নেফাসের মাসায়েল : নেফাস সম্পর্কে যা-কিছু অবশ্যই জানবেন

নেফাসের মাসায়েল ছবি


নেফাসের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ‘জন্ম’। সন্তান প্রসবের পর স্ত্রীলোকের জরায়ু থেকে যে রক্ত বের হয় তাকে ইসলামী শরীআতের পরিভাষায় ‘নেফাস’ বলা হয়। [হিদায়া, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৬৯] এক গর্ভে একাধিক সন্তান হলে (৬ মাসের মধ্যে) প্রথম বাচ্চা প্রসবের পর থেকেই নেফাসের মেয়াদ গণনা করা শুরু করা হবে। দ্বিতীয় সন্তান থেকে নয়। 


নেফাসের সময়সীমা- নিফাসের সময়কাল উর্ধ্বে চল্লিশ দিন। আর কমের নির্দিষ্ট সীমা নেই।[ফতওয়ায়ে আলমগীরী, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৩৭] ৪০ দিনের পরেও রক্ত আসতে থাকলে সেটা নেফাসের রক্ত বলে গণ্য হবেনা বরং সেটাকে ইস্তেহাযার রক্ত বলে গণ্য করা হবে। ইস্তেহাযা সম্পর্কে পরে আলোচনা করা হয়েছে। এ সম্পর্কে মুসনাদে দারেমীর রেওয়ায়েতটি হলো-


 أخبرنا جعفر بن عون أنا إسماعيل بن مسلم، عن الحسن عن عثمان بن أبي العاص، قال: وقت النفساء أربعين يوما، فإن طهرت وإلا فلا تجاوزه حتى تصلي.


‘‘উসমান ইবনে আবুল আস রাযিআল্লাহু আনহু বলেন, নেফাসগ্রস্ত মহিলাদের সময়সীমা চল্লিশ দিন। তবে যদি এর আগেই পবিত্র হয়ে যায়, (তাহলে  পবিত্রতার বিধান শুরু হয়ে যাবে।) অন্যথায় চল্লিশ দিন পর নামায শুরু করতে বিলম্ব করবে না।’’


নেফাসের সর্বনিম্ন সময়ের কোন সীমা নেই। দুই চার ঘন্টা বা দুই চার দিন বা পাঁচ দশ দিন ইত্যাদি যে কোন পরিমাণ সময়ের মধ্যে রক্ত বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এমনকি সন্তান প্রসবের পর রক্ত একেবারেই নাও আসতে পারে।


প্রসবের পর যদি কারও একেবারেই রক্ত না যায়, তবুও তাকে গোসল করতে হবে। এই গোসল ফরয। নেফাসের সময়সীমার মধ্যে সর্বক্ষণ রক্ত আসা জরুরী নয় বরং মেয়াদের ভিতরে মাঝে মধ্যে দুই চার ঘন্টা বা দুই এক দিন রক্ত বন্ধ থেকে আবার এলেও সেই মাঝখানের সময়কেও নেফাসের সময় ধরা হবে।


নেফাসের মাসায়েল- ৪০ দিনের কম সময়ের মধ্যে রক্তস্রাব বন্ধ হয়ে গেলে গোসল করে নিতে হবে। নিজেকে পাক মনে করে নামায পড়া আরম্ভ করতে হবে। কোন কোন এলাকায় মহিলাদের মধ্যে প্রচলন আছে যে, ৪০ দিনের আগে রক্ত বন্ধ হলেও ৪০ দিন পর্যন্ত নামায থেকে বিরত থাকে, এটা ঠিক নয় । ৪০ দিনেও রক্ত বন্ধ না হলে এবং এটা মহিলার জীবনের প্রথম নেফাস হয়ে থাকলে ৪০ দিনে নেফাস শেষ ধরা হবে এবং গোসল করে নিয়ে নামায পড়া শুরু করতে হবে। ৪০ দিনের অতিরিক্ত দিনগুলোর রক্তস্রাব ইস্তেহাযা হিসেবে ধরে নিতে হবে। সেমতে এস্তেহাযার মাসায়েল অনুযায়ী প্রতি ওয়াক্তে নতুন উযূ করে নামায পড়তে থাকবে। আর এটা মহিলার জীবনে প্রথম নেফাস না হয়ে থাকলে পূর্ববর্তী নেফাসে যে কয়দিন রক্তস্রাব এসেছিল সে কয়দিন পরই তাকে পবিত্র ধরা হবে। তার চেয়ে অতিরিক্ত সব দিনগুলোকে এস্তেহাযা ধরে নিতে হবে। অভ্যাসের অতিরিক্ত যে কয়দিনকে সে নেফাস মনে করে নামায ছেড়ে দিয়েছে তার কাযা করতে হবে।


