সুলতান মুহাম্মদ ঘুরি : Muhammad of Ghor

সুলতান শিহাবুদ্দিন মুহাম্মদ ঘুরি

সুলতান শিহাবুদ্দিন মুহাম্মদ ঘুরি ১১৪৯ সালে আফগানিস্তানের ঘুর নামক সাথে জন্ম গ্রহণ করেন। তার জন্মের প্রকৃত তারিখ অজ্ঞাত। মুহাম্মদ ঘুরি এর বাবা প্রথম বাহাউদ্দিন সাম ছিলেন ঘুরের একজন স্থানীয় শাসক। মুইজউদ্দিনের বড় ভাই ছিলেন গিয়াসউদ্দিন মুহাম্মাদ। তার ভাই গিয়াসউদ্দিন মুহাম্মাদের সাথে তিনি ১১৭৩ থেকে ১২০২ পর্যন্ত শাসন করেন। এরপর ১২০২ সালে তার ভাই মারা যাবার পর ১২০৬ পর্যন্ত তিনি স্বাধীন শাসক হিসেবে শাসন করেন।


১১৯২ খ্রিস্টাব্দে সুলতান সালাহুদ্দিন আইয়ুবী যখন ক্রুসেডারদের সাথে ৫ বছরের লড়াই শেষে সন্ধির আলোচনা শুরু করছিলেন, তখন ক্লান্ত পরিশ্রান্ত সালাহউদ্দিন আইয়ুবীকে সঙ্গ দেওয়ার মতো তেমন তেজীয়ান, ইমানি বলে বলিয়ান কোন যুবক ছিল না।আরবীয়রা যেন যুহদকে ভুলে আরাম আয়েশের ব্যবস্থা করতেই ব্যাস্ত। ভংগুর খিলাফত ব্যবস্থা আর দুনিয়া লোভী আমিরদের কারণে মুসলিম জাহানের যখন করুন অবস্থা তখন পৃথিবীর অন্যপ্রান্তে ভারতবর্ষে ইসলামি দুনিয়া দেখতে পায় এক নতুন দৃশ্য। দিল্লী থেকে দেড়শো কিলোমিটার দূরে তরাইন নামক এলাকায় সুলতান শিহাবুদ্দিন মুহাম্মদ ঘুরি তার সেনাবাহিনী নিয়ে পৃথিরাজের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। 


শিহাবুদ্দিন ঘুরিকে বলা হয় ভারতবর্ষে মুসলিম সালতানাতের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা। তার আগে সুলতান মাহমুদ গযনভী সতেরো বার ভারত আক্রমন করেছিলেন। কিন্তু তিনি এখানে ইসলামি সালতানাত প্রতিষ্ঠা করেননি। তিনি হিন্দু রাজাদের শক্তি খর্ব করার জন্য একের পর এক হামলা চালান। পাঞ্জাব বিজয় ছাড়া তার আর কোনো হামলাই স্থায়ী ফল আনেনি। সম্ভবত তার সেরকম কোনো উদ্দেশ্যও ছিল না। 


সুলতান মাহমুদের মৃত্যুর পর গজনী  সালতানাত ধীরে ধীরে পতনের দিকে এগিয়ে যায়। তাদের জায়গা দখল করে নেয় ঘুরী সালতানাত। শিহাবুদ্দিন ঘুরির মূল নাম মুয়িজুদ্দিন মুহাম্মদ। ১১৪৯ খ্রিস্টাব্দে আফগানিস্তানের ঘুর নামক এলাকায় তিনি জন্মগ্রহন করেন। তার পিতা বাহাউদ্দিন ছিলেন ঘুরের শাসক। বাহাউদ্দিনের মৃত্যুর কিছুকাল পর, ১১৭৩ খ্রিস্টাব্দে তার ছেলে গিয়াসুদ্দিন শাসক হন। শিহাবুদ্দিন তার ভাইয়ের সাথে বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। দুই ভাই মিলে গজনি আক্রমন করেন এবং দখল করেন। শিহাবুদ্দিন ঘুরিকে গজনির গভর্ণর নিয়োগ দেয়া হয়। ১১৭৫ খ্রিস্টাব্দে শিহাবুদ্দিন মুহাম্মদ ঘুরি মুলতান আক্রমন করেন। ইতিপূর্বে ১০০৪ খ্রিস্টাব্দে সুলতান মাহমুদ মুলতান আক্রমন করে এখানকার কারামেতা শাসক আবুল ফাতাহ দাউদকে পরাজিত করেন। একইসাথে মুলতানকে গজনী সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু সুলতান মাহমুদের মৃত্যুর পর কারামেতারা বিদ্রোহ করে এবং গজনি সাম্রাজ্য থেকে পৃথক হয়ে যায়। শিহাবুদ্দিন ঘুরী যখন মুলতান আক্রমন করেন তখন এখানে কারামেতাদের শাসন চলছিল। শিহাবুদ্দিন ঘুরির আক্রমনে কারামেতারা পরাজিত হয়। তারা পালিয়ে গুজরাটে চলে যায় এবং রাজা ভীমদেবের আশ্রয় নেয়। এসময় অল্পবয়স্ক শাসক দ্বিতীয় ভীমদেব সোলানকি গুজরাট শাসন করছিলেন। শিহাবুদ্দিন ঘুরি মুলতান থেকে উচ পৌছলেন এবং পুরো পাঞ্জাবে তার নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠিত হল। 


