করলেই হবে, উযূর সুন্নাত অর্থাৎ কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়া ছেড়ে দিতে হবে। তাইয়াম্মুম করে নামায আদায় করার পর কোন লােক জানতে পারলে যে পানি নিকটেই আছে, তখন তাকে দ্বিতীয়বার নামায পড়তে হবে না। পানি পাওয়ার জন্য চেষ্টা করে থাকলে তখন এ হুকুম প্রযােজ্য হবে; নতুবা উযু করে দ্বিতীয়বার নামায পড়তে হবে। নামাযের শেষ ওয়াক্তে পানি পাওয়ার সম্ভবনা থাকলে শেষ ওয়াক্তেই নামায পড়া মােস্তাহাব। যেমন রেলগাড়ী অথবা মােটরে আরােহণ করার পর জানতে পারল যে, নামাযের শেষ ওয়াক্তে রেলগাড়ী অথবা মােটর গাড়ী যথাস্থানে পৌঁছে যাবে যেখানে পানি আছে, তখন বিলম্ব করেই নামায পড়বে। তবে গাড়ী পৌঁছার ব্যাপারে সন্দেহ হলে তাইয়াম্মুম করেই নামায পড়বে।

* কোন লােক পানি অনুসন্ধান করে তাইয়াম্মুম করে নামায আদায় করল, অথচ নামাযের সময় থাকতেই পানি পাওয়া গেল, তখন তাকে দ্বিতীয়বার নামায পড়তে হবে না।

* রেলগাড়ীতে বা উড়ােজাহাজে ভ্রমণ করলে মাটি ও পানি না পাওয়া গেলে উযু ও তাইয়াম্মুম ব্যতীত নামায পড়ে নিবে অর্থাৎ, নামাযের নিয়ত ছাড়া শুধু নামাযের মত উঠা-বসা ইত্যাদি করবে। এমনিভাবে কোন লােক জেলখানায় থাকাকালীন পানি ও মাটি না পেলে উযু ও তাইয়াম্মুমবিহীন অনুরূপভাবে নামাযের ন্যায় করবে। তবে উভয় অবস্থায় পানি পাওয়ার পর দ্বিতীয়বার নামায পড়তে হবে। মানুষের সৃষ্ট কোন অপারগতায় কেউ উপনীত হলে এর হুকুমও আগেরমতোই। যেমন কোন লােকের জেলখানায় থাকা অবস্থায় অন্য কেউ তার উযুূর পানি বন্ধ করে দিল, তখন তাইয়াম্মুমের ব্যবস্থাও করতে না পারলে সে অনুরূপভাবে নামাযের ন্যায় করবে। 

কোন কোন কারণে তায়াম্মুম নষ্ট হয়

১. যে যে কারণে উু নষ্ট হয় তাইয়াম্মুমও ঐসব কারণে ভঙ্গ হয়।

২. যে সমস্ত কারণে গােসল ফরয হয় ঐ সমস্ত কারণে তাইয়াম্মুম নষ্ট হয়।

৩. যে সব কারণে তাইয়াম্মুম করা হয়েছিল, ঐসব কারণ রহিত হয়ে গেলে তাইয়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে যাবে।

৪. পানি পাওয়ার পর তাইয়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে যায়।


Previous Post Next Post