তাইয়াম্মুম করার নিয়ম : তাইয়াম্মুমের মাসায়েল (১ম পর্ব)

পানির অনুপস্থিতে অথবা পানি ব্যবহার করা অসম্ভব হলে যেসব বিষয়ের জন্য পবিত্রতা ফরজ সেসবের জন্য তায়াম্মুম করা ফরজ। আর যেসবের জন্য পবিত্রতা মুস্তাহাব সেসবের জন্য তায়াম্মুম করা মুস্তাহাব, যেমন কুরআন তিলাওয়াত করা।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَلَمۡ تَجِدُواْ مَآءٗ فَتَيَمَّمُواْ صَعِيدٗا طَيِّبٗا فَٱمۡسَحُواْ بِوُجُوهِكُمۡ وَأَيۡدِيكُم مِّنۡهُۚ 

অতঃপর পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করো। সুতরাং তোমাদের মুখ ও হাত তা দ্বারা মাসেহ করো।

নিচে ধারাবাহিকভাবে তাইয়াম্মুমের করণীয় বিষয়সমূহ বর্ণনা করা হলঃ 

তাইয়াম্মুম করার নিয়ম। তাইয়াম্মুম করার পদ্ধতি
তাইয়াম্মুমের মাসায়েল

* পানি না পাওয়ার কারণে যাকে তাইয়াম্মুম করতে হবে পানি পাওয়ার প্রবল ধারণা থাকলে মােস্তাহাব ওয়াক্ত পার হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত অপেক্ষা করা তার জন্য মােস্তাহাব। আর কেউ পানি দেয়ার ওয়াদা করলে অবশ্যই তাকে অপেক্ষা করতে হবে, যদিও ওয়াক্ত শেষ হওয়ার আশংকা হয়।

* তাইয়াম্মুমের শরুতে বিসমিল্লাহ বলা সুন্নাত।

* মেসওয়াক করা উযুর ন্যায় তাইয়াম্মুমেরও সুন্নাত।

* নিয়ত করা ফরয। (পবিত্রতা অর্জন করা বা নাপাকী দূর করার নিয়ত করবে। কিংবা নামায, সাজদায়ে তিলাওয়াত প্রভৃতি এমন মৌলিক ইবাদতের নিয়ত করবে যা পবিত্রতা ব্যতীত সহীহ হয় না।

* নিয়ত মুখেও উচ্চারণ করা উত্তম। এরূপ বাক্যে নিয়ত করা যায় যে, আমি নাপাকী দূর করার, নামায বৈধ করার এবং আল্লাহ্ তা'আলার নৈকট্য অর্জন করার উদ্দেশ্যে তাইয়াম্মুমের নিয়ত করছি।

* নিয়ত করার পর পবিত্র মাটি বা মাটি জাতীয় বস্তু (যার উপর তাইয়াম্মুম করা যায়)-এর উপর উভয় হাতের তালু মারবে।

* হাত মারার সময় আঙ্গুলগুলাে খােলা রাখা সুন্নাত।

* হাত মারার পর উভয় হাত ঐ স্থানে রাখা অবস্থায় একবার সামনের দিকে একবার পেছনের দিকে নিবে। এটা সুন্নাত।

* হাত এমন ভাবে ঝাড়বে, যেন আলগা ধুলা ঝরে যায়।

* পুরাে মুখ ঐ হাত দ্বারা মাসেহ করবে। এটা ফরয।

* নাড়ি খেলাল করা সুন্নাত ।

* আবার মাটিতে অনুরূপভাবে হাত মারবে। (আঙ্গুলের মধ্যে ফাক রেখে)

* হাত সামনে এবং পেছনের দিকে নিবে। এটা সুন্নাত।

* এখানেও (হাত মাসেহের পূর্বেই) উযূর মত উভয় হাতের আঙ্গুল খেলাল করবে। এটা সুন্নাত। 

* পূর্বের ন্যায় হাত ঝাড়বে।

* প্রথমে ডান হাত কনুইসহ মাসেহ করবে।

* তারপর বাম হাত কনুইসহ মাসেহ করবে। হাত মাসেহ করা ফরয।

* মসেহ করার সুন্নাত তরীকা হল ও বাম হাতের চার আঙ্গুলের পেট (বৃদ্ধ আঙ্গুল ছাড়া) ডান হাতের চার আঙ্গুলের পিঠে রাখবে। তারপর ডান হাতের পিঠের উপর দিয়ে কনুইর দিকে টেনে নিয়ে যাবে। অতঃপর বাম হাতকে উল্টে বাম হাতের তালু এবং বৃদ্ধ আঙ্গুলের পেট দিয়ে ডান হাতের পেটের দিক থেকে আঙ্গুলের দিকে এমনভাবে টেনে নিয়ে যাবে যেন বাম হাতের বৃদ্ধ আঙ্গুলের পেট ডান হাতের বৃদ্ধ আঙ্গুলের পিঠের উপর দিয়ে চলে যায়। অনুরূপভাবে ডান হাত দিয়ে বাম হাত মাসেহ করবে।

* আংটি চুড়ি ইত্যাদিকে তার স্থান থেকে সরিয়ে এমনভাবে হাত মাসেহ করবে যেন সব স্থানে মাসেহ করা হয়।

* তায়াম্মুমের এই তারতীব রক্ষা করা সুন্নাত।

১. হযরত ইমাম আবু ইউসুফের মতে তাইয়াম্মুমের মধ্যে দাড়ি খেলাল করা সুন্নাত নয়।

২. গ্রন্থকার মাসেহ করার এই তরীকা হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত বলে দাবী করেছেন, অন্য অনেকে তা অস্বীকার করলেও এরূ প করা সুন্নাত তরীকার খেলাফ হবে বলে মন্তব্য করেননি। তবে যে কোন রূপে পুরাে হাত মাসেহ করা সম্পন্ন হলেই তাইয়াম্মুমের ফরয আদায় হয়ে যাবে সন্দেহ নেই।  

* তাইয়াম্মুমের মধ্যেও উযুর ন্যায় একের পর এক অঙ্গুলাে লাগাতার (অর্থাৎ, বেশী বিরতি না দিয়ে) করে যাওয়া সুন্নাত।

* তাইয়াম্মুম উযর ন্যায়, তাই উযুর মধ্যে মুখ ও হাত ধােয়ার যে দুআ পড়া হয়, এমনিভাবে উযুর শেষে যে সব দুআ পড়া হয়, তাইয়াম্মুমের বেলায়ও সেগুলাে পড়ার হুকুম একই হবে।

أحدث أقدم