১১৭৯ খ্রিস্টাব্দে শিহাবুদ্দিন ঘুরি গজনভী শাসক খসরু শাহের কাছ থেকে পেশোয়ার কেড়ে নেন। তিনি পেশোয়ারে সেনা ছাউনি স্থাপন করে যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করেন। ১১৮১ খ্রিস্টাব্দে শিহাবুদ্দিন ঘুরী লাহোর আক্রমন করেন। খসরু শাহ কর দেয়ার শর্তে সন্ধি করে। কিন্তু পরে সে চুক্তি ভংগ করলে ১১৮৪ খ্রিস্টাব্দে শিহাবুদ্দিন ঘুরী আবার হামলা করেন এবং শিয়ালকোট জয় করেন। খসরু শাহ ছিল দুর্বল শাসক। তাকে আশপাশের রাজারা উস্কানি দিত। তাই সে বারবার চুক্তি করেও তা ভংগ করছিল। ১১৮৬ খ্রিস্টাব্দে শিহাবুদ্দিন ঘুরি চুড়ান্ত হামলা চালান। খসরু মালিক এ যুদ্ধে পরাজিত ও বন্দী হয়। এভাবেই গজনভী সাম্রাজ্যের অধীনে থাকা লাহোরের পতন ঘটে। পুরো পাঞ্জাব শিহাবুদ্দিন ঘুরির নিয়ন্ত্রনে আসে। লাহোর বিজয়ের পর শিহাবুদ্দিন ঘুরি উত্তর ভারতের দিকে মনোযোগ দেন।  এখানকার রাজা মহারাজারা ঘুরীর পাঞ্জাব দখলের পর থেকেই তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আসছিল। 


ঐতিহাসিক কাসেম ফিরিশতার বর্ননা মতে, ১১৯১ খ্রিস্টাব্দে শিহাবুদ্দিন ঘুরি সেরহিন্দ ও বাঠান্ডা জয়ের পর জানতে পারলেন আজমিরের শক্তিশালী রাজপুত শাসক পৃথিরাজ চৌহান তাকে বাধা দেয়ার জন্য বিশাল বাহিনী নিয়ে সেরহিন্দের দিকে এগিয়ে আসছে। সুলতান তার ক্লান্ত ১৪ হাজার সেনা নিয়ে সামনে অগ্রসর হন। দুই বাহিনী হরিয়ানার থানেশ্বরের কাছাকাছি তরাইন নামক এলাকায় মুখোমুখি হয়। রাজপুত বাহিনীতে সেনা সংখ্যা ছিল ৫০ হাজার। এর মধ্যে অশ্বারোহী ২০ হাজার। পৃথিরাজের বাহিনীতে অনেক হাতিও ছিল। ইতিপূর্বে মুসলিম বাহিনী হাতির মোকাবিলা করে অভ্যস্ত ছিল না। ফলে শুরুতেই তারা বেশ বাধার মুখে পড়ে। ঘুরী তার বাহিনীকে তিন ভাগে সাজান। মাঝের বাহিনী নিয়ে তিনি রাজপুত বাহিনীতে হামলে পড়েন। রাজপুত সেনারা আফিম সেবন করে যুদ্ধে নামে। এদিকে শিহাবুদ্দিন ঘুরির সেনারা সামনাসামনি লড়াইয়ে অভ্যস্ত ছিল না। সাধারনত তারা শত্রুকে ফাকি দিয়ে পিছনে হটতো। শত্রু ধাওয়া করলে তখন উলটো ঘুরে হামলা চালাতো। কিন্তু এ যুদ্ধে তারা রাজপুতদের বিরুদ্ধে মুখোমুখি লড়াইয়ে নেমে পড়ে। রাজপুতদের তীব্র হামলায় ঘুরির বাহিনীর ডান দল ও বাম দল পিছু হটতে বাধ্য হয়। রাজপুতরা এগিয়ে আসে। এইসময় রাজা খান্ডে রায় ঘুরির কাছাকাছি পৌছে যায়। খান্ডে রায় হাতির পিঠে বসা ছিল। শিহাবুদ্দিন ঘুরি ছিলেন ঘোড়ার পিঠে। ঘুরি অসমসাহসে এগিয়ে যান। তিনি বর্শা দিয়ে হাতির মুখে আঘাত করেন। হাতির দাত ভেংগে যায়। খান্ডে রায় পালটা আঘাত হানলে ঘুরি মারতাত্মক আহত হন। এসময় গুজব ছড়ায় ঘুরি নিহত হয়েছেন। 