কোন মেয়েলোকের হয়তো ৩০ দিন রক্ত যাওয়ার অভ্যাস ছিল, কিন্তু একবার ৩০ দিন অতিক্রম হওয়ার পরও রক্ত বন্ধ হল না; এমতাবস্থায় এই মেয়েলোক এখন গোসল না করে অপেক্ষা করবে। অতঃপর যদি পূর্ণ ৪০ দিন শেষে বা ৪০ দিনের ভিতর রক্ত বন্ধ হয়, তাহলে এই সব কয় দিনই নেফাসের মধ্যে গণ্য হবে। পক্ষান্তরে যদি ৪০ দিনের বেশী রক্ত জারী থাকে, তাহলে পূর্বের অভ্যাস মোতাবেক ৩০ দিন নেফাসের মধ্যে গণ্য হবে এবং অবশিষ্ট দিনগুলো ইস্তেহাযা বলে গণ্য হবে। ৪০ দিন পর গোসল করে নামায পড়তে থাকবে এবং ৩০ দিনের পরের ১০ দিনের নামাযের কাযা করবে।


নেফাসের সময় সহবাস- হাটু থেকে নাভি পর্যন্ত স্থান ভোগ করা জায়েয নেই। তবে একসাথে খানা-পিনা বিশ্রাম ও শয্যাগ্রহণ সবই জায়েয। হায়েজ অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করলে এক নাম্বার ক্ষতি হল, আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিধানকে লঙ্ঘণ করা হয়। এর চেয়ে বড় ক্ষতি আর কিছুই হতে পারে না। যে কর্মের মাধ্যমে মহান রাব্বুল আলামীন অসন্তুষ্ট হোন। তার বিধান লঙ্ঘিত হয়। এর চেয়ে ক্ষতি আর কী হতে পারে?


হায়েজ অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করা হারাম। পবিত্র কুরআন ও হাদীসে এ সময়ে সহবাস করতে পরিস্কার নিষেধাজ্ঞা আসছেঃ


وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الْمَحِيضِ ۖ قُلْ هُوَ أَذًى فَاعْتَزِلُوا النِّسَاءَ فِي الْمَحِيضِ ۖ وَلَا تَقْرَبُوهُنَّ حَتَّىٰ يَطْهُرْنَ ۖ فَإِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ أَمَرَكُمُ اللَّهُ ۚ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ [٢:٢٢٢]


আর তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে হায়েয (ঋতু) সম্পর্কে। বলে দাও,এটা অশুচি। কাজেই তোমরা হায়েয অবস্থায় স্ত্রীগমন থেকে বিরত থাক। তখন পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হবে না,যতক্ষণ না তারা পবিত্র হয়ে যায়। যখন উত্তম রূপে পরিশুদ্ধ হয়ে যাবে,তখন গমন কর তাদের কাছে, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে হুকুম দিয়েছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন। [সূরা বাকারা-২২২]


عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْ أَتَى حَائِضًا، أَوِ امْرَأَةً فِي دُبُرِهَا، أَوْ كَاهِنًا، فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ.


 হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোন ঋতুবতীর সাথে মিলিত হয় কিংবা কোন মহিলার পশ্চাৎদ্বারে সঙ্গম করে অথবা কোন গণকের নিকটে যায়, নিশ্চয়ই সে মুহাম্মাদের উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তা অস্বীকার করে’। [তিরমিযী, হাদীস নং-১৩৫, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৬৩৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৯২৯০]


এছাড়া ডাক্তারদের মতেও এ সময় স্ত্রী সহবাস করা অনুচিত। কারণ এ সময় নারীরা অসুস্থ্য বোধ করে। স্রাবের রক্তের সাথে বিভিন্ন রোগের জীবানো বের হয়ে থাকে। যা সহবাসের মাধ্যমে পরস্পরের মাঝে ছড়িয়ে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা দেখা দেয়।


তাই শরীয়তের বিধানের পাশাপাশি ডাক্তারী মতেও এ সময় সহবাস করা থেকে বিরত থাকাই কর্তব্য।


হায়েজ নেফাছের সময় কোরআন পাঠ- ইদানিং অনেকেই বলার চেষ্টা করেন যে, হায়েজ ও নেফাস অবস্থায় মহিলাদের জন্য কুরআন ধরা নিষিদ্ধ, কিন্তু পড়তে কোন সমস্যা নেই।


তারা বলে, হায়েজ ও নেফাসের অবস্থায় কুরআন পড়া নিষেধ এটা মাযহাবী বক্তব্য। হাদীসের মাঝে এমন কোন বক্তব্য আসেনি। এমন বক্তব্যের জবাবে লুৎফুর রহমান ফরায়েজী সাহেব একটি উত্তর লিখেছেন। তা নিন্মে তুলে ধরা হলো। 


