হায়েজের মাসায়েল : করনীয় বর্জনীয়

হায়েজের মাসায়েল : করনীয় বর্জনীয়

হায়েজ একটি আরবি শব্দ। হায়েযের আভিধানিক অর্থ হলো প্রবাহিত হওয়া। শরীয়তের পরিভাষায় নির্দিষ্ট সময় নারীর জরায়ুর গভীর থেকে কোনো অসুখ ও আঘাত ব্যতীত যে রক্ত প্রবাহিত হয় তাকেই হায়েজ বলা হয় । হায়েজ মনুষের স্বভাব ও প্রকৃতির মধ্যে একটি সাধর্ণ স্বভাব; যার ওপর আল্লাহ আদমের মেয়েদের সৃষ্টি করেছেন। নারীদের গর্ভাশয়ে আল্লাহ এ রক্ত সৃষ্টি করেছেন এজন্যে যে, যেনো গর্ভে থাকা বাচ্চা তা খাবার হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। প্রসবের পর এ রক্তই নারীর স্তনের দুধ হিসেবে রূপান্তরিত হয়। নারী গর্ভবতী বা দুগ্ধ দানকারিণী না হলে গর্ভাশয়ে সৃষ্ট রক্ত ব্যবহৃত হওয়ার কোনো স্থান থাকে না, তাই তা নির্দিষ্ট সময় জরায়ু দিয়ে নির্গত হয়। হায়েজকে আমাদের দেশে ঋতু, রজঃস্রাব, মাসিক ও পিরিয়ড ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। 


প্রতি মাসে বালেগা মেয়েদের স্বাভাবিকভাবে যে রক্তস্রাব হয়, তাকে হায়েয বলে। কুরআন ও হাদীছে এই রক্তকে নাপাক বলা হয়েছে। সাধারণত ৯ বৎসরের পূর্বে এ রক্ত দেখা দেয় না। ৯ বৎসর বয়সের পূর্বে এ ধরনের রক্ত দেখা দিলে তা হায়েযের রক্ত বলে গণ্য হবে না বরং ইস্তেহাযার রক্ত হিসেবে গণ্য হবে।


৫৫ বৎসর বয়সের পর সাধারণত হায়েযের রক্ত আসে না। অতএব ৫৫ বৎসর পার হওয়ার পরও কোন মেয়েলোকের রক্তস্রাব দেখা দিলে তার রং যদি লাল অথবা কালো হয় তাহলে তাকে হায়েযই মনে করতে হবে। রং যদি হলুদ বা সবুজ বা মেটে হয়, তাহলে তাকে হায়েয গণ্য করা হবে না বরং সেটা ইস্তেহাযা বলে গণ্য হবে। অবশ্য ঐ মেয়েলোকের যদি পূর্বেও হলুদ, সবুজ বা মেটে বর্ণের রক্তস্রাব হওয়ার অভ্যাস থেকে থাকে তাহলে ৫৫ বৎসরের পরও অনুরূপ বর্ণের রক্তকে হায়েয ধরা হবে। হায়েযের সময়সীমার মধ্যে লাল, হলদে, মেটে, সবুজ, কাল যে কোন প্রকার রং-এর রক্তকে হায়েযের রক্ত বলে গণ্য করা হবে। যখন সম্পূর্ণ সাদা রং দেখা দিবে তখন মনে করতে হবে যে, হায়েয বন্ধ হয়েছে। সাদা রংয়ের পূর্বে সব ধরনের রংই হায়েযের রং। হায়েজ বন্ধ হবার আলামত সাদা স্রাব।


রক্ত লজ্জাস্থানের বাইরে আসার পর (যোনি মুখের চামড়ার বাইরে না এলেও) থেকেই হায়েযের শুরু ধরা হবে। রক্ত ভিতরে থাকার কোন ধর্তব্য নেই। যদি ছিদ্রের মুখে তুলা দিয়ে রাখে তাহলে যতক্ষণ পর্যন্ত বাইরের তুলায় রক্তের দাগ দেখা না যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত নিজেকে পবিত্র মনে করবে। যখন রক্তের চিহ্ন বাইরে ছড়িয়ে পড়বে অথবা ছিদ্রের তুলা সরিয়ে দেয়ার পর রক্ত বের হতে শুরু করবে, তখন থেকে হায়েযের শুরু ধরতে হবে।


