কেমন হবে আপনার দোয়া?

দুআ/মুনাজাতের আদব ও আমল সমূহঃ

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আমার কাছে দোয়া করো। আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব’ (সূরা আল মু'মিন, আয়াত ৬০।) আরবি দোয়া শব্দের অর্থ ডাকা, আহ্বান করা, প্রার্থনা করা, কোনো কিছু চাওয়া ইত্যাদি। দোয়ার মাধ্যমে বান্দা নিজেকে আল্লাহর কাছে খুব সহজেই সমর্পণ করতে পারে। দোয়া মুমিনদের হাতিয়ার। দোয়ার মাধ্যমে অসম্ভবকেও সম্ভব করা যায়। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘দোয়া ছাড়া আর কিছুই আল্লাহর সিদ্ধান্তকে বদলাতে পারে না।’ (তিরমিজি, হাদিস নম্বর ২১৩৯।) দোয়া সব ইবাদতের মূল। দোয়ার তাৎপর্য সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘সর্বোত্তম ইবাদত হল দোয়া।’( মুসতাদরাক আল হাকেম, হাদিস নম্বর ১৭৬০।) অন্য হাদিসে এ সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে দোয়ার চেয়ে বেশি মর্যাদাময় আর কোনো আমল নেই।’ (তিরমিজি, হাদিস নম্বর ৩৩৭০।)


দূআ কবুল হওয়ার জন্য সর্বক্ষণ যা যা করণীয়ঃ


১. খাদ্য, পানীয়, পােশাক-পরিচ্ছদ ও আয়-উপার্জন হালাল হওয়া।
২. মাতা-পিতার নাফরমানী থেকে বিরত থাকা।
৩. আমুর বিল মারফ ও নাহি আনিল মুনকার করা তথা ভাল কাজের আদেশ করা ও মন্দ কাজ থেকে বারণ করা ।
৪. আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন না করা।
৫. কোন মুসলমানের সাথে অন্যায়ভাবে তিন দিনের বেশী কথা বন্ধ না রাখা।
৬. গীবত না করা। গীবতকারী ব্যক্তির দুআ কবুল হয় না।
৭. হাছাদ বা হিংসা না করা। হিংসুকের দুআ কবুল হয় না।
৮. বখীলী বা কৃপণতা না করা। কৃপণ ব্যক্তির দুয়া কবুল হয় না।
৯. দুআ কবূল হওয়ার জন্য তাড়াহুড়া না করা।
১০. হৃদয় মরে গেলে দুআ কবুল হয় না। উল্লেখ্য-যিকির না করলে, বেশী হাসলে, বেশী কথা বললে হৃদয় মরে যায়।


(খ) দুআর সময় বসার আদবঃ


১. কেবলামুখী হয়ে বসা।

২. হাঁটু গেড়ে বসা।

৩. আদব, তাওয়ায়ু ও বিনয়ের সাথে বসা।

৪. পাক-সাফ হয়ে কসা।

৫. উযু সহকারে বসা।

৬. দুআর সময় আসমানের দিকে নজর না উঠানাে।


(গ) দুআর সময় হাত উঠানাের নিয়মাবলীঃ


১. সীনা বা কাধ বরাবর হাত উঠানাে।

২, উভয় হাতের তালু আসমানের দিকে রাখা মােস্তাহাব।

৩. উডয় হাতের আঙ্গুলসমূহ কেবলামুখী রাখা মােস্তাহাব।

৪. উভয় হাতের মাঝখানে সামান্য পরিমাণ ফাক রাখা মােস্তাহাব। 

৫. উভয় হাতের আঙগুলসমূহ মিলিয়ে নয় বরং সামান্য ফাক রাখা মােস্তাহাব।

৬. দুআা শেষ পূর্বক বরকতের জন্য মুখে হাত বুলিয়ে নেয়া।


দোয়া একটি ইবাদত
দোয়া একটি এবাদত


(খ) দুআ শুরু এবং শেষ করার বাক্যসমূহঃ

১. দুআর শুরু এবং শেষে আল্লাহর হামদ ও ছনা (প্রশংসা) বয়ান করা।

২. দুআর শুরু এবং শেষে পুরূদ ও সালমি পড়া। বিঃ দ্রঃ এ দুটি আমলের জন্য নিম্নোক্ত বাক্য দিয়ে দুআ শুরু করা যায় 

