বৈধ কারণে রোজা রাখতে অপারগ ব্যক্তির পুরস্কার

নারীদেরকে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, যেমন- হায়েজের সমস্যা। রামাদানে অন্য সবাই যেখানে নিয়মিত ইবাদাত করতে থাকে, সেখানে এই বরকতময় মাসেও নির্দিষ্ট কিছু দিন সাওম পালন করতে না পারায় আমাদের অধিকাংশ বোন এক ধরনের চাপা কষ্ট অনুভব করেন। বিষয়টা যদিও বােনদের সাথেই বেশি সম্পর্কিত, তবে ভাইদেরও এসব ব্যাপার জানা থাকা উচিত। এই মুহূর্তে তাঁদের অনেকেরই স্ত্রী না থাকলেও মা, বােন, খালা, ফুফু আছেন এবং ভবিষ্যতে ইনশাআল্লাহ তাঁদের স্ত্রী-কন্যাও থাকবে। কাজেই এ বিষয়ে তাঁদেরও জানা থাকা উচিত।


এই ব্যাপারে আমাদের বােনদের মধ্যে যেন কখনােই চাপা কষ্ট, হতাশা এবং দুঃখ না আসে। অন্যরা ইবাদাতের ক্ষেত্রে আপনাদেরকে পেছনে ফেলে দিচ্ছে, এমনটাও ভাবার কোনাে অবকাশ নেই। কেননা, যিনি আপনাকে সালাত ও সাওম পালন করার আদেশ দিয়েছেন, তিনিই আপনাকে এই সময়ে সালাত আদায় না করতে ও সাওম পালন না করতে আদেশ করেছেন। সুতরাং আপনি আল্লাহর আদেশ মেনে চলার মাধ্যমে কার্যত ইবাদাতের মধ্যেই আছেন।


ইবাদাত করতে না পারার মনােকষ্ট আমাদের সকল বােনেরই আছে এবং অনেক বােন তা দুঃখের সাথে প্রকাশ করেন। আর তাঁদেরও আগে এই একই অনুভূতি ব্যক্ত করেছিলেন আমাদের মা আইশা (রা.)। আল্লাহ যেন আমাদের বােনদেরকে আইশার পাশে সুউচ্চ প্রাসাদ দান করেন। সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল (সা.) একবার হজ্জবে যাবার সময় মক্কার কাছাকাছি অবস্থিত সারিফ নামক জায়গায় থামলেন।


হায়েজ নেফাসের সময় রোজা। হায়েজ নেফাসের সময় রোজা

এসময় তিনি আইশা (রা.)-কে কাঁদতে দেখলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, "কী হয়েছে?" আইশা দুঃখের সাথে বললেন, "আমি যদি এ বছর হজ্জ্ব না করতাম!" তিনি কীসের কথা বলছেন তা রাসূলুল্লাহ (সা.) সাথে সাথেই বুঝে গেলেন। তাই তিনি জিজ্ঞেস করলেন, "সম্ভবত তােমার হায়েজ শুরু হয়েছে।" আইশা (রাঃ) জবাব দিলেন, "হ্যাঁ" রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁকে সান্তনা দিয়ে বুঝিয়ে বললেন, "এই ব্যাপারটি আল্লাহ তাআলা আদমের সকল কন্যার জন্য নির্ধারণ করেছেন।" সাত্ত্বনা দেবার পর তিনি এই অবস্থায় করণীয় শিখিয়ে দিলেন। তিনি বললেন, "হাজীরা যা করে, তুমিও তা করবে। তবে পবিত্র হওয়ার আগ পর্যন্ত কাবার চারদিকে তাওয়াফ করবে না।" হজ্জ্বের বরকতময় সময়ে তাওয়াফ করতে না পারায় মা আইশা (রা.) অনেক কষ্ট পেয়েছিলেন। 