যদি এমন হয়, পবিত্র অবস্থায় লজ্জা স্থানের ভেতরে তুলা বা এজাতীয় কিছু রেখে ঘুমিয়ে ছিল। সকালে উঠে তার মধ্যে রক্তের দাগ নজরে পড়ল, তাহলে যখন থেকে দাগ নজরে পড়েছে তখন থেকে হায়েযের হিসাব শুরু হবে। 



হায়েযের সময়সীমাঃ 

হায়েযের সময়সীমা কমপক্ষে ৩ দিন ৩ রাত এবং সর্বোচ্চ সময়সীমা ১০ দিন ১০ রাত। হায়েযের সময়ে অর্থাৎ হায়েযের দিনগুলোতে সর্বক্ষণ রক্ত আসা জরুরী নয় বরং নিয়মমত রক্ত আসার পর অভ্যাসের দিনগুলিতে বা ১০ দিন ১০ রাতের ভিতরে মাঝে মধ্যে দুই চার ঘন্টা বা এক দিন আধ দিন রক্ত বন্ধ থেকে আবার এলেও সেই মাঝখানের সময়কেও হায়েযের সময় ধরা হবে। সাদা রংয়ের পূর্বে সব ধরনের রংই হায়েযের রং। হায়েজ বন্ধ হবার আলামত সাদা স্রাব।


হায়েযের মাসায়েলঃ 

যেহেতু হায়েযের সর্বনিম্ন সময়সীমা কমপক্ষে ৩ দিন ৩ রাত আর সর্বোচ্চ সময়সীমা ১০ দিন ১০ রাত, অতএব কোন স্ত্রীলোকের ৩ দিন ৩ রাতের কম রক্তস্রাব হলে হায়েযের রক্ত বলে গণ্য হবে না, তাকে ইস্তেহাযার রক্ত ধরা হবে। এমনিভাবে ১০ দিন ১০ রাতের অধিক রক্তস্রাব হলে সর্বশেষ যে হায়েয এসেছিল তার চেয়ে যে কয়দিন বেশী হবে সে কয়দিনের রক্ত হায়েযের রক্ত বলে গণ্য হবে না, তাকে ইস্তেহাযার রক্ত ধরা হবে। ইস্তেহাযার মাসায়েল পরে আলোচনা করা হয়েছে।


যদি কোন মেয়েলোকের জীবনের প্রথম রক্তস্রাব শুরু হয়েই ১০ দিনের চেয়ে বেশী হয়ে যায়, তাহলে তার ক্ষেত্রে মাসআলা হল সে ১০ দিন ১০ রাত হায়েয গণ্য করবে, অবশিষ্ট দিনগুলো এস্তেহাযা গণ্য করবে। আর যদি এরূপ মেয়েলোকের রক্ত বরাবর জারী থাকে মোটেই বন্ধ না হয়, তাহলে প্রতিমাসে ১০ দিন ১০ রাত হায়েয এবং মাসের অবশিষ্ট দিনগুলো এস্তেহাযা গণ্য করবে।


দুই হায়েযের মধ্যবর্তী স্রাব বা পবিত্রতার কিছু মাসায়েলঃ

১. দুই হায়েযের মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে কমপক্ষে ১৫ দিন পবিত্র থাকার সময়। অতিরিক্ত কোন সময়সীমা নির্দিষ্ট নেই। অতএব যদি কোন মেয়েলোকের ১ অথবা ২ দিন রক্তস্রাব দেখা দেয়ার পর ১৫ দিন পাক থাকে এবং আবার ১ অথবা ২ দিন রক্ত দেখে তাহলে মাঝখানের ১৫ দিন পবিত্রতার সময় আর এদিক ওদিক যে ১ বা ২ দিন রক্ত দেখেছে তা হায়েয নয় বরং তা ইস্তোহাযা। কারণ ৩ দিনের কম হায়েয হয় না।


