মোজা মাসেহ করার নিয়ম : একটি জীবনঘনিষ্ঠ আলোচনা

উযু করার সময় মােজা পরিহিত থাকলে মােজা খুলে পা না ধুয়ে মােজার উপর মাসেহ করে নিলেও চলে, তবে তার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। আজকে আলোচনায় আমরা মোজায় মাসেহ করা বিস্তারিত মাসায়েল সম্পর্কে জানবো ইনশাআল্লাহ।  এক্ষেত্রে মাওলানা মুহাম্মদ হেমায়েত উদ্দিন রচিত আহকামে জিন্দেগী বইটি অনুসরণ করবো।

মোজা মাসেহ করার নিয়ম
মোজা মাসেহ করা : (source image : http://www.seekerspath.co.uk/)

মােজায় মাসেহের শর্তসমূহ 

১. পা ধােয়ার পর মােজা পরিধান করবে। চাই পূর্ণ উ়যু করার পর শেষে পা ধুয়ে মােজা পরিধান করুক কিংবা আগেই পা ধুয়ে মােজা পরিধান করে তারপর উযু ভঙ্গকারী কিছু ঘটার পূর্বেই উযু পূর্ণ করে নেয়া হােক।

২. মােজা দ্বারা পায়ের টাখনু গিরা ঢাকা হতে হবে।

৩. মােজা এমন হতে হবে যা পরিধান করে উপর্যুপরি অন্ততঃ তিনমাইল পথ চলা যায়।

৪. একটি মােজায় পায়ের ছােট আঙ্গুলের তিন আঙ্গুল পরিমাণ বা তার চেয়ে বেশী ফাঁটা ছেঁড়া থাকতে পারবে না, চলার সময় এ পরিমাণ খুললেও চলবে না।

৫. মােজা এমন হতে হবে যা বাধা ছাড়াই পায়ের উপর আঁটকে থাকে।

৬. মােজা এমন হতে হবে যার ভিতর দিয়ে পানি ভেদ করে শরীরে লাগে না।

৭. কম পক্ষে হাতের ছােট আঙ্গুলের তিন আঙ্গুল পরিমাণ পায়ের অগ্রভাগ থাকতে হবে। অতএব কোন এক পা টাখনু গিরার উপর থেকে কাটা গেলে আর অপর পা ঠিক থাকলে সে অবস্থায় পরিহিত মােজায় মাসেহ করা জায়েয হবে না।

৮. গােসল ফরয হলে মােজায় মাসেহ করা জায়েয নয় বরং তখন মােজা খুলে পা ধৌত করতে হবে।

মোজা মাসেহ করার নিয়ম/তরীকাঃ

উভয় হাতের আঙ্গুলগুলাে পানিতে ভিজিয়ে উভয় পায়ের পাতার অগ্রভাগে রাখবে, যেন সম্পূর্ণ মােজার উপর আঙ্গুলগুলোের ছাপ পড়ে। অতঃপর হাতের পাতা শণ্যে রেখে এবং আঙ্গুলগুলাের মাঝে সামান্য ফাঁক রেখে ক্রমশঃ আঙ্গলগুলাে টেনে পায়ের টাখনার দিকে আনবে। পুরাে হাতের পাতা সহ মােজার উপর রেখে টেনে আনলেও দুরস্ত আছে।

কোন ধরনের মােজায় মাসেহ করা জায়েয

চামড়া, পশম, কাতান প্রভৃতির পায়ের এমন মােটা মােজা, যা অন্ততঃ পায়ের টাখনু গিরা ঢাকা হবে এবং বাধা ছাড়াই পায়ের উপর খাড়া থাকতে পারে এমন হবে, যা পায়ে দিয়ে অন্ততঃ তিন মাইল হাঁটা যাবে তাতে ফাটবে না এবং যা ভেদ করে পানি ভিতরে ঢুকবে না এবং যা দিয়ে পায়ের চামড়া দেখা যাবে না- এমন মােজার উপর মাসেহ করা জায়েয।

* হাত মােজার উপর মাসেহ করা জায়েয নয়।

মােজায় কত দিন মাসেহ করা জায়েযঃ

* শরুয়ী সফরের অবস্থায় তিন দিন তিন রাত পর্যন্ত এবং এরূপ সফর না হলে এক দিন এক রাত পর্যন্ত মাসেহ করা যায়। যে উয় করে মােজা পরিধান করা হবে সে উযু ভঙ্গ হওয়ার সময় থেকে এই তিন দিন তিন রাত ও এক দিন এক রাতের হিসাব ধরা হবে।

* বাড়িতে থাকা অবস্থায় মাসেহ শুরু হয়েছিল এবং একদিন এক রাত পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই সফর আরম্ভ হয়েছে, তাহলে তিন দিন তিন রাত পর্যন্ত মাসেহ করতে পারবে।

* পক্ষান্তরে সফরে থাকা অবস্থায় মাসেহ শুরু করা হয়েছিল তারপর একদিন এক রাত পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই বাড়িতে চলে এসেছে, তাহলে এক দিন এক রাত হওয়ার পর আর মাসেহ করতে পারবে না।

যেসব কারণে মােজায় মাসেহ ভঙ্গ হয়ে যায়

১ যে যে কারণে উয়ু ভেঙ্গে যায় তাতে মাসেহও ভেঙ্গে যায়। উভয় মােজা বা একাটি মােজা খুললেও মাসেহ ভেঙ্গে যায়। এরূপ অবস্থায়

২.উযু থাকলে শুধু পা ধুয়ে আবার মােজা পরিধান করে নিলেই চলে, পুরাে উযু দোহরানাের প্রয়ােজন হয় না।

৩. মসেহের মেয়াদ- তিন দিন তিন রাত বা এক দিন এক রাত পূর্ণ হয়ে গেলেও মাসেহ ভেঙ্গে যায় ! এরূপ ক্ষেত্র উযু থাকলে শুধু পা ধুয়ে নিবে

8. মােজার ভিতরে পানি ঢুকে সম্পূর্ণ পা বা পায়ের অর্ধেকের বেশী ভিজে গেলে। এ ক্ষেত্রেও উযু থাকলে শুধু পা ধুয়ে নিবে।

৫. মাযুর ব্যক্তি যদি মাসেহ করে, তাহলে ওয়াক্ত চলে যাওয়ার পর যেমন তার উযু ভেঙ্গে যায় তদ্রপ তার মাসেহও ভেঙ্গে যাবে। তবে উযু করার সময় এবং মােজা পরিধান করার সময় ওজর না থাকলে অন্যান্য সুস্থ লােকের ন্যায় সেও মাসেহ করতে পারবে।

أحدث أقدم