বােনদের জন্য আনন্দের সংবাদ এই যে, যদি কোনাে বােন আন্তরিকভাবে সালাত-সাওমের জন্য নিয়ত করে, হােক সেটা ফরয বা নফল, কিন্তু কেবলমাত্র হায়েজের কারণে সেই বােন ইবাদাত করতে পারছে না। এক্ষেত্রে ইবাদাত করলে যে সাওয়াব পাওয়া যেত, ইবাদাত না করেও ঠিক একই রকম সাওয়াব পাওয়া যাবে, সাওয়াবে এতটুকু কম হবে না।


সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "কেউ অসুস্থ হলে অথবা সফরে থাকলে তেমন সাওয়াবই পাবে, যেমনটা সে সুস্থ অবস্থায় বা সফরে না থাকা অবস্থায় পেতাে।"[বুখারি - ২৯৯৬]


সে একটি বৈধ কারণে ইবাদাত করা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। সেজন্য সে প্রতিদান পেয়ে যাবে। আর যতবার এরকম বৈধ কারণে ইবাদাত করতে অপারগ হবে, প্রতিদান পাবে। নারীদের হায়েজের ক্ষেত্রেও একই বিধান প্রযোজ্য। হাদিসটি থেকে বােঝা যায় যেকোনাে নারী নিয়ত থাকা সত্ত্বেও কেবলমাত্র হায়েজের জন্য সাওম পালন করতে না পারলেও সে ঐ পরিমাণ সাওয়াবই পাবে-যেমনটা সে বাস্তবে সাওম পালন করলে পেত। হায়েজ আল্লাহর পক্ষ থেকে সকল নারীর জন্য নির্ধারিত, এখানে বােনদের কোনাে নিয়ন্ত্রণ নেই। কাজেই তারা ইবাদাত থেকে বঞ্চিত হলেও ছুটে যাওয়া আমলের পুরস্কার পেয়ে যাবে। কারণ এটা তাদের অনিচ্ছায় হয়েছে।


হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কেউ অসুস্থ হলে তার ছুটে যাওয়া ইবাদাতের প্রতিদান পেয়ে যাবে, যেহেতু তারা অসুস্থ। ঋতুবতী নারীর ব্যাপারটিও অনেকটা একই। দুটির মধ্যে মিল হলােতারা ইবাদাত করতে অপারগ। আর তাদের এই অপারগতা ইচ্ছাকৃত নয়, বাধ্য হয়ে। ইবনু হাজার (র.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি কোনাে আমল এমনিতে করত, তবে তার সাধ্যের অতীত পরিস্থিতির কারণে তা করতে পারেনি, সে ব্যক্তির ক্ষেত্রে হাদিসটি ততবার প্রযােজ্য।"


বেশ কিছু হাদিসেই উল্লেখিত হয়েছে যে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না থাকায় কোনো ব্যাক্তি ইবাদাত করতে না পারলেও এর সাওয়াব পেয়ে যাবে। এমনকি জিহাদের ক্ষেত্রেও এটি প্রযােজ্য। রাসূলুল্লাহ (সা.) একবার যুদ্ধে গিয়েছিলেন এবং মদীনায় কয়েকজন সাহাবিকে রেখে গিয়েছিলেন। তিনি তাঁর সাথে থাকা সাহাবিদের বললেন, "তােমরা এমন এক পা-ও ফেলােনি এবং এমন কানাে উপত্যকাও অতিক্রম করােনি, যার সাওয়াব আমাদের সাথে যােগ না দেওয়া ব্যক্তিরা পাবে না। (অর্থাৎ তারা আমাদের সাথে যােগ না দিলেও তােমাদের মতােই সাওয়াব পাবে।) কারণ, তারা তাে বৈধ কারণে আসতে পারেনি।"


মােটকথা, দুঃখ পাবেন না, হতাশ হবেন না, যন্ত্রণা বােধ করবেন না। যেসব বোন ইবাদাত করতে পারছেন না, তাঁরা মূলত ইবাদাত না করেও ইবাদাতের মধ্যেই আছেন। কারণ, আল্লাহ তাআলাই তাঁদেরকে ইবাদাত না করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আন্তরিকভাবে নিয়ত করে থাকলে তাঁরা প্রতিদান পেয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ।



তথ্যসূত্রঃ 

ধুলিমলিন রমাদান 

Previous Post Next Post