২. যদি কোন মেয়েলোকের ৩ দিন ও রাত রক্ত দেখা দেয়, তারপর ১৫ দিন পাক থাকে; আবার ৩ দিন ৩ রাত রক্ত দেখা দেয়, তাহলে পীর্বের ৩ দিন ৩ রাত এবং পরের ৩ দিন ৩ রাত হায়েয ধরা হবে আর মধ্যকার দিনগুলি পাক থাকার সময় কোন স্ত্রীলোকের ৩ দিনের কম ১ অথবা ২ দিন রক্তস্রাব হয়ে পুনরায় ১ অথবা ২ দিন পাক থাকার পর আবারও যদি রক্তস্রাব দেখা দেয়, তবে সবগুলোকে হায়েয ধরে নিতে হবে।


৩. কারও ১ অথবা ২ দিন রক্তস্রাব দেখা দেয়ার পর ১৫ দিনের কম অর্থাৎ, ১০/১২ দিন রক্তস্রাব বন্ধ রইল, তারপর আবার রক্তস্রাব দেখা দিল, এমতাবস্থায় যত দিন অভ্যাসের দিন ছিল, ততদিন হায়েয গণনা করা হবে, অবশিষ্ট দিনগুলো ইস্তেহাযা হিসেবে ধরে নিতে হবে।


৪. যদি কোন মেয়েলোকের এক হায়েয শেষ হওয়ার পর ১৫ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর আবার রক্ত দেখা দেয় এবং সে এটাকে হায়েয মনে করে ছেড়ে দিতে থাকে আর ৩ দিন ৩ পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই সে রক্ত বন্ধ হয়ে যায় এবং তারপর আবার ১৫/২০ দিন কোন রক্ত দেখা না যায়, তাহলে (বুঝতে হবে এই রক্ত হায়েযের রক্ত নয়; কেননা ৩ দিন ৩ রাতের কম হায়েয হয় না। অতএব) হায়েয মনে করে যে নামাযগুলো ছেড়ে দিয়েছিল তার কাযা করতে হবে । (দুই হায়েযের মধ্যবর্তী কয়েক মাস বা বৎসর পর্যন্ত যদি রক্ত দেখা না দেয়, তবুও পুরো সময়কে পাক ধরতে হবে।) 


লিকুরিয়া বা সাদা স্রাবের মাসায়েলঃ

স্ত্রীলোকের জরায়ু প্রবাহনের ফলে যে রস বা সাদা স্রাব (লিকুরিয়া) নির্গত হয়, এতে উযূ নষ্ট হয়, গোসল করা আবশ্যক হয় না। আজকাল অনেক মহিলাদেরই এ রোগ দেখা যায়। তাই এর মাসায়েল ভালভাবে বুঝে নেয়া চাই ।

 

যদি সর্বক্ষণ এই স্রাব বের হতে থাকে এবং পুরো ওয়াক্তের মধ্যে এতটুকু সময়ও না পায় যাতে পবিত্র হয়ে নামায পড়ে নিতে পারে, তাহলে সে মাযূর বলে গণ্য হবে। এমতাবস্থায় সে প্রত্যেক নামাযের সময় নতুন উযূ করে নামায আদায় করে নিবে এবং উযূর পূর্বে স্রাব ধৌত করে নিবে। এমতাবস্থায় নামাযের মধ্যে স্রাব দেখা দিলেও সে অবস্থায় সে কাপড়েই নামায হয়ে যাবে । আর যদি মাঝে মধ্যে এই স্রাব দেখা দেয় এবং মাঝে মধ্যে বন্ধ থাকে, তাহলে সে বন্ধ থাকার সময়ে নামায পড়ে নিবে। এমতাবস্থায় নামাযের মধ্যে স্রাব দেখা দিলে নামায ছেড়ে দিয়ে পুনরায় উযূ করে নামায পড়বে এবং কাপড়ে লেগে থাকলে কাপড়ও পরিবর্তন করে নিবে।