হাদীসকে সামনে রেখেই ফুকাহায়ে কেরাম লিখেছেন, হায়েজ ও নেফাসগ্রস্থ মহিলা কুরআন তিলাওয়াত করতে পারবে না। এটি শুধু মাযহাবী মতামত নয়, হাদীসে বর্ণিত বিধান। আর তিনি যেভাবে মাযহাবী বক্তব্য বলে তাচ্ছিল্য করলেন এর দ্বারা বুঝা যাচ্ছে, তিনি মাযহাব বিষয়ে ধারণা রাখেন না। মাযহাবতো কুরআন ও হাদীসের বাহিরের কোন কিছু নয়। বরং কুরআন ও হাদীসের বিধানের একটি বিন্যাস্ত রূপের নাম মাযহাব।


তো এটি মাযহাবী বক্তব্য কুরআন ও হাদীসের নয়, এমনটি বলাই অজ্ঞতা। কুরআন ও হাদীসের বক্তব্যের উল্টো মাযহাবের বক্তব্য হতেই পারে না।


عن إبراهيم قال : الحائض والجنب يذكران الله ويسميان (مصنف عبد الرزاق، كتاب الطهارة، باب الحائض تذكر الله ولا تقرأ القرآن، رقم الحديث)


অনুবাদ-হযরত ইবরাহীম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন-হায়েজ এবং গোসল ফরজ হওয়া ব্যক্তি আল্লাহর জিকির করতে পারবে, এবং তার নাম নিতে পারবে। {মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৩০৫, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-৯৮৯}


হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-ঋতুবতী মহিলা এবং গোসল ফরজ হওয়া ব্যক্তি কোরআন পড়বে না। {সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-১৩১, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-৯৯১, মুসনাদুর রাবী, হাদীস নং-১১, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১০৯০, মুসন্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-৩৮২৩}


হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ বলেছেন-মহিলারা হায়েজা অবস্থায় নামায পড়তে পারে না, এবং রোযাও রাখতে পারে না। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-২৯৮}



হায়েয ও নেফাস উভয়টার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য মাসায়েল- নিম্নের মাসআলাগুলো হায়েয ও নেফাস উভয় অবস্থার জন্য প্রযোজ্য বলে গন্য হবে।


১.  হায়েয, নেফাস অথবা অন্য যে কোন কারণে যে নারীর ওপর গোসল ওয়াজিব হয়ে পড়েছে তার জন্য মসজিদে যাওয়া হারাম। সে কা'বা শরীফ তওয়াফ করতে পারবে না; কুরআন শরীফ পড়তে পারবে না, স্পর্শ করতে পারবে না। হ্যাঁ, যদি কুরআন শরীফের উপর জুদান লাগানো থাকে অথবা রুমাল দিয়ে জড়ানো থাকে তাহলে জ্যুদান অথবা রুমালের উপর দিয়ে স্পর্শ করা জায়েয আছে। অনুরূপভাবে যদি কাগজ বা চামড়ার আস্তর থাকে এবং যদি সেটা কুরআন শরীফের সাথে সেলাই করা না হয় কিংবা আঠা দিয়ে আঁটকানো না থাকে, তাহলে তার উপর দিয়ে স্পর্শ করা জায়েয আছে। 


হায়েজ নিফাসওয়ালী মহিলার ক্ষেত্রে নামায পড়া নিষিদ্ধ, রোযা রাখা নিষিদ্ধ। কুরআন পড়া নিষিদ্ধ। গিলাফ ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা নিষিদ্ধ। মসজিদে প্রবেশ নিষিদ্ধ। বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করা নিষিদ্ধ। {বাদায়েউস সানায়ে’-১/১৬৩}


২. যে টাকা পয়সা বা বরতনে বা তাবীজে কুরআনের কোন আয়াত লেখা আছে উল্লেখিত জনেরা সেই টাকা পয়সা, তাবীজ এবং বরতনও স্পর্শ করতে পারবে না। হ্যাঁ, কোন থলি বা পাত্রে রাখলে সে থলি বা পাত্র স্পর্শ করতে পারবে এবং থলি বা পাত্রের গায়ে ধরে উঠাতেও পারবে। গায়ের জামা এবং ওড়না দিয়েও কুরআন শরীফ স্পর্শ করা এবং উঠানো জায়েয নয়। হ্যাঁ, গা থেকে আলাদা কাপড় দিয়ে ধরতে ও উঠাতে পারবে। যেমন রুমাল দিয়ে ধরে উঠাতে পারবে। যদি পরিপূর্ণ আয়াত তেলাওয়াত না করে বরং কোন একটি শব্দ অথবা আয়াতের অর্ধেকটা তেলাওয়াত করে তাহলে জায়েয আছে। অবশ্য সেই অর্ধেক আয়াতটিও ছোট কোন আয়াতের সমান হতে পারবে না।