সেনাদের মনোবল ভেংগে যায়। তারা ময়দান থেকে পালাতে থাকে। মারাত্মক আহত ঘুরী ময়দানে পড়ে থাকেন। একজন সেনা তাকে দেখে নিয়ে আসে। পৃথিরাজ বীরের বেশে আজমির ফিরে যায়। তাকে বিশাল সম্বর্ধনা দেয়া হয়। ঘুরি কিছুদিন লাহোরে অবস্থান করে সুস্থ হন। তারপর তিনি গজনি ফিরে যান। যুদ্ধে পরাজয়ের জন্য তিনি সেনাপতিদের উপর ক্ষিপ্ত  ছিলেন। কাউকে কাউকে শাস্তি দেন কিন্তু পরের যুদ্ধে তারা সাহসিকতার সাথে লড়বে এই প্রতিশ্রুতি পেয়ে সবাইকে মুক্ত করে দেন। 

ঘুরি কোনোভাবেই এই পরাজয়ের কথা ভুলতে পারছিলেন না। তিনি আবার যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। 


১১৯২ খ্রিস্টাব্দে শিহাবুদ্দিন ঘুরি এক লক্ষ বিশ হাজার সৈন্যসহ তরাইনের দিকে এগিয়ে আসেন। লাহোর অতিক্রমকালে একজন শায়খ ঘুরিকে বলেছিলেন, কিসের জন্য এ বিশাল যুদ্ধপ্রস্তুতি। জয় তো নিশ্চিত নয়। এই কথার জবাবে শিহাবুদ্দিন ঘুরি সেই বিখ্যাত কথা বলেন যা ইবনুল আসির আল কামিল ফিত তারিখে উল্লেখ করেছেন। শিহাবুদ্দিন ঘুরি বলেন, গত যুদ্ধে পরাজয়ের পর আমি এই একবছর ধরে স্ত্রীর পাশে শুইনি। আমি আমার কাপড়ও বদলাইনি। আমি শুধু আল্লাহর উপর ভরসা করে এই জিহাদে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছি। ঘুরের বাহিনী কিংবা আমার সেনাদের উপর আমি নির্ভরশীল নই। 


লাহোর থেকে ঘুরী পৃথিরাজের কাছে আত্মসমর্পন এবং ইসলাম গ্রহনের আহবান জানিয়ে পত্র লিখেন। আগের যুদ্ধে বিজয়ের ফলে পৃথিরাজের মনোবল ছিল তুংগে। পৃথিরাজ সরাসরি এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠে। শিহাবুদ্দিন ঘুরি তরাইনের ময়দানে শিবির স্থাপন করেন। তিনি তার বাহিনীকে ৫ টি বিন্যাসে বিন্যস্ত করেন। 


দলগুলো হচ্ছে কুদাম ই লশকর (অগ্রবর্তী বাহিনী), মাইমনা (ডান দল), মাইসারা (বাম দল), কালব (মধ্যবর্তী বাহিনী) এবং খালফ (পশ্চাতের বাহিনী)।