হায়েযের অভ্যাস পরিবর্তন হওয়া সংক্রান্ত মাসায়েলঃ 

১. কোন স্ত্রীলোকের সাধারণভাবে প্রত্যেক মাসে ৩ দিন রক্তস্রাব হয়, তার হায়েযের সময়সীমা ৩ দিন ধরে নিতে হবে, এটাই তার অভ্যাস। কোন মাসে তার ৭ দিন রক্তস্রাব হলে সেটাকেও হায়েয মনে করতে হবে, কেননা হায়েযের সর্বোচ্চ সীমা ১০ দিন। তবে পরবর্তী কোন মাসে তার রক্তস্রাব ১০ দিনের বেশী হলে যেমন ১২ দিন অথবা ১৫ দিন হলে, তখন পূর্ববর্তী মাসে যে কয়দিন রক্ত এসেছিল সেই কয়দিন হায়েয হিসেবে পরিগণিত হবে। অবশিষ্ট দিনগুলোকে ইস্তেহাযা ধরে নিতে হবে ।


২. কোন স্ত্রীলোকের হায়েযের অভ্যাস ৩ দিন, কিন্তু একমাসে তার ৪ দিন স্রাব হলো। তার পরবর্তী মাসে ১৫ দিন স্রাব হল, এমতাবস্থায় যেহেতু এক মাসে তার ৪ দিন রক্ত এসেছিল, সে জন্য তার অভ্যাস ৪ দিনই মনে করে নিতে হবে। অবশিষ্ট দিনগুলোর নামায কাযা করতে হবে। তবে এ কাযা আদায় করার জন্য ১০ দিন বিলম্ব করতে হবে। কেননা ১০ দিন পর্যন্ত অভ্যাস পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু ১০ দিন চলে যাওয়ার পরও রক্ত বন্ধ না হওয়ায় পরিষ্কার ধরে নিতে হবে যে, ৪ দিনের চেয়ে যতগুলো দিন বেশী রক্তস্রাব হয়েছে সেগুলো ইস্তেহাযার রক্ত। আর যে মাসে তার ৮ দিন অথবা ৯ দিন অথবা ১০ দিন রক্তস্রাব হয়, তখন পূর্ববর্তী অভ্যাস ধর্তব্য হবে না। বরং এই ৮ অথবা ৯ অথবা ১০ দিনই তার হায়েয। কেননা ১০ দিন পর্যন্ত হায়েযের সর্বোচ্চ মেয়াদ। মনে করতে হবে তার অভ্যাস পরিবর্তন হয়েছে! অবশ্য ১০ দিনের বেশী রক্তস্রাব হলে পূর্বের মাসের ঐ ৪ দিনকেই তার অভ্যাসের দিন বলে মনে রাখতে হবে।


৩. কারও অভ্যাস ৩ দিনের। হঠাৎ এক মাসে দেখা গেল ৩ দিনের পরও স্রাব বন্ধ হয়নি, তাহলে গোসল করার দরকার নেই। নামাযও পড়তে হবে না। যদি ১০ দিনের মধ্যে রক্ত বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে সেটা হায়েয এবং সব নামায মাফ। মনে করতে হবে অভ্যাসের পরিবর্তন ঘটেছে। আর যদি ১০ দিনের পরে একাদশ দিনে বা দ্বাদশ দিনে বা আরও পরে রক্ত বন্ধ হয়, তাহলে মনে করতে হবে ৩ দিন হায়েয ছিল, বাকিটা ইস্তেহাযা। তাই গোসল করে ৩ দিন বাদ দিয়ে বাকি দিনের নামায কাযা করতে হবে।


সার কথা এই যে, ১০ দিন পার হয়ে গেলে অভ্যাসের অতিরিক্ত দিনগুলোর রক্তস্রাবকে নিঃসন্দেহে ইস্তেহাযা মনে করতে হবে। কিন্তু ১০ দিনের মধ্যে রক্তস্রাবের অভ্যাস সর্বদা পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যেমন সর্বদা ৪ দিন রক্তস্রাব হতো, মুহাররম মাসে ৫ দিন আসলো, আবার সফর মাসে ১২ দিন আসলো, তখন ঐ ৫ দিনকেই তার অভ্যাস মনে করতে হবে। কিন্তু সফর মাসে ৯ দিন এসে থাকলে মনে করতে হবে যে, তার অভ্যাস পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। কেননা ১০ দিনের মধ্যে অভ্যাস পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।