الخمه ل له رب العلمين والصلاة والسلام على المر سلين ۔

এবং শেষে নিমাোক্ত বাক্য বলা যায়-

مبخان ربك رب العرة عما بصفون وسلام على المرسلينو الحمد له رب العلمن -

৩, 'আমীন' বলে দুআ শেষ করা।


 দুআর সময় মনের অবস্থা যে রকম রাখতে হয়ঃ


১. এখলাসের সাথে খালেস মনে দুআ করা অর্থাৎ, আল্লাহ ব্যতীত কেউ তার উদ্দেশ্য পূর্ণ করতে পারে না- এই মনােভাব বদ্ধমূল রাখা।

২, স্বার্থহীন মনােভাব নিয়ে দুআ করা।

৩. আগ্রহ এবং অনুপ্রাণিত মনে দুআ করা।

৪. যথাসম্ভব মনােযােগ সহকারে দুআ করা।

৫. নাছােড় মনােভাব নিয়ে দুআ করা।

৬. দুআ কবুল হওয়ার দৃঢ় আশা রাখা।


(চ) চাওয়ার আদবসমূহঃ


১. আল্লাহর আছমায়ে হুছনা (উত্তম নাম) ও মহান গুণাবলী উল্লেখ পুর্বক চাইতে হয়।

২. প্রথমে নিজের জন্য, তারপর মাতা-পিতা ও অন্যান্য মুসলমান ভাইদের জন্য চাওয়া। ইমাম হলে জামাআতের সকলের জন্য চাইবেন।

৩. বারবার চাওয়া; অন্ততঃ তিনবার। একই মজলিসে তিনবার বা তিন মঞ্জলিসে তিনবার। তবে তিনবার চাওয়ার এই নিয়ম একাকী দুআ করার ক্ষেত্রে প্রযােজ্য।

৪ নিম্নস্বরে চাওয়া। তবে মজলিসের লােকদেরকে শােনানাের প্রয়ােজনে জোর আওয়াজে দুআ করা যায়। কিন্তু যদি কোন নামাযী ব্যক্তির নামাযে ব্যাঘাত ঘটে, তাহলে তখন জোর আওয়াজে দুআ করা নিষিদ্ধ।

৫. কোন নেক কাজের উল্লেখ পূর্বক দুআ কবৃল হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে আবেদন প্রার্থনা করা।

৬. আম্বিয়ায়ে কেরাম এবং অন্যান্য নেককার ও বুযুর্গদের ওছীলায় দুআ কবুল হওয়ার প্রার্থনা করা।


(হ) দু'আর বিষয়বস্তু বিষয়ক আদবসমূহঃ


১, আখেরাত ও দুনিয়া উভয় জগতের প্রয়ােজন সমূহকে অন্তর্ভুক্ত করে দুআ করা।

২. কোন পাপের বিষয় না চাওয়া।

৩. এমন বিষয় প্রার্থনা না করা, যার সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে; (যেমন নারী দুআ করবে না যেন সে পুরুষ হয়ে যায়, কিংবা বেটে মানুষ লম্বা হওয়ার বা কাল মানুষ ফর্সা হওয়ার দুআ করবে না, ইত্যাদি।)

৪. কেন অসম্ভব বিষয়ের দুআ না করা।

৫. নিজের মুখাপেক্ষিতা, প্রয়ােজন ও অক্ষমতার বিষয় উল্লেখ করা।


(জ) দুআর ভাষা বিষয়ক আদবসমূহঃ


১. হযরত রাসূল (সাঃ) থেকে বর্ণিত বা কুরআনে বর্ণিত ভাষায় দুআ করা।

২. কথার ছন্দ মিলানাের জন্য কসরত না করা।

৩. কবিতার মাধামে দুআ করলে গানের ভঙ্গি থেকে বিরত থাকা।


তথ্যসূত্রঃ
আহকামে জিন্দেগী/মাওলানা মুহাম্মদ হেমায়েদ উদ্দিন/দোয়ার আবদসমুহ/ ১৮৮-১৮৯
Previous Post Next Post