রাজপুতদের অধিনে ছিল তিন লাখ সৈন্যের বিশাল বাহিনী। তাদের নেতৃত্বে ছিল পৃথিরাজ ও খান্ডে রাও। পৃথিরাজের সাথে আরো প্রায় দেড়শো রাজপুত রাজা সসৈন্যে যোগ দেয়। ঘুরি এ যুদ্ধে একটি কৌশল অবলম্বন করেন। তিনি তার একটি বাহিনীকে রিজার্ভ রেখে অন্য চার বাহিনী নিয়ে রাজপুতদের উপর ঝাপিয়ে পড়েন। আগের যুদ্ধে হাতির মুখোমুখি হয়ে মুসলিম সেনাদের অভিজ্ঞতা হয়েছে। এই যুদ্ধে মুসলিম সেনারা হাতির চোখ লক্ষ্য করে তীর মারতে থাকে। তীব্র যন্ত্রনায় অস্থির হয়ে হাতি তার মাহুতকে ফেলে দিত। এবং দিক হারিয়ে এদিক সেদিক দৌড় দিত। এতে রাজপুত বাহিনীর মাঝে বিশৃংখলা ছড়িয়ে পড়ে। 


দুপক্ষেই ব্যাপক হতাহত হতে থাকে। সারাদিন লড়াই চলে। সন্ধ্যার সময় দু বাহিনীই যখন ক্লান্ত, তখন শিহাবুদ্দিন ঘুরী তার রিজার্ভ বাহিনীকে ময়দানে নামান। এই বাহিনী ছিল তাজাদম। তারা পূন্য উদ্যোমে রাজপুতদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। এবার যুদ্ধের ছক পাল্টে যায়। রাজপুত বাহিনী তীব্র আক্রমনের শিকার হয়। এর মধ্যে পৃথিরাজের প্রধান সেনাপতি খান্ডে রায় নিহত হলে রাজপুতদের মনোবল ভেঙ্গে যায়। তারা পালাতে থাকে। হাজার হাজার রাজপুত সেনা নিহত হয়। এমনকি পৃথিরাজ পালিয়ে দিল্লির দিকে চলে যান। ঘুরির সেনারা তাকে ধাওয়া করে বন্দী করে। 


ঘুরি সাম্রাজ্য। ঘুরি সালতানাত

পৃথিরাজের পরাজয় ও বন্দী হওয়ার মধ্যে দিয়ে আজমির  ঘুরির দখলে আসে। তার বিশ্বস্ত সেনাপতি কুতুবুদ্দিন আইবেককে দিল্লি আক্রমনের নির্দেশ দিয়ে ঘুরি দেশে ফিরে যান। ঘুরির ফিরে যাওয়ার সংবাদ শুনে রাজা জয়চন্দ্র তার বাহিনী প্রস্তুত করতে থাকে লড়াইয়ের জন্য। তার অভিসন্ধি জেনে ১১৯৪ খ্রিস্টাব্দে শিহাবুদ্দিন ঘুরী আবার ভারতে হামলা চালান। যমুনার তীরে ফিরোজাবাদের চন্দবারে জয়চন্দ্রের বাহিনীর সাথে তার লড়াই হয়। যুদ্ধে জয়চন্দ্রের চোখে তীর লাগে। জয়চন্দ্র হাতি থেকে পড়ে পিষ্ট হয়ে যায়। যুদ্ধ শেষে তার সোনা দিয়ে বাধানো দাত দেখে তার পরিচয় নিশ্চিত করা হয়। সেবছর কুতুবুদ্দিন আইবেক গুজরাটের রাজধানী পাটনা জয় করেন। 


১২০৬ খ্রিস্টাব্দে পাঞ্জাবের গোখররা বিদ্রোহ করে। তাদের দমনের জন্য শিহাবুদ্দিন ঘুরি এগিয়ে আসেন। কুতুবুদ্দিন আইবেকও তার সাহায্যে এগিয়ে যান। উভয়ে মিলে খোখরদের পরাজিত করেন। ঘুরি এবার লাহোর চলে আসেন। এখানে একটি অনুষ্ঠান করে কুতুবুদ্দিন আইবেককে ভারতের শাসনকর্তা মনোনিত করেন। এভাবে কুতুবুদ্দিন আইবেক ভারতের প্রথম মুসলমান সুলতান হলেন। 