হায়েয চলাকালীন ও হায়েয শেষে নামায রোযার মাসায়েলঃ 

১. হায়েযের সময় গুলোতে নামায পড়া, রোযা রাখা নিষেধ। তবে নামায ও রোযার মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। নামায পরিপূর্ণভাবে মাফ হয়ে যায়, আর কখনো কাযা করতে হয় না। কিন্তু রোযা সাময়িক মাফ হয়। হায়েয শেষে আবার রোযার কাযা করতে হয়। 


২. ফরয নামায পড়াকালে যদি হায়েয দেখা দেয়, তাহলে সেই নামায ফাসেদ হয়ে যাবে, সেই চলতি নামাযও মাফ হয়ে যাবে । হায়েজ শেষে সেটার কাযা পড়তে হবে না। নফল বা সুন্নাত নামায পড়াকালে রক্ত দেখা দিলে সে নামায ফাসেদ হয়ে যাবে এবং সেটা পরে কাযা করতে হবে।


৩. ওয়াক্তের নামায এখনো পড়েনি, কিন্তু নামায পড়ার মত সময় এখনো আছে, অর্থাৎ ওয়াক্তের শেষ অবস্থা, এমতাবস্থায় যদি হায়েয শুরু হয়, তাহলে সেই ওয়াক্তের নামাযও মাফ হয়ে যাবে, কাযা পড়তে হবে না।


৪. রোযা শুরু করার পর যদি হায়েয দেখা দেয়, তাহলে সেটারও পরে কাযা করতে হবে, চাই সেটা ফরয রোযা হোক বা নফল রোযা। যদি কারও ১০ দিনের কম সময় স্রাব হয় এবং এমন সময় গিয়ে রক্ত বন্ধ হয়, যদি খুব তাড়াহুড়া করে গোসল করে নেয়, তাহলে পবিত্রতার পর এতটুকু সময় থাকবে, যার মধ্যে একবার 'আল্লাহু আকবার' বলে নামাযের নিয়ত বাধা যায়, তাহলেও সেই ওয়াক্তের নামায ওয়াজিব হবে। এমতাবস্থায় নামায শুরু করার পর যদি ওয়াক্ত শেষ হয়ে যায়, তবুও নামায পুরা করে নিবে। তবে ফজরের ওয়াক্ত হলে যদি নামায শুরু করার পর সূর্য উদিত হয়ে যায়, তাহলে সে নামায কাযা করতে হবে। আর যদি সময় তার চেয়ে বা অর্থাৎ, এমন সময় গিয়ে রক্ত বন্ধ হয়, যে খুব ভাড়াহুড়া করে গোসল অনে নিয়ে পবিত্রতা অর্জনের পর এতটুকু সময় থাকবে না, যার মধ্যে 'আল্লাহু আকবার' বলে নামাযের নিয়ত বাধা যায়, তাহলে সেই নামায মাফ, তার কাযা করতে হবে না।


৫. যদি পরিপূর্ণ ১০ দিন ১০ রাত হায়েয হয় এবং এমন সময় দथ হয়, যার মধ্যে শুধু একবার 'আল্লাহু আকবার' বলার সময় আছে, তার এই নামাযের সময় শেষ, গোসলেরও সময় নেই। তবুও ঐ ওয়াক্তের নগর ওয়াজিব হবে। পরে কাযা পড়তে হবে ।


যদি কেউ পূর্ণ ১০ দিন ১০ রাত পর রাতের শেষভাগে গিয়ে পবিত্র হয়, যখন পাক হয়েছে তখন রাতের এতটুকু সময়ও হাতে নেই, যার মধ্যে একবার আল্লাহু আকবার বলতে পারে। তবুও পরের দিনের রোযা ওয়াজিব। আর যদি ১০ দিনের কমেই হায়েয বন্ধ হয় এবং এতটুকু রাত অবশিষ্ট থাকে, যার মধ্যে তড়িঘড়ি করে গোসল করে নিতে পারে তবে একবার ‘আল্লাহু আকবার'ও বলা যায় না, তবুও পরের দিনের রোযা ওয়াজিব হবে। এমতাবস্থায় গোসল না করে থাকলে গোসল ছাড়াই রোযার নিয়ত করে নিবে ! সকাল বেলায় গোসল করে নিবে। আর যদি সময় তার চেয়েও কম থাকে, অর্থাৎ, গোসল করা পরিমাণ সময়ও না থাকে, তাহলে রোযা জায়েয হবে না। তাই সে রোযা রাখবে না, তবে সারাদিন তাকে রোযাদারের মতই থাকতে হবে। পরে কাযা করতে হবে।