৩. কোন মেয়ে হেফজ করা অবস্থায় হায়েজ এসে গেলে এবং মুখস্থ করার জন্য তেলাওয়াতের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে বা কোন হাফেজা মেয়ে হায়েয অবস্থায় কুরআন হেফজ্ রাখার জন্য তেলাওয়াত জারী রাখতে চাইলে, মনে মনে তেলাওয়াত করবে, মুখে উচ্চারণ করে নয়।


৪. সূরা ফাতেহা অথবা কুরআনে কারীমের অন্য কোন দু'আর আয়াত (যেমন আয়াতুল কুরছী) যদি তেলাওয়াতের নিয়তে না পড়ে বরং দু'আর নিয়তে পড়ে, তাহলে কোন গোনাহ নেই। দু'আ কুনূত পড়াও জায়েয আছে।


৫. যদি কোন মহিলা বাচ্চাদেরকে কুরআন শিক্ষা দেন তাহলে তিনি বানান করে পড়াতে পারবেন এবং রিডিং পড়ানোর সময় এক দুই শব্দ করে ভেঙ্গে আলাদা আলাদা শ্বাসে পড়তে পারবেন।


৬. হায়েয নেফাস অবস্থায় কালিমা, দুরূদ শরীফ, এস্তেগফার, আল্লাহ্র নাম নেয়া জায়েয  তাছাড়া কিছু নিয়মিত ওযীফাও পাঠ করা যায়। 


৭.হায়েয নেফাসের অবস্থায় নামাযের সময়ে উযু করে নামাযের স্থানে নামায আদায় পরিমাণ সময় বসে থেকে সুবহানাল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়তে থাকবে, যেন ইবাদতের অভ্যাস বজায় থাকে। এটা মোস্তাহাব। হায়েয অবস্থায় মহিলারা প্রতি নামাযের ওয়াক্তে সত্তর বার এস্তেগফার পাঠ করলে এক হাজার রাকআত নফল নামাযের ছওয়াব পাবে, সত্তরটা গোনাহ মাফ হবে এবং দরজা বুলন্দ হবে।


৮. গোসল ফরয ছিল, গোসলের পানি ছিল না, যখন পানি পাওয়া গেছে তখন হায়েয নেফাস শুরু হয়ে গেছে, মতাবস্থায় গোসলের প্রয়োজন নেই। স্রাব থেকে পাক হওয়ার পর একবারেই গোসল করে নিতে পারবে। কোন মহিলার বাচ্চা প্রসব হচ্ছে। কিছু (অর্ধেকের কম) বের হয়েছে। এমন অবস্থায় যদি হুঁশ থাকে, বিবেক সুস্থ থাকে, তাহলে নামায পড়া ওয়াজিব। কাযা করতে পারবে না। আর যদি বাচ্চার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে নামায পড়বে না। পরে কাযা পড়বে। অনুরূপভাবে ধাত্রী যদি মনে করে সে নামায পড়তে গেলে সদ্য প্রসূত শিশুটির ক্ষতি হবে, তাহলে সেও নামায কাযা করতে পারবে। সিজারকারী ডাক্তারও এই মাসআলা অনুযায়ী আমল করবেন।


৯. হায়েয ও নেফাসের পর সত্বর গোসল করে নামায আরম্ভ করতে হবে। রক্তস্রাব বন্ধ হওয়ার পর যত ওয়াক্তের নামায ছুটবে, তার জন্য পাপ হবে । হায়েয ও নেফাস অবস্থায় নামায, রোযা ও কুরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি নিষিদ্ধ। অবশ্য নামায ও রোযার মধ্যে পার্থক্য এই যে, হায়েয ও নেফাস অবস্থায় যে নামায ছুটে গিয়েছিল সেগুলোর কাযা করতে হবে না, মাফ হয়ে গেল। তবে পবিত্র হওয়ার পর রোযার কাযা আবশ্যক। হায়েয ও নেফাস অবস্থায় যিকির, দুরূদ, দুআ, এস্তেগফার ও কুরআন শরীফে যে দুআ আছে এগুলো পড়া যায়। স্বামী-স্ত্রী একত্রে উঠা-বসা ও খানা-পিনা করতে পারে, তবে যৌন তৃপ্তি মেটাতে পারে না, শরীয়ত মতে তা হারাম, এমন করা স্বাস্থ্যের পক্ষেও ক্ষতিকর।


Previous Post Next Post