আনুষ্ঠানিকতা শেষে শিহাবুদ্দিন ঘুরি গজনি ফিরে যাচ্ছিলেন। ইবনুল আসিরের বর্ননানুযায়ী ২ শাবান তারিখে তিনি ঝিলামের তীরে যাত্রাবিরতী করেন। এটি বর্তমানে পাকিস্তানের পাঞ্জাবের অন্তর্গত। রাতের বেলা তাবুতে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ছিলেন। এসময় কয়েকজন খোখর তাবুতে প্রবেশ করে ছুরিকাঘাতে সুলতানকে হত্যা করে। পরে তার সাথীরা এসে দেখে তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় সিজদায় পড়ে আছেন। সেদিন ছিল ১২ মার্চ ১২০৬ খ্রিস্টাব্দ। অর্থাৎ ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ ঘুরি নিহত হন। 


তার হত্যাকারীর প্রকৃত পরিচয় নিয়ে কিছু মতপার্থক্য রয়েছে। কারো কারো মতে এই হত্যাকাণ্ড স্থানীয় গাখারদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছিল। আবার কারো মতে তিনি খোখার বা ইসমাইলিদের হাতে নিহত হয়েছিলেন।


হাসান নিজামি ও ঐতিহাসিক কাসেম ফিরিশতার বর্ণনা অনুযায়ী মুইজউদ্দিন গাখারদের হাতে নিহত হন। 


ঐতিহাসিক কাসেম ফিরিশতার পূর্বের সকল ঐতিহাসিক একমত যে গাখাররা নয় বরং খোখাররা মুইজকে হত্যা করে। এছাড়া কেউ দাবি করেন যে মুহাম্মদ ঘুরি ইসমাইলিদের হাতে নিহত হয়েছিলেন।


সুলতানের কোনো উত্তরসুরি নেই বলে দরবারের এক সদস্য দুঃখপ্রকাশ করলে মুইজউদ্দিন মুহাম্মদ ঘুরি উত্তর দেন:


"অন্য সম্রাটদের একজন বা দুইজন সন্তান থাকতে পারে কিন্তু আমার সহস্র সন্তান আছে, আমার তুর্কি মামলুকরা আমার শাসনের উত্তরাধিকারী হবে এবং এসকল অঞ্চলে তারা আমার পরে আমার নাম খুতবায় সংরক্ষণ করবে।"


মুইজউদ্দিন মুহাম্মদ ঘুরির অনুমান সত্য প্রমাণিত হয়। তার মৃত্যুর পর তার সাম্রাজ্য মামলুকদের মধ্যে বিভক্ত হয়। এদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলেন:


১. কুতুবউদ্দিন আইবেক (১২০৬ খ্রিষ্টাব্দে মুহাম্মদ ঘুরি কর্তৃক আনুষ্ঠানিক ভাবে দিল্লির শাসক হন এবং দিল্লি সালতানাত প্রতিষ্ঠা করেন। এর মাধ্যমে ভারতে মামলুক রাজবংশের সূচনা হয়।)

২. নাসিরউদ্দিন কাবাচা (১২১০ খ্রিষ্টাব্দে মুলতানের শাসক হন।)

৩. তাজউদ্দিন ইলদিজ (গজনির শাসক হন)

৪. ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খলজী (যিনি বাংলার শাসক হন)


মুইজউদ্দিনের স্মৃতির উদ্দেশ্যে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী তাদের তিনটি মধ্য-পাল্লার ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র মুইজউদ্দিনের নামে নামকরণ করেছে। এগুলো হল ঘুরি-১, ঘুরি-২ ও ঘুরি-৩


শিহাবুদ্দিন ঘুরি একজন দক্ষ সেনানায়ক ছিলেন। একইসাথে তিনি ছিলেন অসমসাহসী যোদ্ধা। একবার তিনি তরবারী হাতে শত্রুদের হাতিকে আঘাত করতে থাকেন এবং মেরে ফেলেন। তিনি সবার প্রতি সহানুভূতির আচরণ করতেন। সিয়ারু আলামিন নুবালায় ইমাম যাহাবি অন্য ইতিহাসবিদদের সুত্রে তার ইনসাফ ও ন্যায়বিচারের প্রশংসা করেছেন। 


কীওয়ার্ডঃ সুলতান শিহাবুদ্দিন ঘুরি, মুহাম্মদ ঘুরি, ঘুরি সাম্রাজ্য, মুহাম্মদ ঘুরী জীবনী, ঘুর রাজ্য কোথায় অবস্থিত, মুহাম্মদ ঘুরীর বিশ্বস্ত সেনাপতি কুতুবউদ্দিন আইবেক, মুহাম্মদ ঘুরির ভারত অভিযান, পৃথ্বীরাজ, খোখর, গাখার, ইসমাইলি।

Previous Post Next Post