সেলজুক সাম্রাজ্য, ইসলামি ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়।

সেলজুক সাম্রাজ্য

সেলজুকদের উৎপত্তি হয় কিনিক বসতি হতে। কিনিত, ওঘুজদের মূল ২৪ টি শাখার একটি। ওঘুজ বসতিগুলো মূলত মধ্যএশিয়া ও দক্ষিণপূর্ব রাশিয়ায় বাস করতো। ১১তম শতাব্দীর সময়ে কিনিক বসতির একটি দলের প্রধানের নাম ছিলো সেলজুক। এই দলটি হিজরত করে সীরদরিয়া নামক নদীর নিকটে স্থায়ী হয়, পরবর্তীতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। তারা প্রথমে ইরানের সামানি সাম্রাজ্য ও পরবর্তীতে গজনভীর মাহমুদের সীমান্ত প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত ছিলো।


সেলজুকের দুজন নাতির ছিলো। একজন চাগরি বে, অপরজন তুগরিল বে। পরবর্তীকালে এই চাগরি বে বৃহত্তর খোরাসান অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করতেন এবং তুগরিল বেগ ইরানের পশ্চিমাঞ্চল ও মেসোপটেমিয়া(ইরাক,সিরিয়া,জর্ডান,তুরষ্কের কিছু অংশ) অঞ্চলে একটি সাম্রাজ্যের ভীত গড়ে তোলেন।


সেলজুকরা যখন ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠতে শুরু করে, সীমান্তবর্তী অঞ্চলে লুটপাট করতে থাকে, তখন গজনভীর সুলতান মাসুদ এটাকে সাম্রাজ্যের হুমকি ভেবে সেলজুকদের সাথে ১০৪০ সালে যুদ্ধে জড়ায়। যুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে সেলজুকরা গজনভী সৈন্যদের উপর চোরাগোপ্তা হামলা চালানো শুরু করে, তাদের সরবরাহ ব্যবস্থা নষ্ট করে দেয়, পানির কুয়োগুলো দূরে সরিয়ে দেয়। ফলে গজনভীদের শৃঙ্খলা ও মনোবল নষ্ট হয়ে যায়। অবশেষে গজনভীদের ৫০০০০ সৈন্য, ১২ কিংবা ৬০ টি হাতির বিরুদ্ধে তুগরিল বে, চাগরি বে ১৬০০০ সৈন্য নিয়ে জয়লাভ করেন। 

তুগরিল বের কোনো সন্তান ছিলোনা। তুগরিল বের মৃত্যুর পর তার স্থলাভিষিক্ত হোন, চাগরি বের ছেলে আল্প আরস্লান। আল্প আরস্লানের বিষয়ে সকলের জানা। আল্প আরস্লান মানজিকার্ট/মালাজগির্ত জয় করে তুর্কিদের এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান। তার পরবর্তীতে তার ছেলে সুলতান মেলিকশাহ সাম্রাজ্যকে অনেকাংশে বিস্তার করেন। যার ফলশ্রুতি তৎকালীন সময়ের অর্ধপৃথিবী তাদের অধীনে ছিলো। তাদের মূল রাজধানী ছিলো ইরানের ইস্পাহানে। সেলজুক সাম্রাজ্যের পতাকা ছিলো গাঢ় নীল বর্ণের,মাঝখানে ধনুকে বসানো তীর। সেলজুকদের একটি অংশ সেসময় আনাতোলিয়ায় বসতি গাড়ে। আনাতোলিয়ার বসতিটির প্রধান ছিলেন কুতুলমিশ। 

কুতুলমিশ ছিলেন কিনিক বসতির দলপ্রধান সেলজুকের নাতি। এই আনাতোলিয়ান সেলজুক বসতির পতাকা ছিলো দুইমাথাওয়ালা ঈগল। কুতুলমিশ ছিলেন তুগরিল বের একজন সেনানায়ক। তিনি তুগরিল বের সাথে বিদ্রোহ করেন এবং আল্প আরস্লানের সাথে সিংহাসনের জন্য লড়াই করেন। পরবর্তীতে তার ছেলে কুতুলমিশওলু সুলেইমান শাহ নিজেও আল্প আরস্লান থেকে বৃহত্তর সেলজুক সাম্রাজ্যের সিংহাসন দখলের চেষ্টা করেন। ব্যার্থ হয়ে সে আনাতোলিয়ায় সালতানাতে রুম প্রতিষ্ঠা করে। 

মেলিকশাহর শাসনামলে সিরিয়ার সেলজুক প্রশাসক তাকে হত্যা করে এবং তার বংশধর কিলিচআরস্লান বন্দী হয়। তাকে ইস্পাহানে নিয়ে বন্দী করে রাখা হয়। সেলজুক সুলতান মেলিকশাহ মৃত্যুর পর তার একাধিক পুত্রসন্তান থাকায় তাদের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব শুরু হয়। চার সন্তান ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলের দখল নেন। এভাবেই পরাক্রমশালী সেলজুক সাম্রাজ্য নিঃশেষ হয়ে যায়। অপরদিকে মেলিকশাহর মৃত্যুর পর সুলেইমান শাহর ছেলে কিলিচআরস্লান মুক্ত হয়ে সালতানাতে রুম আবারো প্রতিষ্ঠা করেন। এই সাম্রাজ্যকেই সাধারণত আমরা সেলজুক সাম্রাজ্য বলে জেনে থাকি। 

আদতে এটি সালতানাতে রুম। সুলতান আলাউদ্দিনও এই সালতানাতে রুমের একজন সুলতান ছিলেন। মূল সেলজুক সাম্রাজ্য সুলতান মালিকশাহর মৃত্যুর পরপরই অস্তমিত হয়ে যায়। সুলতান আল্পআরস্লানসুলতান মেলিকশাহ ছিলেন সেলজুক সাম্রাজ্যের শক্তিধর সুলতান। যা পরবর্তীতে আর দেখা যায়নি ।


সম্পর্কিত পাতাঃ
২. মিকাইল বেগ




ট্যাগঃ সেলজুক সাম্রাজ্যের ইতিহাস/সেলজুক সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা/সেলজুকদের পরিচয়/



1 Comments

  1. সেলজুক সাম্রাজ্যের ইতিহাস

    ReplyDelete

Post a Comment

Previous Post Next Post