ইমাম আবু হানিফা (তাকওয়া ও আল্লাহ ভীতির অনন্য দৃষ্টান্ত)

ইমাম আবু হানিফা (তাকওয়া ও আল্লাহ ভীতির অনন্য দৃষ্টান্ত) 


প্রখ্যাত হাদিসশাস্ত্রবিদ ইয়াহইয়া ইবনু সাইদ আল-কাত্তান রাহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা ইমাম আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহর মজলিসে বসতাম। তার কথা শুনতাম। আমি যখনই তার দিকে তাকাতাম, আল্লাহর শপথ! তার চেহারায় আমি তাকওয়া ও আল্লাহভীতি প্রত্যক্ষ করতাম।

বিখ্যাত মনীষী আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক রাহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত,  তিনি বলেন,

আমি যখন প্রথম কুফায় আগমন করি, তখন লােকদের জিজ্ঞেস করি, এখানকার সবচেয়ে বড় ফকিহ কে? তারা উত্তর দেয়, 'আবু হানিফা। এরপর আমি জিজ্ঞেস করি, সবচেয়ে বড় দুনিয়াবিমুখ ও আত্মত্যাগী কে? তারা বলে, 'আবু হানিফা। আমি আবার জিজ্ঞেস করি, সবচেয়ে বড় পরহেজগার কে? তারা এবারও বলে, আবু হানিফা।

মাসউদ ইবনু শাইবা বর্ণনা করেন, 'হাসান ইবনু সালিহ বলেন, ইমাম আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহ ছিলেন অত্যন্ত পরহেজগার । সর্বদা সর্বক্ষেত্রে হারামের বিরােধিতা করতেন। সন্দেহযুক্ত হালাল বস্তু থেকেও বেঁচে থাকতেন। ফকিহদের মাঝে ব্যক্তিগত ও ইলম-সংক্রান্ত বিষয়ে আমি তারচেয়ে সতর্ক আর কাউকে দেখিনি। তার যাবতীয় প্রস্তুতি ছিল কবর ও আখিরাতমুখী!"

ইমাম আবু হানিফা (তাকওয়া ও আল্লাহ ভীতির অনন্য দৃষ্টান্ত)
ইমাম আবু হানিফা (তাকওয়া ও আল্লাহ ভীতির অনন্য দৃষ্টান্ত)

মাসউদ ইবনু শাইবা আরাে বর্ণনা করেন, 'আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক রাহিমাহ্ল্লাহ বলেন, ইতিহাস এমন মানুষের সন্ধান আমাদের খুব একটা দিতে পারে না, যার সামনে সমগ্র দুনিয়া পেশ করা হয়েছে, আর সে সম্পূর্ণ ঘৃণাভরে তা প্রত্যাখ্যান করেছে! অথচ ইমাম আবু হানিফা ছিলেন এমন এক ব্যক্তি, যাকে প্রধান বিচারপতির পদ ও সরকারি মর্যাদা গ্রহণ করার জন্য চাবুক মারা হয়েছে! পার্থিব পদ-মর্যাদা গ্রহণের জন্য প্রচণ্ড চাপ প্রয়ােগ করা হয়েছে। তিনি হাসিমুখে সবধরনের শাস্তি ও নির্যাতন মাথা পেতে নিয়েছেন। তবুও এসব গ্রহণ করতে রাজি হননি!

বাহ্যত অনেকেই নিজেদের সুফি-সাধক বলে দাবি করে; কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে লােভনীয় প্রস্তাব এলে, নিজেকে সংবরণ করতে পারে না। মানুষ দুনিয়ার পেছনে ঘােরে। দুনিয়া তাদের পাত্তা দেয় না। অথচ ইমাম আবু হানিফার পেছনে দুনিয়া ঘুরত; কিন্তু তিনি দুনিয়ার দিকে ফিরেও তাকাতেন না!

একই সূত্রে ইমাম মুহাম্মাদ রাহিমাহ্ল্লাহ থেকে বর্ণিত, 'তিনি বলেন, ইমাম আবু হানিফা রাহিমাহল্লাহ ছিলেন পাহাড়ের চেয়েও অটল। ইলম, উদারতা, সহমর্মিতা ও পরহেজগারির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।' 

মুওয়াফফাক আল-মাককি বর্ণনা করেন, 'আব্দুল্লাহ ইবনু আহমাদ ইবনু হাম্বল রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল রাহিমাহুল্লাহর নিকট ইমাম আবু হানিফার কথা আলােচনা করা হলে তিনি বলেন, আল্লাহ তার প্রতি রহম করুন! মানুষের হক আদায়ে তিনি ছিলেন বদ্ধপরিকর। প্রধান বিচারপতির পদ গ্রহণের জন্য তাকে ১০০টি বেত্রাঘাত করা হয়েছিল; তবু তিনি অবিচার ও সরকারি তােষামােদে লিপ্ত হবার ভয়ে এই পদ গ্রহণে সম্মত হননি!

এই ছিল আমাদের আকাবীরদের জীবন গাঁথা। তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমরা যেন নিজেদের জীবনকে সাজাই৷ আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তাদের বীরত্ব ও আত্মত্যাগের কাহিনী পৌছুতে হবে আমাদেরই৷ 

أحدث أقدم