৬. এক বা দুই দিন হায়েয হওয়ার পর রক্ত বন্ধ হয়ে গেলে গোসল ওয়াজিব হয় না। উযূ করে নামায পড়তে থাকবে। তবে এখনই সহবাস করা দোরস্ত নয়। যদি ১৫ দিনের মধ্যে আবার স্রাব শুরু হয়, তাহলে প্রমাণিত হবে সেটা হায়েযের সময় ছিল। এমতাবস্থায় হিসাব করে যত দিন হায়েযের সেটাকে হায়েয মনে করবে। এবং এখন গোসল করে নামায পড়তে শুরু করবে। আর যদি পূর্ণ ১৫ দিন রক্ত দেখা না যায়, তাহলে মনে করতে হবে সেটা ইস্তেহাযার রক্ত ছিল । সুতরাং সেই সময়ে বাদ পড়া নামাযগুলোর কাযা পড়তে হবে ।


 যদি কোন মেয়েলোকের এক হায়েয শেষ হওয়ার পর ১৫ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর আমার রক্ত দেখা দেয় এবং সে এটাকে হায়েয মনে করে নামায ছেড়ে দিতে থাকে আর ৩ দিন ৩ রাত পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই সে রক্ত বন্ধ হয়ে যায় এবং তারপর আবার ১৫/২০ দিন কোন রক্ত দেখা না যায়, তাহলে হায়েয মনে করে যে নামাযগুলো ছেড়ে দিয়েছিল তার কাযা করতে হবে।


৭. হায়েযের অবস্থায় যে কাপড় পরিহিত ছিল, সে কাপড়ে যদি হায়েযের নাপাকী বা অন্য কোন নাপাকী না লেগে থাকে, তাহলে সে কাপড় ব্যবহার করে নামায আদায় করাতে কোন ক্ষতি নেই। যদি কোন স্থানে নাপাকী লেগে থাকে, তাহলে সে স্থানটুকু ধৌত করে তাতে নামায পড়া যাবে, পুরো কাপড় ধৌত করা জরুরী নয় ।



৮. যদি রমযান মাসে দিনের বেলায় হায়েয বন্ধ হয়, তাহলে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোযাদারের মতই থাকতে হবে, পানাহার করতে পারবে না। অবশ্য পরে এ দিনটির রোযারও কাযা করতে হবে।


হায়েয চলাকালীন ও হায়েয শেষে সহবাসের মাসায়েলঃ

১.  হায়েয চলাকালীন সময়ে সহবাস জায়েয নেই। সহবাস ছাড়া আর সব কিছুই জায়েয। অর্থাৎ একসাথে খানা-পিনা করা, বিশ্রাম ও শয্যাগ্রহণ করা সবই জায়েয। 


২. স্বামী স্ত্রীর হাটু থেকে নাভি পর্যন্ত স্থানে তার কোন অঙ্গ স্পর্শ করে লজ্জত হাসেল করতে পারবে না। এ অবস্থায় স্বামী-স্ত্রী যৌন তৃপ্তি মেটাতে পারে না, শরীয়ত মতে তা হারাম, হেকিমী মতেও এ অবস্থায় যৌন ব্যবহার স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। স্বামী এরূপ করতে চাইলে স্ত্রীর কর্তব্য স্বামীকে নরমে বুঝিয়ে বিরত রাখবে। হায়েয অবস্থায় স্ত্রীর সম্মতিতে সহবাস হলে স্ত্রীও গোনাহগার হবে।


