নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন উম্মতে ইসলামিয়া বরং সমগ্র মানব জাতির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা। তাঁর শারীরিক সৌন্দর্য, মানসিক পূর্ণতা, প্রশংসনীয় চরিত্র, চমৎকার ব্যক্তিত্ব, পরিশীলিত অভ্যাস ও কর্মতৎপরতা দেখে আপনা থেকেই তাঁকে ভালাবাসার ইচ্ছা জাগতাে। তাঁর জন্যে মন উজাড় করে দিতে ইচ্ছা হতাে। মানুষ যেমন গুণ বৈশিষ্ট মনে প্রাণে পছন্দ করে, সেসব তার মধ্যে এতাে বেশী ছিলাে যে, এতােগুলাে গুণবৈশিষ্ট্য একত্রে অন্য কাউকেই দেয়া হয়নি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মর্যাদা, শ্রেষ্ঠত্ব, আভিজাত্য, ও চারিত্রিক সৌন্দর্যে সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ক্ষমাশীলতা, আমানতদারি, সততা সত্যবাদিতা, সহিষ্ণুতা ইত্যাদি গুণ এতাে বেশী ছিলাে যে, তাঁর স্বাতন্ত্র্য ও শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে শত্রুরাও কখনাে সন্দেহ পােষণ করেনি। তিনি যে কথা মুখে একবার উচ্চারণ করতেন তাঁর শত্রুরাও জানতাে যে, সে কথা সত্য এবং তা বাস্তবায়িত হবেই হবে। বিভিন্ন ঘটনা থেকে একথার প্রমাণও পাওয়া যায়। তাঁর সঙ্গী এবং সাহাবাদের অবস্থাতাে এমন ছিলাে যে, তারা মনে প্রাণে প্রিয় নবীর প্রতি নিবেদিত ছিলেন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি সাহাবাদের ভালােবাসা এতাে তীব্র ছিলাে যেন তা পাহাড়ী ঝর্ণার পানির ধারা। লােহা যেমন চুম্বকের প্রতি আকৃষ্ট হয়, সাহাবারাও তেমনি আল্লাহর রসূল (স.)-এর প্রতি আকৃষ্ট হতেন।
কবি বলেন, 'তাঁর চোহারা সব মানব দেহের জন্যে অস্তিত্ব স্বরূপ, তাঁর অস্তিত্ব ছিলাে প্রতিটি অন্তরের জন্যে চুম্বকের মতাে।
![]() |
প্রতীকী চিত্রঃ কোরআনুল কারীম |
সাহবায়ে কেরাম ভালােভাবেই জানতেন যে, মাটির মানুষের ওপর যেসব দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, সে দায়িত্ব যতাে কঠিনই হােক না কেন, উপেক্ষা করার কোন উপায় নেই। কেননা সে দায়িত্ব উপেক্ষার পরিণাম হবে আরাে বেশী ভয়াবহ। এতে সমগ্র মানব জাতি ক্ষতির সম্মুখীন হবে। সেই ক্ষতির তুলনায় এ যুলুম অত্যাচার বিপদ মুসিবতের কোন গুরুত্বই নেই।
এ ধরনের প্রেরণা বাহ্যিক কোন আকর্ষণের কারণে ছিলাে না। সময়ের স্রোতধারায় এ ভালােবাসার প্রেরণা মুছে যাওয়ার সম্ভাবনাও ছিলাে না। বরং এ ভালােবাসার মূলে ছিলাে আল্লাহর প্রতি ঈমান, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ঈমান ও আল্লাহর কোরআনের প্রতি ঈমান। এই ঈমান কোন প্রকার যুলুম নির্যাতন অত্যাচার ও শক্তির সামনে দুর্বল ও নষ্ট হওয়ার কোন সম্ভাবনা ছিলাে না। সাহাবায়ে কেরাম (রাদিঃ)-দের এই ঈমান বা অদৃশ্য বিশ্বাসের দৃঢ়তার পরিচয় আমলের মাধ্যমে পাওয়া যায়। এই ঈমানের কারণেই মুসলমানরা পৃথিবীতে বিশ্ময়কর কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছিলাে। সেই কৃতিত্বের উদাহরণ অতীতের পৃথিবীতে যেমন পাওয়া যায়নি, ভবিষ্যতের পৃথিবীতেও পাওয়ার তেমনি কোনো সম্ভাবনা নেই।
তথ্যসূত্রঃ আর রাহেকুল মাখতুম