সম্রাট জাহাঙ্গীর ও বৃদ্ধার কাহিনী : বাংলার মুসলিম শাসন

এক হিন্দু বৃদ্ধা এসে সম্রাট জাহাঙ্গীরকে নালিশ করলেন— “জাহাপনা, আমার সন্তান আপনার সেনাবাহিনীতে  চাকরি করে।  প্রতিদিন রাতে কোনো এক দুর্বৃত্ত এসে আমার বাড়িতে হামলা করে আর আমার পুত্রবধুর সতিত্ব নষ্ট করতে চেষ্টা করে। আমি আপনার কাছে আমার পুত্রবধুর সতিত্ব রক্ষার্থে বিচার চাই।” 


সম্রাট জাহাঙ্গীর কিছু বললেন না। বুড়ি রেগে গিয়ে বললেন— “জাহাঙ্গীর, আমি তোমাকে হতে দেখেছি। তুমি যদি আমার পুত্রবধুর সতিত্বের দায়িত্ব না নাও আমি কিয়ামতের দিন তোমার স্রষ্টার আদালতের কাঠগড়ায় তোমাকে দাঁড় করাবো৷ আমাকে দুই দিন সময় দাও; আমি তোমার রাজ্য ছেড়ে চলে যাবো।” জাহাঙ্গীর কিছুই বললেন না; তারপর বুড়ি বাড়িতে চলে গেলেন। 


সম্রাট জাহাঙ্গীর তরবারি হাতে নিয়ে ঘোড়ায় করে চলে গেলেন বুড়ির বাড়িতে। অন্ধকার রাত, বুড়ির বাড়ির সামনে টিম টিম করে আলো জ্বলছে। দরজায় একজন প্রহরী। জাহাঙ্গীর দূর থেকে শুনলেন মেয়েলি কণ্ঠের আওয়াজ— “বাচাও, বাচাও!”  সম্রাট জাহাঙ্গীর প্রহরীকে হত্যা করে বুড়ির ঘরে প্রবেশ করলেন। তারপর দুর্বৃত্তকে ধরে বুড়িকে বললেন— “বুড়ি আলো নিভাও।” বুড়ি আলো নিভিয়ে দিলেন আর সম্রাট জাহাঙ্গীর ওই দুর্বৃত্তের মাথা কেটে মাঠিতে ফেলে দিলেন৷ তারপর বললেন— “বুড়ি আলো জ্বালাও এবার।” আলো জ্বালানোর পর সম্রাট জাহাঙ্গীর দুর্বৃত্তের মুখ দেখে বললেন— “আলহামদুলিল্লাহ।” এরপর জাহাঙ্গীর ঢক ঢক করে পানি পান করে বুড়িকে বললেন— “কাল তুমি তোমার পুত্রবধুকে নিয়ে আমার দরবারে হাজির হবে।”


সম্রাট জাহাঙ্গীর সম্রাট জাহাঙ্গীর সম্রাট জাহাঙ্গীর সম্রাট জাহাঙ্গীর সম্রাট জাহাঙ্গীর
জায়নামাজ


পরের দিন বুড়ি হাজির হলেন সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজ দরবারে। জমজমাট রাজদরবার৷ বুড়িকে জিজ্ঞেস করলেন— “আমি কেন আলো নিভাতে বলেছিলাম তুমি জানো?”


বুড়ি বললেন— “নাহ, জানি না।” 


সম্রাট জাহাঙ্গীর উত্তর দিলেন— “আমার ধারণা ছিল আমার বাড়ির এত কাছে আমার পুত্র ছাড়া কেউ এ কাজ করার সাহস পাবে না৷ আমি আমার ছেলেকে হত্যা করতে পারব না, মনে দুর্বলতা আসতে পারে, বিচার নাহক্বও হয়ে যেতে পারে তাই আলো নিভাতে বলেছিলাম। কিন্তু, মুখ দেখার পর দেখি সে আমার ছেলে না, তাই আলহামদুলিল্লাহ পড়েছিলাম।”


তিনি বুড়িকে আবার জিজ্ঞেস করলেন— “তুমি জানো কেন আমি তোমার ঘরে গিয়ে পান  করেছিলাম?”


 বুড়ি উত্তর দিলেন— “জানি না।”


 জাহাঙ্গীর বললেন— “তুমি যখন আমার দরবারে নালিশ করে বলেছিলে কিয়ামতের দিন আমাকে আল্লাহর আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে তখন থেকে দুশ্চিন্তায় কিচ্ছু খাই নাই, শুধু তোমার ঘরে গিয়ে এক গ্লাস পানি পান করেছি।  আমার ভয় হয়েছিল আমি ন্যায় বিচার করতে পারব কি না।”


তারপর সম্রাট জাহাঙ্গীর নিজের মাথা থেকে মুকুট খুলে বুড়ির পায়ের নিচে রেখে বললেন— “বুড়ি, মনে রেখো— একজন মুসলমানের কাছে একজন হিন্দু পুত্রবধুর সতিত্ব সম্রাটের মাথার মুকুটের চেয়েও বেশি।”


এই ছিল মুসলিম শাসকদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস।  এই ইতিহাস কয়জন মুসলিমই বা জানে। কেউ হয় তো জানার চেষ্টাও করে না।

أحدث أقدم