৩. স্বামী তার হায়েযা স্ত্রীর নাভীর নীচ হতে হাটু পর্যন্ত স্থানে হাত বা কোন অঙ্গ লাগাবে না। নাভীর উপর থেকে মাথা পর্যন্ত অন্যান্য স্থানে হাত লাগাতে পারবে, চুমু দিতে পারবে। হায়েয অবস্থায় মহিলার শরীর ও মুখের লালা পবিত্র।  যদি শরীরে রক্ত বা অন্য কোন নাপাকী লাগে তাহলে ভিন্ন কথা। সেক্ষেত্রে শরীর নাপাক হবে। অন্যথায় শুধু হায়েযের কারণে তার শরীর নাপাক বলে গণ্য হবে না।


অতএব হায়েয অবস্থায় তার শরীরের সাথে ছোয়া লাগলে বা স্বামী স্ত্রীর মুখের মধ্যে জিহ্বা প্রবেশ করালে তাতে কোন ক্ষতি নেই ।


৪. যদি কারও ১০ দিনের মধ্যেই অভ্যাস মোতাবেক ৫ দিন, ৬ দিন, ৭ দিন, ৮ দিন অথবা ৯ দিনে হায়েয বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে গোসল না করা পর্যন্ত তার সাথে সহবাস জায়েয হবে না। হ্যাঁ, যদি এক ওয়াক্ত নামাযের সময় চলে যায় অর্থাৎ, এতটুকু সময় অতিবাহিত হয়ে যায় যার মধ্যে গোসল সেরে তাকবীরে তাহরীমা বাধতে পারা যায় এবং তার উপর এক ওয়াক্ত নামাযের কাযা ওয়াজিব হয়, তারপর গোসলের পূর্বেও সহবাস জায়েয হবে।


৫. যদি কারও অভ্যাস অনুযায়ী হায়েযের যে কয়দিন ছিল তার পূর্বেই স্রাব বন্ধ হয়ে যায়, যেমন অভ্যাস ছিল ৫ দিনের; ৪ দিনেই রক্ত বন্ধ হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় গোসল করে নামায পড়া ওয়াজিব। কিন্তু সহবাস জায়েয হবে না। কারণ, হতে পারে আবার স্রাব শুরু হয়ে যাবে। ৫ দিন পার হওয়ার পর সহবাস জায়েয হবে।


যদি পরিপূর্ণ ১০ দিন ১০ রাত হায়েয হয় এবং হায়েয বন্ধ হওয়ার পরও অলসতা বশতঃ স্ত্রী গোসল না করে, তাহলে গোসলের পূর্বেও সহবাস জায়েয হবে। তবে গোসলের পূর্বে সহবাস থেকে বিরত থাকা উত্তম । এটাই পবিত্র মানসিকতার পরিচায়ক।


৬. ১ বা ২ দিন হায়েয হওয়ার পর রক্ত বন্ধ হয়ে গেলে গোসল ওয়াজিব হয় না। উযূ করে নামায পড়তে থাকবে। কেননা হায়েযের সর্বনিম্ন সময় ৩ দিন ৩ রাত। ৩ দিন ৩ রাতের কম স্রাব হলে তা হায়েয বলে গণ্য হয় না। তবে এখনই সহবাস করা দোরস্ত হবে না। কেননা যদি ১৫ দিনের মধ্যে আবার স্রাব শুরু হয়, তাহলে প্রমাণিত হবে সেটা হায়েযের সময় ছিল।


কীওয়ার্ডঃ হায়েজ অবস্থায় করণীয়, হায়েজ বন্ধ হওয়ার লক্ষন, হায়েজ অবস্থায় রোজা, হায়েজ থেকে পবিত্র হওয়ার মাসায়েল, হায়েজ অবস্থায় সহবাস, হায়েজের মাসায়েল, হায়েজ অবস্থায় নামাজ, হায়েজের রক্তের রং, হায়েজের সময়সীমা, হায়েজের পরিচিতি, হায়েজের সময়কাল, হায়েজের বিধান, হায়েজের পর নামায, হায়েজের সময় কোরআন, হায়েজের রং।

Previous Post Next Post